শনিবার , জুলাই ২৭ ২০২৪

বিষামৃত উলটচণ্ডাল

মৃত্যুঞ্জয় রায়: উলটচণ্ডালের ফুল জিম্বাবুয়ের জাতীয় ফুল। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৪৭ সনে যখন রোডেশিয়া বেড়াতে গিয়েছিলেন, তখন তাঁকে উলটচণ্ডাল ফুলের নকশায় একটি হীরার ব্রুস উপহার দেয়া হয়েছিল। এ ফুলটি ভারতের তামিলনাড়– রাজ্যেরও জাতীয় ফুল। উলটচণ্ডাল মূলত একটি জংলী গাছ। বনেজঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকে, চাষ তেমন করা হয় না। বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান বনজঙ্গল থেকেই গাছটি সংগ্রহ করে থাকে বা সেখান থেকে সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করা হয়। গাছটি এ দেশের এক বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ। বনজঙ্গল উজাড় ও ব্যাপক নগরায়নের ফলে গাছটি এখন বিপন্ন।

ভেষজ গুণ
সুপ্রাচীনকাল থেকে বহু জাতির বহু গোষ্ঠীর লোকেরা উলটচণ্ডাল গাছকে ওষুধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। অ্যালকালয়েড সমৃদ্ধ হওয়ায় এ গাছ ওষুধি গুণসম্পন্ন ও বহু রোগের ওষুধ এ গাছ থেকে তৈরি করা হয়। বিশেষ করে মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব, কাটাক্ষত, সর্পদংশন, আলসার, বাত, কলেরা, কিডনি রোগ, টাইফয়েড, খোসপাঁচড়া, কুষ্ঠ, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্বপ্নদোষ, ব্রণ, ক্যানসার, যৌন অক্ষমতা, উঁকুন, কৃমি, গুটিবসন্ত, পেটেব্যথা ইত্যাদির চিকিৎসায় উলটচণ্ডাল গাছ ব্যবহৃত হয়। গর্ভপাত ঘটাতেও এ গাছের সাহায্য নেয়া হয়। ভারতে সাপের বিতাড়ক হিসেবে এ গাছ ব্যবহার করা হয়। তবে কোনো বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ ছাড়া উলটচণ্ডাল গাছের ওষুধ সেবন ঠিক হবে না। এ গাছ বেটে মলমের মতো করে সাপে কাটা স্থানে প্রলেপ দিলে তা এন্টিডট হিসেবে কাজ করে। মাথায় উঁকুন হলে গোসলের কিছুক্ষণ আগে উলটচণ্ডালের পাতার রস মাথায় ও চুলে মেখে রাখলে উঁকুন মরে যায়। গিঁটে বাতব্যথা হলে উলটচণ্ডাল পাতার রস তিল তেলের সাথে মিশিয়ে দিনে দুবার ব্যথা জায়গায় মালিশ করলে ব্যথা কমে যায়। উলটচণ্ডাল গাছের কন্দচূর্ণ মাথায় মাখলে নতুন চুল গজায় ও খুসকি দূর হয়।

বিষাক্ততা
নাইজেরিয়াতে ধনুকের তীরের ফলাকে বিষাক্ত করতে এ গাছের বিষ ব্যবহার করা হয়। তার মানে এ গাছের কিছু বিষাক্ত উপাদান বা বিষাক্ততা আছে। বিষাক্ত এ গাছ খেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে বা কেউ কাউকে মেরে ফেলতে পারে। এ গাছ খেয়ে কুকুর, বিড়াল, ঘোড়া, গাধা, গরু, ছাগল ইত্যাদি প্রাণিও মরতে পারে। এ গাছের প্রতিটি অংশই বিষাক্ত। বিশেষ করে কন্দ বেশি বিষাক্ত। এ গাছে উচ্চমাত্রার কলসিসিন আছে যা একটি বিষাক্ত অ্যালকালয়েড। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি এ গাছ খেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কিছু বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা যায়। ঘুমঘুম ভাব, বমি, গলাজ্বলা, পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা ও পানিশূন্যতা, হাইপারটেনশন, দম বন্ধ হয়ে আসা, কোমা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। পরিশেষে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। কখনো কখনো এ গাছের কন্দ সেবনে মাথা ও দেহের চুল পড়ে যায়, মাথা সম্পূর্ণ টাক হয়ে যায়। তাই মাত্রাতিরিক্ত সেবন ক্ষতিকর।

This post has already been read 2695 times!

Check Also

জিএমও নিয়ে প্রচলিত ধারণা ভুলের দাবী

নিজস্ব প্রতিবেদক: জিএমও নিয়ে প্রচলিত ধারণা ভুলের দাবী করেছেন একদল বিজ্ঞানী ও গবেষক। এ ব্যাপারে …