Friday 19th of April 2024
Home / পরিবেশ ও জলবায়ু / ৩৭ বছরে সুন্দরবনের আয়তন কমেছে ১৪৪ বর্গ কি.মি.

৩৭ বছরে সুন্দরবনের আয়তন কমেছে ১৪৪ বর্গ কি.মি.

Published at নভেম্বর ৮, ২০১৭

Sunderbans38ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা):
অব্যাহত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা প্রতিকূলতায় প্রতিবছর কমছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের আয়তন। মিঠা পানির প্রবাহ হ্রাসে তীব্র লবণাক্ততা, ভাঙ্গন, নির্বিচারে গাছ কর্তন ও ভূমি শাসনে গত ৩৭ বছরে সুন্দরবনের আয়তন কমেছে প্রায় ১৪৪ বর্গকিলোমিটার। আর সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’র (ইসিএ) বনভূমি ঠিক কি পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়েছে তার কোন হিসেব নেই কারো কাছে।

প্রকৃতির অপূর্ব লীলাভূমি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক নিদর্শন ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ করতে বৃহত্তর খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন ৫২ ইউনিয়নকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। স্থলজ, জলজ প্রাণি জীববৈচিত্র ও অন্যান্য ইকো সিস্টেম সুন্দরবনকে বছরের পর বছর সমৃদ্ধ করেছে। এসব এলাকায় বায়ু ও পানি দূষণমুক্ত করতে ক্ষতিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিবেশের ছাড়পত্র না দিতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের ওপর চাপ কমাতে পরিবেশ অধিদপ্তর ১১ দফা সুপারিশমালা তৈরি করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার প্রকাশনায় এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
প্রকাশনায় বৃহত্তর খুলনা জেলার ৯ উপজেলার ৭ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমি পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশগতমান উন্নয়ন, পরিদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রশমন এবং টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনার লক্ষে সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের বাইরে চারদিকে ১০ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকা পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে গেজেটে ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রকাশনায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পরিবেশগত সংকটাপন্ন ইউনিয়নগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, মদিনাবাদ, মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, বাগালি, আমাদি, পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালি, চাঁদখালি, সোলাদানা, দেলুটি, দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা, কৈলাশগঞ্জ, লাউডোব, তিলডাঙ্গা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, ভুরুলিয়া, আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া, প্রতাপনগর, খাজরা, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা, বাইনতলা, উজলকুড়, মংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা, সোনাইতলা, মিঠাখালি, চিলা, চাঁদপাই, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা, খাওলিয়া, নিশানবাড়িয়া, শরণখোলা উপজেলার সাউথখালি ও তাফালখালি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন পরিবেশ সংকটপন্ন এলাকাভিত্তিক এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, উল্লেখিত ইউনিয়নগুলোতে ক্ষতিকর কোন কর্ম বা প্রক্রিয়া চালু করা যাবেনা। পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষে কয়রা, শরণখোলা, মংলা, রামপাল, ও শ্যামনগরে উদ্বুদ্ধকরণ সভার আয়োজন করা হয়। এইসব এলাকায় বন্যাপ্রাণি ধরা, সংগ্রহ, মাটি পানি বায়ু এবং শব্দ দূষণকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটির সভায় পরিবেশ বিশেষজ্ঞ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড.সরদার মো. শফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ডা. দিলীপ কুমার দত্ত, কুয়েটের প্রভাষক এসএম তারিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন- ইউনিয়নগুলোতে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে উদ্যোক্তাদের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

পরিবেশ সংরক্ষণে ১১ দফা সুপারিশমালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দক্ষিণের এসব ইউনিয়নগুলোতে মাটি, পানি ও বায়ু দূষণকারি ট্যানারি, ডাইং, ওয়াশিং, ইটভাটা ইত্যাদি শিল্প প্রতিষ্ঠান যাতে স্থাপিত না হয় সেদিকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ব্যতিত উল্লেখিত ৯ উপজেলায় নতুন কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে দেওয়া উচিত হবে না।

উল্লেখ্য, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের আওতায় ঢ্যানমারি, দুধমুখি ও চাঁদপাই সংলগ্ন নদী বিরল প্রজাতির গাঙ্গেয় ডলফিন ও ইরাবতি ডলফিন সংরক্ষণ ও বংশ বৃদ্ধির জন্য ১ হাজার ৭১ হেক্টর জলাভূমিকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।

This post has already been read 3510 times!