Tuesday 19th of March 2024
Home / পোলট্রি / পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে দেশের পোলট্রি খামারিরা

পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে দেশের পোলট্রি খামারিরা

Published at জুলাই ৫, ২০১৮

এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক : চলতি বছরের শুরু থেকে ডিম ও মুরগির মাংসের দাম কমে যাওয়ায় এবং একই সাথে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বরিশালে অনেক পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এটি পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে এবং জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বরিশালে অনুষ্ঠিত ‘পোল্ট্রি রিপোর্টিং’ বিষয়ক মিডিয়া কর্মশালায় এমন আশংকার কথা উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল’ (বিপিআইসিসি) এর সহযোগিতায় এ কর্মশালার আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা ওয়াচডগ বাংলাদেশ। জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক, টিভি চ্যানেল, বার্তা-সংস্থা এবং অন-লাইন নিউজপেপারের মোট ৩০ জন সাংবাদিক এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

কর্মশালা’র সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘সবার জন্য পুষ্টি’ নিশ্চিত করতে পোল্ট্রি একটি সহায়ক খাত। মানুষের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিশেষ নজর দিচ্ছে। তিনি বলেন- ডিম ও মাংসের উৎপাদন অবশ্যই বাড়াতে হবে। পোল্ট্রি এখন গ্রামীণ জনপদে কর্মসংস্থানের অন্যতম একটি খাত। পোল্ট্রিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে যুব সমাজ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নূরুল আলম বলেন- পুষ্টি নিরাপত্তার স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক ডিম ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফ.এ.ও) এর সহায়তায় বাবুগঞ্জ এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলায় মডেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় বরিশাল জেলায় পোল্ট্রি শিল্পের প্রসারে এখনও একটু পিছিয়ে। এখানে কোন ফিড মিল নেই। তাই বরিশালে পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে সরকার ও বেসকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি বলেন- বরিশাল জেলায় মোট ৫৫০টি লেয়ার খামার ও ১৫০৭টি ব্রয়লার খামার চালু আছে।

বিপিআইসিসি’র প্রতিনিধি সিরাজুল হক বলেন- কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করায় বিগত তিন বছরে পোল্ট্রি উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এক পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে পরিপাকযোগ্য আমিষের চাহিদা প্রায় ৩.৩৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এর মধ্যে পূরণ হয় মাত্র ২.২৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ঘাটতি প্রায় ১.১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। জনাব হক বলেন- বর্তমান সময়ে প্রাণিজ আমিষের একটি বড় উৎস্য হচ্ছে পোল্ট্রি। আগামীতে পোল্ট্রি’র প্রয়োজন আরও বাড়বে। তাই এ শিল্পটি সরকারের বিশেষ নজর দাবি রাখে। “আমরা এখন ফুড সেফটির বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছি। দেশে এখন মানসম্পন্ন নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদন হচ্ছে বলেই রফতানি জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা”।

দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, আগের তুলনায় জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে পোল্ট্রি রিপোর্টের সংখ্যা বেড়েছে। তবে গুণগত মান বাড়াতে হলে তথ্যের আদান-প্রদান আরও বাড়াতে হবে। আর সেজন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে। দি ইনডিপেন্ডেন্ট এর নির্বাহী সম্পাদক শামীম জাহেদী বলেন, পোল্ট্রি নিয়ে রিপোর্ট করার মত অসংখ্য বিষয় আছে। ইন-ডেপথ প্রতিবেদন সাধারণ পাঠক, দর্শক কিংবা নীতি-নির্ধারকদেরই শুধু নয় উদ্যোক্তাদেরও নতুন শিল্প স্থাপনে আগ্রহী করতে পারে।

বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক এস. এম জাকির হোসেন বলেন- পোল্ট্রি দ্রæত বিকাশমান এবং বিজ্ঞান-ভিত্তিক একটি শিল্প। ঢাকার বাইরের এবং বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ক তথ্যের অপ্রতুলতা রয়েছে। তথ্যের সম্ভাব্য উৎসগুলোও অজানা। কর্মশালার সমন্বয়কারি এবং সাংবাদিক সাইফুর রহমান মিরণ বলেন, ইন্টারনেটের কল্যাণে বিদেশের অনেক খবরা-খবর পাওয়া গেলেও দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প সম্পর্কিত তথ্য যৎসামান্যই। তাই এ বিষয়ে সহজবোধ্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা জরুরী।
ওয়াচডগ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ডিম ও মুরগি নিয়ে অনেক বিভ্রান্তিকর রিপোর্টিং হচ্ছে। সঠিক তথ্যের অভাবেই এমনটি হচ্ছে। সেজন্যই তথ্যের নিয়মিত আদান-প্রদান জরুরি। নকল ডিম, ভেজাল ফিড, এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার কিংবা ডিম ও মুরগির মাংসের মান নিয়ে সংবাদকর্মীদের মাঝে যে বিভ্রান্তি আছে তা বিপিআইসিসি আয়োজিত কর্মশালার কারণে দূর হচ্ছে।
কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন। তিনি বলেন- তিন দশকেরও কম সময়ে পোল্ট্রি শিল্প অভাবনীয় অগ্রগতি করেছে। জাতীয় অর্থনীতিতে এ শিল্পের অবদান ১.৫-১.৬ শতাংশ। প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ ডিম এবং প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদিত হচ্ছে। ড. আমিন বলেন- দেশ এগিয়ে চলেছে কিন্তু সে হারে বাড়ছে না ডিম ও মুরগির মাংসের কনজাম্পশন। এজন্য সরকারকে ডিম, দুধ, মাছ, মাংসের মত পুষ্টির আমিষের প্রচারণায় বিশেষ নজর দিতে হবে।

This post has already been read 9082 times!

One comment

  1. বাংলাদেশের আমিষ চাহিদা পুরন ও গরিব চাযিদের আয়ের পথ খুজতে গিয়ে,বাগেরহাটের শত শত পোল্ট্রি চাষিরা আজ দেনার দায়ে অসাধু কিছু ফিড কম্পানির হাতে মামলা খেয়ে ভিটা বাড়ী ছেরে পালিয়ে বেরাচ্ছে,অথবা কেউ খাচ্ছে জেলের ভাত।এই বিপদ থেকে আমাদের মত অসহায় চাষিরা কি ভাবে পরিত্যান পাবো ? চাষিদের পক্ষে,নিত্যানন্দ সাহা 01712450058