Thursday 25th of April 2024
Home / অন্যান্য / পবিপ্রবি শিক্ষকের নগর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সম্ভাবনাময় নতুন মডেল

পবিপ্রবি শিক্ষকের নগর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সম্ভাবনাময় নতুন মডেল

Published at সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৮

ইফরান আল রাফি (পবিপ্রবি প্রতিনিধি): দৈনন্দিন ও শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিবেশ দূষণের কারণ হিসেবে বিবেচিত হলেও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীম মিয়া এর নেতৃত্বে একদল গবেষক পাইরোলাইসিস ও কো-কম্পোস্টিং পদ্ধতিতে নগর বর্জ্যকে জাতীয় সম্পদে রুপান্তরের এক সম্ভাবনাময় নতুন মডেল প্রস্তাব করেছেন। এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ আন্তজার্তিক প্রকাশনা সংস্থা ELSEVIER কর্তৃক Waste Management জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি ফিল্ড ল্যাবে মডেলটি বাস্তবায়নে গবেষণা চলমান রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, সারাদেশে জন প্রতি ২৩০ গ্রাম হিসেবে প্রতিদিন ১৫৫০৭ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয় আর ঢাকা নগরীতে জন প্রতি উৎপাদন হার ৫৬০ গ্রাম। নগর কর্তৃক্ষের ৫০ ভাগ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা থাকলেও বাকী অংশটুকু ফেলা হয় খোলা জলাশয়, ড্রেন এবং নদ-নদীতে যা পরিবেশ দূষণ ও নানা রোগে সংক্রামণ ঘটায়। উল্লেখিত বর্জ্যের সিংহভাগ (৭৬.৬৩ শতাংশ) জৈব বর্জ্য উক্ত মডেলের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদে রুপান্তর করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন গবেষক দলটি।

সম্ভাবনাময় এই মডেলের মাধ্যমে নগরের জৈব বর্জ্যকে বর্জ্যের ধরন ও সংগ্রহের অবস্থাভেদে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, এগুলো হল ১) কম্পোষ্ট উপযোগী বর্জ্য ২) পাইরোলাইসিস উপযোগী বর্জ্য ৩) পাইরোলাইসিস এর জন্য জ্বালানি। পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়োচার উৎপাদন করা হয় এবং এই উৎপাদিত বায়োচার কম্পোষ্টিং প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়। উল্লেখিত বায়োচার কম্পোষ্টিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত গাছের পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে নাইট্রোজেন ধরে রাখে, অন্যথায় তা বাতাসে উড়ে যায়।ফলে এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত কম্পোষ্টে সাধারন কম্পোষ্টের তুলনায় বেশী পুষ্টি উপাদান থাকে।

এই সম্পর্কে জানতে চাইলে গবেষক দলের প্রধান ড. শামীম মিয়া বলেন, “বাংলাদেশের মাটিতে জৈব পদার্থ সংরক্ষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কৃষি ফসলের সাথে মাটির পুষ্টি উপাদান শহরে চলে যায় যা আর ফিরে আসছেনা যার ফলে কৃষি জমির উৎপাদন ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। উক্ত পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করলে এ সকল পুষ্টি উপাদান কৃষি জমিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। উৎপাদিত জৈব সারটিতে অধিক পুষ্টি উপাদান বিশিষ্ট সহজে পঁচনশীল ও অপঁচনশীল (বায়োচার) পদার্থ থাকে ফলশ্রুতিতে এটি দীর্ঘদিন মাটির উর্বরতা ধরে রাখতে সাহয্যে করে।”

উক্ত মডেলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. শামীম আরো জানান, “মডেলটি বাস্তবায়নে গবেষণা চলমান রয়েছে এবং মাষ্টার্সের কয়েকজন শিক্ষার্থী এর উপর কাজ করছে। সর্বোপরি মডেলটির মান উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণে সরকারি সহযোগিতা এবং অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন”।

এই প্রক্রিয়ায় জৈব আর্বজনার ৪৬ শতাংশ কার্বন, ৫৪ শতাংশ নাইট্রোজেন ও ফসফরাস এবং ৬১ শতাংশ পটাশিয়াম কষি জমিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সাধারণ কম্পোষ্ট এর তুলনায় এই পদ্ধতিতে কম্পোষ্ট তৈরী করলে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্রীন হাউজ গ্যাস সমূহ হ্রাস পায় যথাক্রমে কার্বনডাইঅক্সাইড ২৫ শতাংশ, মিথেন ৭৫ শতাংশ, নাইট্রাস অক্সইড ৩৯ শতাংশ  এবং এমোনিয়া ৪১ শতাংশ। গবেষণায়  দেখা যায় ২৬ হাজার টন ইউরিয়া সমপরিমান নাইট্রোজেন  বর্জ্য থেকে কৃষি জমিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব এবং ১ টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ৪০০০ টাকা আয় করা সম্ভব যা বেকারত্ব নিরসনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে দাবী গবেষকদের।

গবেষক দলের অন্যন্যে সদস্যরা হলেন ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক, কৃষি সম্প্রসারণ ও গ্রামীন উন্নয়ন বিভাগ, পবিপ্রবি; অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদের, মৃওিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বাকৃবি; ড. আমিমুল আহসান, উওরা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. এম. এ মান্নান, বশেমুরকৃবি, মো. মন্জুরুল হোসাইন, খামার ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাকৃবি; ড. জাকারিয়া এম. সোলাইমান, ওয়েস্টান অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

This post has already been read 9341 times!