Saturday 20th of April 2024
Home / প্রাণিসম্পদ / গাভীর প্রসবকালীন যত্ন

গাভীর প্রসবকালীন যত্ন

Published at আগস্ট ২, ২০১৮

নাহিদ বিন রফিক : প্রজননের মাধ্যমে একটি গাভী নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চা প্রসব করে। এক্ষেত্রে গাভীর প্রতি অবহেলা কিংবা অসাবধানতার কারণে কখনো কখনো বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। এতে বাছুর, এমনকি গাভীর মৃত্যুও হতে পারে। তাই গাভী ও বাছুরের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ওই মুহূর্তে বিশেষ যতেœর প্রয়োজন। গাভীর বাচ্চা প্রসব হবে তখনই; যখন ওলান বড় হবে, যোনিমুখ বেশ প্রশস্ত হয়ে ঝুলে পড়বে। সে সাথে নরম ও ফোলাভাব দেখাবে। এক ধরনের আঠালো পদার্থ বের হবে। গাভী বারবার ওঠাবসা করবে। এমন সময় গাভীর যোনিমুখে বাছুরের সামনের দু’পা দেখা যাবে। এ অবস্থায় খুবই সতর্কতার সাথে বাছুরকে আস্তে আস্তে বের করে আনতে হয়। এবার জেনে নেয়া যাক- কীভাবে গাভী এবং বাছুরের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে, সেসব কথা।

যে স্থানে বাচ্চা প্রসব করানো হবে সেটি খোলামেলা এবং নিরিবিলি এমন জায়গায় হওয়া চাই যেন, অন্য কোনো লোকের চোখ সহজেই না পড়ে। স্থানটিতে শুকনো খড়ের নরম বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা হতে হবে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত। প্রসবের সময় বিকট শব্দ কিংবা কোনো প্রাণির চিৎকার দ্বারা পরিবেশকে অশান্ত করা  যাবে না। জরায়ুতে বাছুরের সামনের দু’পা এবং মাথার অবস্থান যদি সম্মুখভাগে না হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি অস্বাভাবিক প্রসব। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ভেটেরিনারি সার্জনের সাহায্য নিতে হবে। প্রসব অবস্থায় গাভী বারবার ওঠানামা করে। এ সময় খুব সাবধানে বাছুরকে ধরে আস্তে  আস্তে টেনে বের করতে হয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাছুরকে পাটের চটের ওপর রেখে নাক-মুখের শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে দিতে  হবে। যদি শ্লেষ্মা বের  না  হয় তাহলে বাছুরের  পেছনের  দু’পা  ধরে  উপরের দিকে উঁচু করলেই তা বেরিয়ে আসবে। তবে বাছুরকে ওর মায়ের সামনে দিলেই সবচে’ ভালো হয়। এতে গাভী তার বাচ্চার নাক-মুখসহ শরীরের অন্যান্য অংশ চেটে পরিষ্কার করে দেবে। বাছুরের নাভি ঝরে না পড়লে অথবা লম্বা হলে দু’ইঞ্চি রেখে বাকি অংশ ধারালো  ছুরি বা ব্লেড দিয়ে কেটে সেস্থানে ডেটল বা সেভলন লাগাতে হবে। নয়তো নাভির মাধ্যমে রোগজীবাণু সংক্রমিত হয়ে ধনুষ্টংকার কিংবা নাভিফোলা হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

প্রসবের পরপরই একটি বালতিতে কুসুমগরম পানির সাথে দেড় কেজি পরিমাণ গমের ভুসি, আধা কেজি চিটাগুড়, আধা কেজি  ভাতের মাড় এবং ৫০ গ্রাম লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে গাভীকে খেতে দিতে হবে। এ জাতীয় খাদ্য খাওয়ালে গাভীর গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে যেতে সহায়তা করবে। এছাড়া  কুসুমগরম পানিতে ঝোলাগুড় মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। প্রসবের পর  জীবাণুনাশক ওষুধ পানিতে  মিশিয়ে গাভীর পেছনের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। গাভীর ফুলপড়া নিয়ে অনেক সময় সমস্যার  সৃষ্টি হয়। যদি ২৪ ঘণ্টার  মধ্যে ফুল না পড়ে তাহলে অভিজ্ঞ প্রাণিচিকিৎসকের  সাহায্য নিতে হবে। কারণ, যথাসময়ে না পড়লে তা পচে জরায়ুতে পুঁজ জমতে  পারে। ফুল  পড়ে গেলে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। গাভীর ওলানে বেশি পরিমাণে দুধ থাকলে বার বার দোহন করতে হয়। তা না হলে ওলানপাকা রোগ হওয়ার আশংকা থাকবে।

ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাছুরকে প্রথমেই গাভীর গাঢ় লালচে বর্ণের শাল দুধ খাওয়াতে হবে। এ ধরনের দুধকে কাঁচলা দুধও বলে। এ দুধ না খাওয়ালে ওলান শক্ত হয়ে প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুধ খাওয়ানোর  আগে অবশ্যই দুধের বাঁটসহ ওলান এবং গাভীর তলপেট কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা বাঞ্ছনীয়। লালচে রঙের এ দুধ অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং রোগ প্রতিরোধক। সাধারণ দুধের চেয়ে ৩৫ গুণ আমিষ থাকে। ক্যারোটিন আছে ৫-১০ গুণ। সে সাথে অন্যান্য ভিটামিনের পরিমাণও বেশি। বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন- আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। শাল দুধ বাছুরের পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে। ফলে স্বাভাবিক মলত্যাগে সুবিধা হয়।

কথায় আছে, যত্নেই রত্ন। তবে তা সময়মতো হওয়া চাই। প্রসবকালীন বিশেষ যত্নের মাধ্যমেই হতে পারে গাভীর কাক্সিক্ষত উৎপাদন, সে সাথে সুস্থ-সবল বাছুর। এ বিষয়ে নিজে সচেতন হতে হবে। অপরকেও করতে হবে উৎসাহিত।

লেখক: টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বরিশাল।

This post has already been read 2973 times!