ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা):
খুলনা মহানগরীর রূপসা নতুন বাজার এলাকায় ৪টি মাছ ডিপোতে অভিযান চালিয়ে ওজন বাড়ানোর লক্ষ্যে জেলী পুশকৃত ৭০০ কেজি চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে। চিংড়িতে অপদ্রব পুশ করার অভিযোগে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দকৃত ৭০০ কেজি চিংড়ি রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে বিনষ্ট করা হয়। এছাড়া পুশের জন্য রাখা প্রায় ১ হাজার কেজি চিংড়ি উদ্ধার করে বিভিন্ন এতিমখানায় দিয়ে দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটা থেকে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালিত হয়। র্যাব-৬, খুলনা জেলা প্রশাসন ও মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তর সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অসাধু চক্র চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করার ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত চিংড়ি শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। অর্থনৈতিক এ অপার সম্ভাবনাময় চিংড়ি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনে কঠোর নজরদারী থাকা সত্ত্বেও চলছে এহেন হীন কর্মকা-।
এ সম্পর্কে মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. তরিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে নতুনবাজারের ৪টি মৎস্য ডিপোতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় চিংিড়িতে অপদ্রব্য জেলী পুশের অভিযোগে নতুন বাজারের ফাতেমা ফিসের মালিক ফারুক হোসেনকে ৭৫ হাজার টাকা, অপু ফিসের মালিক আকাশ রায়কে ২০ হাজার টাকা, সুমন ফিসের মালিক সুমনকে ৫০হাজার টাকা এবং আঁখি ফিসের মালিক মো. আলমগীর শেখকে ৫০ হাজার টাকাসহ মোট ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অংগ্যজাই মারমা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ওই জরিমানা আদায় করেন।
এ সময় চারটি ডিপো থেকে জেলী পুশকৃত ৫০ কেজি গলদা ও ৬৫০ কেজি বাগদা চিংড়ি জব্দ করে সেগুলো রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে বিনষ্ট করা হয়। এছাড়া পুশের অপেক্ষায় রাখা আরো ১ হাজার কেজি চিংড়ি উদ্ধার করে বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।
অভিযানে র্যাব-৬ খুলনার স্পেশাল কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নানের নেতৃত্বে অন্যান্য র্যাব সদস্যরা এবং খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকারের নেতৃত্বে পরিদর্শক মো. তরিকুল ইসলাম ও পরিদর্শক লিপ্টন সরদার উপস্থিত ছিলেন।
এ সম্পর্কে খুলনা সিভিল সার্জন এসএম আব্দুর রাজ্জাক বলেন এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, চিংড়িতে মেশানো অপদ্রব্য স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অপদ্রব্য পুশ করা চিংড়ি খেলে লিভার, কিডনি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন যাবত সাদা সোনা খ্যাত চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে এক শ্রেণীর অসাধু চক্রের কারণে চিংড়ি রফতানি শিল্প চরম বিপদগ্রস্ত। এই অপদ্রব্য মেশানোর কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত চিংড়ি শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। গলদা ও বাগদা চিংড়ি দিনকে দিন বিদেশের বাজার হারাচ্ছে। অনেক সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে চলে যাচ্ছে পুশকৃত চিংড়ি। এতে বিদেশী বাজারে এ শিল্পের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতি।