চীনের হেইলংচিয়াং ও হুবেই প্রদেশে কৃষি ও প্রাণিসম্পদের বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে বায়োগ্যাস ও জৈবসার উৎপাদনের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব শিল্প। ধান ও গম উৎপাদনে এগিয়ে থাকা হেইলংচিয়াং প্রদেশ প্রতিবছর প্রায় ৯ কোটিরও বেশি টন খড় উৎপাদন করে। পাশাপাশি, সেখানে ২ কোটি হেক্টর বন থেকে আসে প্রায় ৯৬ লাখ টন কাঠের বর্জ্য। প্রাণিসম্পদ খাত থেকেও প্রতিবছর তৈরি হয় ৯ কোটি টন গোবর। এই বিপুল বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে প্রদেশটি এখন বায়োগ্যাস উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছে।
২০২২ সালে হেইলংচিয়াং সরকার একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়, যার লক্ষ্য শীতপ্রধান উত্তরাঞ্চলে বড় আকারে বায়োগ্যাস প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। বর্তমানে সাতটি প্রকল্প চালু রয়েছে, যেখানে বছরে ৫ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপন্ন হয়। আরও ছয়টি প্রকল্প নির্মাণাধীন। এগুলো চালু হলে প্রতিবছর ৬.৪ লাখ টন খড় ও ১০ লাখ টন গোবর প্রক্রিয়াজাত করা যাবে।
এই খাতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে ‘বোনেং গ্রিন এনার্জি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যারা শীতকালেও চালু থাকা ‘ড্রাই অ্যানারোবিক ফারমেন্টেশন’ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ২০২৮ সালের মধ্যে তারা ৩০টি কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে, যার প্রতিটিতে বছরে ৪০ লাখ ঘনমিটার বায়োগ্যাস উৎপন্ন হবে এবং ৭০-১০০ হাজার টন গোবর ও ৩০-৫০ হাজার টন খড় ব্যবহার করা যাবে।
এই গ্যাস শহরের গ্যাসলাইনে সংযুক্ত হচ্ছে, আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জৈব মিথানল তৈরিতেও ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালে ইউরোপীয়ি আএসসিসি ইইউ সনদ পায়, যা চীনের ক্ষেত্রে প্রথম।
অন্যদিকে, হুবেই প্রদেশও এগিয়ে এসেছে একই পথে। এ বছর প্রদেশটি ৫০টি গ্রামে বায়োগ্যাস প্রকল্পের জন্য ৫ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ দিয়েছে। হুবেইতে বছরে ৩.৮ কোটি টন খড় ও ৭.২ কোটি টন গোবর উৎপন্ন হয়। ২০১৭ সালেই সেখানে চালু হয়েছিল পাইলট প্রকল্প। ইচেং কাউন্টির একটি জৈবশক্তি পার্কে বর্জ্য থেকে বছরে ৬০ হাজার টন জৈব সার তৈরি হচ্ছে, যা কাছাকাছি বাগানগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
একসময় যে খড় কৃষকের কাছে ছিল বিরক্তিকর বর্জ্য, এখন তা হয়ে উঠেছে অর্থকরী সম্পদ। একজন কৃষক জানান, আগে জমিতে ফেলে রাখা খড় পচতে সময় লাগত। এখন তা বান্ডিল করে বিক্রি করা হয় প্রতি টন ৩৫০-৬০০ ইউয়ানে।