Friday 26th of April 2024
Home / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য / হারিয়ে যাওয়ার পথে শীতের খেজুরের রস

হারিয়ে যাওয়ার পথে শীতের খেজুরের রস

Published at নভেম্বর ১৪, ২০১৭

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা):
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি সুন্দরবন সংলগ্ন জেলাগুলোতে এক সময় খেজুরের রসের জন্য বিখ্যাত ছিল। শীত মৌসুম আসলেই গ্রামগঞ্জে রসের নাস্তা, পিঠা-পায়েসের ধুম পড়ে যেত। রাতের বেলায় গাছ থেকে রস নামিয়ে নাস্তা খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা। শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে গ্রামগুলোতে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ পরিচর্যার জন্য ব্যস্ত থাকতো। গাছিরা রস, গুড়, সংগ্রহের জন্য কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে তা চৈত্র মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
খেজুরের রস দিয়ে শীতের মজাদার পিঠা-পায়েস বানাতে গ্রামের মহিলারা পারদর্শী। নতুন রসের ঘ্রাণে চতুর্দিকে মৌ মৌ করে। রসের নাস্তার ঘ্রাণে মানুষের মন কাড়ে। এখন আর সেরকমটা দেখা যায় না। দিন দিন খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এক শ্রেণির গাছির অসাবধানতার দরুন গাছের মাথা মরে যাচ্ছে। চলতি শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা। শীত মানেই যেন খেজুর রস। শীতের সকালে নানাভাবে খাওয়া হয় এ রস।

খুলনা জেলার ফুলতলা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, দিঘলিয়া ও সাতক্ষীরার সদর, তালা, কলারোয়া, দেবহাটা, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায় এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় খুলনা, যশোর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকার খেজুর গাছ থেকে আগের বছরের মতো পর্যাপ্ত রস পাচ্ছেন না গাছিরা।

সারা বছর অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা গ্রাম-গঞ্জের খেজুর গাছের কদর বেড়েছে। তারা নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে আবার কেউ কেউ নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুর গুড় দেয়ার চুক্তিতে পুরো মৌসুমের জন্য গাছ লিজ নিয়ে রস সংগ্রহ এবং সেই রস থেকে গুড় তৈরি করছেন। তবে খেজুরগাছ সংকটের কারণে এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের গাছিরা।

কয়েক বছর আগেও বৃহত্তর যশোর,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকার প্রতিটি বাড়িতে, খেতের আইলের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুরগাছ। কোনো পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতো খেজুর গাছগুলো। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো গুঁড়। অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় এলাকার চাহিদা পূরণ করে বাড়তি গুড় সরবরাহ করা হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে।

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, লবণ পানির আগ্রাসন ও জ্বালানি হিসেবে ইট ও টালি পোড়ানোর কাজে অবাধে খেজুর গাছ ব্যবহারের ফলে মারাত্মকভাবে কমে যায় খেজুরগাছ। বর্তমানে বসতবাড়ি কিংবা রাস্তাঘাটের পাশেও দেখা মিলে না খেজুরগাছের। অনেকটাই বিলপ্তির পথে পরিবেশবান্ধব গুরুত্বপূর্ণ এ গাছ। এক সময় রস সংগ্রহ করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করলেও বেশিরভাগই ছেড়ে দিয়েছেন এ পেশা। দুই-একজন এখনো ধরে রেখেছেন।

গাছিরা জানান, তিন-চার দিন হচ্ছে রস সংগ্রহের কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে এখনো রস বেশি মিলছে না। শীত বাড়লে রসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলে তারা জানান। চলতি নভেম্বর মাসের মাঝামাছি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত এই ৪ মাস খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। এ সময় রস থেকে গুড় তৈরি হয়। কনকনে শীতে বাড়ির আঙ্গিনায় রোদে বসে খেজুরের রস পান করা গ্রাম বাংলার মানুষের এতিহ্য। একইভাবে সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীন পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠে।

This post has already been read 3787 times!