মঙ্গলবার , নভেম্বর ৫ ২০২৪

আদা গাছের বিভিন্ন রোগ ও ব্যবস্থাপনা

মৃত্যুঞ্জয় রায়

কন্দ পচা রোগ
আদার কন্দ পচা একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এটি আদার সবচেয়ে মারত্মক রোগ যা প্রায় আদা ক্ষেতেই হয়ে থাকে। একবার কোনো আদা পচতে শুরু করলে আক্রান্ত সেই কন্দ বা মোথা থেকে দ্রুত অন্য মোথা বা আদাতেও রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া এ রোগের জীবাণু মাটিতেও থাকতে পারে এবং বৃষ্টি বা সেচের পানি দ্বারা বাহিত হয়ে অন্য কোনো সুস্থ ক্ষেতের আদাকেও রোগগ্রস্ত করে। এমনকি আক্রান্ত গাছের মরা ডাঁটা ও পাতাতেও এ রোগের জীবাণু সক্রিয় অবস্থায় থেকে যায়। সেখান থেকেও রোগ ছড়ায়।

লক্ষণ
এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে গাছের কা- ও মাটির সংযোগস্থলে পানিভেজা দাগ দেখা যায় এবং ধীরে ধীরে সেখান থেকে পচতে শুরু করে। এতে আস্তে আস্তে উপরের পাতাসহ পুরো গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঢলে পড়ে। এরূপ লক্ষণযুক্ত আক্রান্ত গাছের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে দেখলে আদাতেও পচন দেখা যায়। তীব্র আক্রমণে পুরো আদাই পচে নষ্ট হয়ে যায়।

ব্যবস্থাপনা/নিয়ন্ত্রণ
– রোগমুক্ত গাছ ও জমি থেকে বীজ রাখতে হবে।
– রোপণের আগে বীজ আদা ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
– জমিতে যাতে পানি দাঁড়িয়ে বা জমে থাকতে না পারে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
– আক্রান্ত জমির গাছ ও মরা পাতা হাত দিয়ে তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং পরে ফসল তোলার পর সেগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে।
– রোগের আক্রমণ দেখা দিলে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক (ডায়থেন এম৪৫/রিডোমিল গোল্ড) ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছের গোড়া ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
– বেশি আক্রান্ত জমিতে পরের বছর আদা চাষ করা ঠিক হবে না।

পাতায় দাগ রোগ
পাতায় দাগ বা লিফ স্পট আদার একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগটিও প্রায়ই আদা গাছে দেখা যায়। এ রোগের জীবাণু রোগাক্রান্ত গাছের মরা ও শুকনা ডালপালার মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সজীব থাকে এবং পরের মৌসুমে লাগানো গাছে আক্রমণ করে। বৃষ্টি পেলে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

লক্ষণ
আদা গাছ এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে পাতায় পানিভেজা ছোট ছোট দাগ পড়ে। দাগগুলো পরে সাদা রঙ ধারণ করে, দাগের কিনারা থাকে বাদামি ও দাগের চারপাশে হলুদ বলয় সৃষ্টি হয়। একটি পাতায় অসংখ্য দাগ পড়ে। রোগ বেশি হলে দাগগুলো বড় হতে থাকে এবং কয়েকটা দাগ এক সাথে মিলে আরো বড় দাগের সৃষ্টি করে। আক্রান্ত পাতা পরে শুকিয়ে যায়।

ব্যবস্থাপনা
– রোগমুক্ত গাছ ও জমি থেকে বীজ রাখতে হবে।
– রোপণের আগে বীজ আদা ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
– জমি সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
– বেশি আক্রান্ত পাতা হাত দিয়ে তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
– রোগের আক্রমণ দেখা দিলে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক (ডায়থেন এম৪৫/রিডোমিল গোল্ড) ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে বা ০.১% বোর্দো মিশ্রণ (তুঁতে+চুন+পানি) ১৫ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছের গোড়া ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
– বেশি আক্রান্ত জমিতে পরের বছর আদা চাষ করা ঠিক হবে না। দু’ এক বছর অন্য ফসল চাষ করতে হবে।

ঢলে পড়া রোগ
এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। আদা গাছে মাঝে মাঝে এ রোগ দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে আদা গাছ হঠাৎ ঢলে বা ঝিমিয়ে পড়ে। এজন্য চাষিরা এ লক্ষণকে অনেক সময় ঝিমানো রোগও বলে থাকেন। এ রোগের জীবাণুও আদা গাছের আক্রান্ত অংশে সুপ্ত অবস্থায় প্রায় দেড় বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। এ রোগটি শুধু আদা গাছেই নয়, অন্য আরো অনেক গাছে আক্রমণ করে। বিশেষ করে আলু, টমেটো, বেগুন, মরিচ, শসা ইত্যাদি গাছেও এ রোগ হয়। তাই এসব গাছও এ রোগজীবাণুর বিকল্প পোষক হিসেবে কাজ করে।

লক্ষণ
এ রোগের অন্যতম লক্ষণ হলো আক্রান্ত গাছ হঠাৎ ঢলে পড়া। তবে ঢলে পড়ার আগে আদা গাছের কা- ও মাটির সংযোগস্থলে কা-ে পানিভেজা দাগ পড়ে। দাগগুলো ধীরে ধীরে উপরের দিকে বাড়তে থাকে। পরে নিচের দিকের পাতা হলদে হওয়া শুরু করে ও পরে উপরের পাতাও হলুদ হয়ে যায়। আক্রান্ত পাতার কিনারা কুঁচকে যায় ও গাছ নেতিয়ে পড়ে। আক্রান্ত গাছের কান্ড চিরলে তার ভেতরে কালো দাগ দেখা যায়।

ব্যবস্থাপনা
– রোগমুক্ত গাছ ও জমি থেকে বীজ রাখতে হবে।
– আক্রান্ত জমির গাছ গোড়ার মাটিসহ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
– আক্রান্ত জমিতে পরের বছর আদা চাষ করা ঠিক হবে না। করলেও জমির মাটি শোধন করে নেয়া উচিত হবে। ০.২% কপার অক্সিক্লোরাইড দিয়ে জমির মাটি শোধন করা যেতে পারে। এ ছাড়া জমিতে কাঠের গুঁড় ৫-৭ সেন্টিমিটার পুরু করে বিছিয়ে তাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়েও জমির উপরের স্তরের মাটির ব্যাকটেরিয়া জীবাণু তাপে নষ্ট করা যেতে পারে। পোড়ানোর পর ছাই জমি চাষের সময় মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।

This post has already been read 7408 times!

Check Also

বছরব্যাপী ফলন ও লাভ মিলবে যে জাতের লেবু চাষে!

নাজমুন নাহার: ভিটামিন-সি বা আ্যসকরবিক এসিড শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভিটামিন-সি মানবদেহে উৎপন্ন হয়না । …