Thursday 25th of April 2024
Home / ট্যুরিজম / ছোট্ট শিশু আহনাফের দৃষ্টিতে সুন্দরবন ভ্রমণ

ছোট্ট শিশু আহনাফের দৃষ্টিতে সুন্দরবন ভ্রমণ

Published at ডিসেম্বর ১, ২০১৭

[শিক্ষা এমন একটি বিষয় যা চলমান। পাঠ্য পুস্তকের বাইরেও একটি শিক্ষার নাম ভ্রমণ। এগ্রিনিউজ২৪.কম ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য যে কারণে ট্যুরিজম বিভাগ চালু করেছে শুরু থেকেই। আমরা বিশ্বাস করি এদেশের ট্যুরিজম আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে কৃষি ট্যুরিজমের দিকে অগ্রসর হবে। ট্যুরিজম বা পর্যটনকে আমরা আরো বেশি উৎসাহিত করতে চাই। তাই ছোট্ট শিশু মোহাম্মদ আহনাফ হাসান এর লেখাটি প্রকাশ করা হলো।  – বি.স.]

আমার নাম মোহাম্মদ আহনাফ হাসান। শিমুল মেমোরিয়াল স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। ছোট ভাই মোহাম্মদ আরশাদ হাসান এইক স্কুলে নার্সারি শ্রেণীতে পড়ে। বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী, দর্শনীয় স্থানগুলোতে পদচারন করার মাঝে কেমন একটি ভালোলাগা মিশে থাকে। আমার বাবা ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম (আরিফ) ডেপুটি চীফ ভেটেরিনারি সার্জন, ভেটেরিনারি এন্ড সায়েন্সেস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও মাহবুবা হাসনিন এর সাথে বেড়াতে যাব।

অপেক্ষা পালা শেষ গন্তব্য সুন্দরবন। বাবা মা ও ছোই ভাইয়ের সাথে রওয়ানা হলাম রাজশাহী শিরোইল স্টেশনের দিকে। স্টেশনে নামতেই দেখা হলো বাবার এক সহকর্মী প্রফেসর ড. শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ চাচ্চুর সাথে। তিনি মিসেস রউফ, ছেলে রাইয়ান এবং মেয়ে রাইসা কে নিয়ে আমাদের সাথেই সুন্দরবনে যাবেন। আনন্দ আরও বেড়ে গেল। আমাদের ট্রেনটি নাম কপোতাক্ষ, সেটা দুপুর দুইটাই ছাড়ল। তবে ট্রেনে বসতেই কেন শীতল বাতাস আমার জাদুর পরশ বুলিয়ে দিল জানিনা।

দুই ঘন্টা পর জেগে দেখি আমরা ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে। যদিও ডাল, ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র সহ নানা কারণেই ঈশ্বরদী স্থানটা বিখ্যাত তবুও এটি কোন জেলা নয়। পাবনায় অবস্থিত একটি জায়গার নাম এটি। এই স্টেশনে গনি মিয়ার বিখ্যাত ঘটি গরম পাওয়া যায়। নাম শুনে হয়তো মনে হচ্ছে গরম ঘটি আবার কি? এটা অসলে মজাদার সুস্বাদু ঝালমুড়ি, যা গণিমিযা ঘটিতে গরম করে গরম গরম পরিবেশন করে। মুচমুচে ঘটি গরম আহ্ মনে পড়লেই খেতে ইচ্ছে হয়।

আমরা হার্ডিঞ্জ ব্রীজ দেখলাম। এছাড়া অনেকগুলো স্টেশন পার করলাম। যাত্রাপথে ছোট ভাই আরশাদ এবং বাবার সহকর্মী পরিবারের সাথে অনেক আনন্দ গান-গল্প তো লেগেই ছিল। সাথে মায়ে হাতের যাদুর ছোঁয়ার তৈরী খাবারগুলো ও আমাদের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করেছিল। আসলে আম্মু আমাদের অনেক খেয়াল রাখেন। যাত্রাপথে বার বার আমাদের দিকে বিশেষ নজর রেখেছেন বাবা মা দুজনেই। একসময় আমরা যশোর পৌঁছে গেলাম। যেটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা হিসেবে পরিচিতি। সেখানে বাবার এক বন্ধু ডা: মো: আতিয়ার রহমান, মিসেস রহমান এবং মেয়ে লামিয়া কে নিয়ে আমাদের সাথে যোগ দেন। যাত্রা মোটামুটি শেষের পথেই। আতিয়ার চাচ্চু লঞ্চে গ্রুপের অফিসে দেখা করেন।

এরপর রোটানিয়ান ডা. মো. সৈয়দ আবু সাঈদ চাচ্চু গাড়িতে নিয়ে গেলেন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। পেট পুরে ভোজন শেষ করে লঞ্চের দিকে আসলাম আমরা। ভাগ্যিস এখন ছবি তুলতে টাকা খরচ হয় না। সেই কারনে আমরা লঞ্চের সামনে ফটোসেশনে কোন কার্পন্য করি নি। লঞ্চ ঘাটে গিয়ে ১১৪ নম্বর রুমে রাত্রি যাপন করলাম। রাত ১২ টাক থেকে সকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতীহীন ঘুম দিলাম। সকাল ৭টার ছাদে গিয়ে নাশতা কলাম। লঞ্চ ছাড়ার কিছুক্ষণ পরে ছাদে গেলাম। নাবিকের কক্ষটি পরিদর্শনের সুযোগ ঘটল। ভালই লাগছিল ঝিরিঝিরি বাতাস আর চারপাশের পানির এক অদ্ভুত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করার সুযোগ পেয়ে। ঘণ্টা খানেক পর আমাদের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম যখন আমার নয়ন ছেড়ে বিদায় নিল তখন সুন্দরবন দেখতে শুরু করলাম। আমরা দুপুরে খাওয়ার পরে হাড়বাড়িয়ায় নামলাম।

জাহাজে আরাম কেদারায় আরাম করে কুমির, হরিণ ও বানরের সৌন্দর্য দেখলাম। প্রকৃতি আর বন্যপ্রাণীর এক গভীর মায়ার বন্ধনে একে অপরকে যেন আবদ্ধ করে রেখেছে। বাবার এক সহকর্মীর রুমে গিয়ে গজল ও কৌতুক শুনে কিছুটা আনন্দময় সময় কাটালাম। লঞ্চটি কটকায় এবং সকলা ৬.৩০ মিনিটে জামতলায় থাকে। হাড়বাড়িয়ায় হরিন, বানর ও বন্য শুকুর সহ বাঘের পায়ের ছাপ দেখি। কটকায় হরিন ও বানর দেখলাম। দুপুরে খাওয়ার পর হিরন পয়েন্টে। সুর্যোসেতর সেই অপার সৌন্দর্য, অপরূপ দৃশ্য আজও ছোখে ভাসে। এরপর দুবলার বিস্তীর্ণ চরে পা ভিজালাম। সন্ধ্যার পর আমাদের রুমে কৌতুক, নাটক করি। সবাই একসাথে ভালো লাগার মতো অনেক সময় কাটিয়ে ছিলাম। যা এখন স্মৃতি হয়ে ভেসে ওঠে মনের আঙ্গিনায়।

আনন্দ আড্ডা শেষ করে সবাই জাহাজের আরামদায়ক সোফায় বসে বারবি কিউ খেলাম। আহ্ কী আনন্দ। আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম, লঞ্চ চলল। ঘুম ভেঙ্গে সকালের সূর্যোদয় দেখলাম। করমজলে কুমির ও হরিণ দেখে মন খুশিতে নেচে উঠল। কিছু ফল ও আইসক্রিম খেয়ে খুলনার দিকে পা বাড়ালাম। খুলনায় শিপইয়ার্ড দেখে রাত্রে খুলনা হতে যশোহরে গেলাম। সকালে নাস্তা খেয়ে, গোসল করে বের হলাম পার্কে। বিকেলে মার্কেট থেকে গেলাম রোটারিয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন চাচ্চুর বাড়িতে। সেখানে নৈশ ভোজ সেরে নিদ্রার জগতে হারিয়ে গেলাম। সকালে উঠে রওয়ানা হলাম রাজশাহী। এই ছিল আমার ৩ দিনের ভ্রমন কাহিনী এটা অসাধারণ, চমৎকার ভ্রমণ ছিল আমার ক্ষুদ্র দেখায়। আসলে ভ্রমনের মজাই আলাদা। মনে পড়লেই ইচ্ছে হয় আবার যেতে।

This post has already been read 6860 times!