Thursday , September 18 2025

সেচ ছাড়াই হবে ধান চাষ!

মো. আরিফুল ইসলাম (বাকৃবি):
পানির সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কৃষিকাজে। প্রতি কেজি চাল উৎপাদনের প্রায় ৩-৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। আর এ পানির যোগান দিতে ভূগর্ভস্থ পানিই প্রধান উৎস। ফলে একদিকে যেমন নিচে নামছে পানির স্তর অন্যদিকে এ পানি সেচে চাপ পড়ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী তেলের উপর। আর বাড়ছে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয়। দেশের কৃষকদের চাষাবাদ খরচ কমাতে এবং উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছেন দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। পানি সেচ ছাড়াই বোরো ধান চাষ করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে উৎপাদনও বাড়বে। ফলে শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ পদ্ধতিকে কৃষকের মাঝে বিস্তার ঘটাতে পারলে পানির আপচয় রোধ হবে, বাড়বে কৃষি উৎপাদন। হবে অর্থনৈতিক সাশ্রয়। এই প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারলে ফলন বাড়বে কৃষক উপকৃত হবে, দেশ উপকৃত হবে। বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদীয় সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ বিষয়ক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।

সেমিনারে কৃষিতত্ব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুস সালামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান। এসময় শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ বিষয়ে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা ও উত্তোরণের উপায় নিয়ে সেমিনারে উপস্থিত সকলের সাথে মতবিনিময় করা হয়।

জানা যায়, দেশে প্রচলিত কাঁদা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় ৩-৫ হাজার লিটার পানি খরচ হয়। নতুন কোনো জাতের উদ্ভাবন ছাড়াই বোরো ধান চাষে পানি সেচের পরিমাণ অর্ধেক দিয়ে ফলন বাড়ানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান ও তাঁর গবেষক দল। অধ্যাপক ড. মো. মশিউরের উদ্ভাবিত ‘শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ’ প্রযুক্তিতে জমিতে পানি সেচের পরিমাণ কমানোর ফলে প্রচলিত কাঁদা পদ্ধতির তুলনায় ধানের ফলন বেশি হয়। এতে অর্থনৈতিক ভাবে ব্যাপক লাভবান হবেন দেশের দরিদ্র কৃষকরা।

ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, প্রচলিত কাঁদা পদ্ধতিতে বোরো ধানের জমিতে যে পরিমাণ সেচ দিতে হয় তার অর্ধেক সেচ দিয়েই ফসল ফলানো যাবে। এ প্রযুক্তিতে সামান্য অংকুরিত বীজ জো (জমির অনুকূল আর্দ্রতা) অবস্থায় জমিতে সরাসরি লাইনে লাগাতে হবে। তবে বীজ বপন করতে হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।

এ পদ্ধতির অন্যান্য উপকারী দিক সম্পর্কে তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি খুব সামান্য উত্তোলন করতে হয় বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের খরচ কম হয়। জমিতে পানির পরিমাণ কম থাকায় কাঁদা পদ্ধতির তুলনায় এ পদ্ধতিতে গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কম হয়। এ পদ্ধতিতে ধানের জীবনকাল ১৫ দিন কমে যায়। এতে আমন ধান কাটার পর সরিষা, আলু বা অন্যান্য রবি শস্য চাষের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। ফলে কৃষক একটি বাড়তি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

Check Also

জলবায়ু স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির উপর কৃষক প্রশিক্ষণ

পাবনা সংবাদদাতা: জলবায়ু স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির উপর কৃষক প্রশিক্ষণ পাবনা কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ হলে …