নিজস্ব প্রতিবেদক: গবাদিপশু ও পোল্ট্রির উপজাত পণ্য হতে পোল্ট্রি ও ফিস ফিড উৎপাদনের সম্ভাবনা (Potential of Using Livestock and Poultry By-products for Poultry and Fish Feed Production in Bangladesh) শীর্ষক একটি সেমিনার বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আজ (১৯ মে) অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান। স্বাগত বক্তব্য দেন মো. শরিফুল হক, উপপরিচালক, খামার। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ড. এবিএম খালেদুজ্জামান, পরিচালক, উৎপাদন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ-এর এনিম্যাল সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ড. একেএম আহসান কবির এবং নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি লিমিটেড-এর এজিএম মোহাম্মদ ফসিউল আলম ভূঁইয়া। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. এস এম যোবায়দুল কবির, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ডা. মো. বয়জার রহমান, পরিচালক সম্প্রসারণ ডা. বেগম শামসুন্নাহার আহম্মেদ এবং কৃত্রিম প্রজনন দপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহজামান খানসহ সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রায় ১০০ জন অংশগ্রহণকারী।
সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের বৃদ্ধি সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণ উপজাত পণ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশ দূষণ, সংক্রমণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। অথচ সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে এসব উপজাত পণ্য পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করা গেলে তা অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও পুষ্টিগত দিক থেকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হতে পারে।
গবাদিপশুর উপজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে হাড়, রক্ত, চর্বি (Tallow), অভ্যন্তরীণ অঙ্গ (যেমন যকৃত, পাকস্থলী), চামড়া ও তার টুকরো, অন্ত্র ইত্যাদি। পোল্ট্রির উপজাত হিসেবে ব্যবহৃত হয় পালক, পা, ঠোঁট, মাথা এবং অন্ত্র ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। এসব উপাদান রূপান্তর করে তৈরি করা যায় Blood Meal, Feather Meal, Meat & Bone Meal ও Tallow, যেগুলো প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসসমৃদ্ধ এবং উচ্চশক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন প্রাণিসম্পদের উপজাত উৎপন্ন হয়, যার ৩০-৪০ শতাংশ ব্যবহারের উপযোগীভাবে রূপান্তর করা গেলে বছরে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা মূল্যের ফিড উপাদান উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে দেশের ফিড শিল্পের ২৫-৩০ শতাংশ উপাদান আমদানিনির্ভর, ফলে উপজাত ব্যবহার করলে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে উদ্যোক্তা, নারী উদ্যোক্তা ও যুবকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এই উদ্যোগের ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যগত নানা সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। যেমন উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রোগজীবাণু নিয়ন্ত্রণ, নদী ও পানি দূষণ হ্রাস, গন্ধ ও বায়ু দূষণ কমানো সম্ভব হবে।
তবে সেমিনারে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরা হয়। যেমন– হাইড্রোলাইসিস, রেন্ডারিং ও আধুনিক শুকানোর প্রযুক্তির অভাব, BSTI ও ডিএলএস-এর মান নির্ধারণ ও মান নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা, এবং খামারিদের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি।
এই সমস্যা সমাধানে প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তির উন্নয়ন, আধুনিক রেন্ডারিং প্ল্যান্ট স্থাপন, মান নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মনীতি প্রণয়ন, গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বিস্তৃতকরণ, উদ্যোক্তা ও খামারিদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ এবং সরকারি সহায়তায় উপজেলাভিত্তিক পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়।
সেমিনারে আরও জানানো হয়, বর্তমানে দেশে মুরগির পালক ব্যবহার করে ফিডে Feather Meal উৎপাদন এবং রেন্ডারিং ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে মাংস ও হাড়ের গুঁড়া থেকে প্রোটিন মিল উৎপাদন করে তা মাছ ও পাখির খাদ্যে অনুমোদিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে গবাদিপশু ও পোল্ট্রির উপজাত পণ্য হতে পোল্ট্রি ও ফিস ফিড উৎপাদনের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। প্রক্রিয়াজাতকরণ, মান নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব। এতে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে, তেমনি পরিবেশ সংরক্ষণ ও কর্মসংস্থানও নিশ্চিত হবে।