ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বাপেক্ষা নাজুক অবস্থায় শিল্প নগরী খুলনা। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় এ অঞ্চলের পরিবেশ বিপর্যয়সহ জলাবদ্ধতা, পানি নিষ্কাশন সমস্যা ও সুপেয় পানি সরবরাহ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবেলা করে খুলনাকে বসবাস উপযোগী সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বুধবার (১০ অক্টোবর) সকালে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে ‘‘ওয়াটার এ্যাজ লিভারেজ ফর (রিজিলিয়েন্ট সিটিস) খুলনা’’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হওয়ায় উদ্বুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও প্রধানমন্ত্রীর আহবানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
সেমিনারের আয়োজন করেন, গভর্ণমেন্ট অব দি নেদারল্যান্ডস । বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডস পানিকে মূল প্রতিপাদ্য বিবেচনা করে নগরীর সামগ্রিক উন্নয়নে কার্যকর প্রকল্প উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চিহ্নিত করে এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় নেদারল্যান্ডস সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান খুলনা সিটি মেয়র ।
সিটি মেয়র আরো বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খুলনা মহানগরী ও সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ যেভাবে বিপর্যস্ত হতে চলেছে তা আমাদের সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে আমাদের কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির চাপ উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নে নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকান্ড জোরদার করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাই পানি সম্পদ অবলম্বনে আমাদের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার ওপর অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে। এই কর্মশালার মাধ্যমে বিদ্যমান পানি সম্পদ কেন্দ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অন্বেষন তৎপরতা সাফল্য লাভ করবে বলে সিটি মেয়র মনে করেন। তিনি সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ভৈরব ও রূপসা নদী ড্রেজিং ও অভ্যন্তরীণ খাল খননের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) পলাশ কান্তি বালা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, নেদারল্যান্ড রাজতন্ত্রের আন্তর্জাতিক পানি সম্পদ বিষয়ক বিশেষ দূত হেন্ক অভিন্ক, খুলনা ওয়াসার উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন আহমেদ ও খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান।
অন্যান্যের মধ্যে পরামর্শক সংস্থা সিডিআর ইন্টারন্যাশনাল লি. এর প্রতিনিধি হ্যারি ল্যাবোইরি, স্টিভেন টি স্লা, লরেন্স পোয়েলহেক, এ্যানি লোয়েস নিলেসেন, আলজিরা স্কেফ ও ওয়াইস বেফস, ঢাকাস্থ ডেভ কনসালট্যান্ট-এর পানি সম্পদ প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান ও পানি সরবরাহ বিশেষজ্ঞ মফিজ উদ্দিন আহমেদসহ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষজ্ঞগণ কর্মশালায় বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় কেসিসি’র কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, নাগরিক নেতৃবৃন্দ ও সংবাদকর্মীগণ অংশগ্রহণ করেন। বিষয় ভিত্তিক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন, কেসিসি’র চীফ প্লানিং অফিসার আবির উল জব্বার, বাংলাদেশ ডেল্টা প্লানের ডেপুটি টীম লিডার গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী ও নেদারল্যান্ড দূতাবাসের ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ পিটার ডি ভ্যারিস।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ইতোপূর্বে নগরীতে ছোট বড় অনেক পুকুর ও জলাশয় ছিল। প্রাকৃতিকভাবেই বিরাজমান ছিল অসংখ্য খাল ও নালা। কালক্রমে এ সব জলাধর ও খালগুলোর বহুলাংশ আমাদের অপরিনামদর্শী আচরণের কারণে বিলুপ্ত ও অকেজো হয়ে গেছে। নদÑনদীগুলো পলি সঞ্চাচলনের ফলে ভরাট হয়ে আসছে। অন্যদিকে বিশে^র তাপÑমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি তথা লোনা পানির অনুপ্রবেশ আমাদের এ অঞ্চলে এক দু:সহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এর থেকে রক্ষা পেতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ব্যাতিরেকে আমাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নাই।