Tuesday , April 29 2025

খোলা বাজারে মুরগি জবাই ও বিক্রিতে বাড়ছে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

বাকৃবি সংবাদদাতা: স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ মাংস প্রাপ্তি মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা।  প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশের মানুষ প্রতিদিন মাথাপিছু ১৪৩ দশমিক ৭৭ গ্রাম মাংস খেতে পায়  । আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমিষের চাহিদা পূরণে মাংসের অবদান অনস্বীকার্য। তবে, দেশের অধিকাংশ স্থানীয় পোল্ট্রি বাজারে এখনো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি।

সম্প্রতি বাংলাশে কৃষি বিশ্বব্যিালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষকের পরিচালিত গবেষণায় ময়মনসিংহ সদরের বিভিন্ন স্থানীয় খোলা বাজারসমূহে সাধারনভাবে জবাইকৃত মুরগির মাংসে মিলেছে টাইফয়েড (সালমোনেলা) ও ডায়রিয়া (ইকোলাই) রোগের জীবাণু। এছাড়াও দোকানে মুরগি অসুস্থ  হলে বেশিরভাগ দোকান মালিক (৯৬.১৫ শতাংশ) মুরগি আলাদা রাখা বা মেরে ফেলার পরিবর্তে বিক্রি করে দেন বলে ওই গবেষণায় উঠে আসে।

ময়মনসিংহ সদর ও এর আশেপাশের পোল্ট্রি বাজারসমূহের অবস্থা পর্যেবক্ষণ, বায়োসিকিউরিটি এবং পোল্ট্রি জবাইকরণ সম্পর্কে বিক্রেতাদের মনোভাব যাচাইকরণ এবং সেখানে বিক্রয়কৃত মাংসের গুণগতমান যাচাইয়ের জন্য বাংলাশে কৃষি বিশ্বব্যিালয়ের (বাকৃবি) পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেনের নেতৃত্বে গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। গবেষণাটি ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শাখা কর্তৃক আয়োজিত ‘১৩তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার -২০২৫-এ উপস্থাপিত হয়।লাই ও সালমোনেলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উপস্থিতি রয়েছে যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় মাংসে এইগুলো থাকার কথা না। এসব মাংসের নমুনায় সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ লগারিদম ৪.০২ থেকে লগারিদম ৫.৫৯ সিএফইউ/গ্রাম এবং ইকোলাই  ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ লগারিদম ৪.০১ থেকে লগারিদম ৫.৯৪ সিএফইউ/গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাজারের নমুনায় মোট কার্যকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণও (টিভিসি) ছিল বেশি।

অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, স্থানীয় বাজারের সাধারণভাবে জবাইকৃত মাংসে ক্ষতিকর ইকোগবেষণাটিতে ময়মনসিংহ সদরের চরপাড়া বাজার, মিন্টু কলেজ বাজার, মেছুয়া বাজার, নতুন বাজার, সানকিপাড়া বাজার, কেওয়াটখালী  বাজার, শেষমোড় বাজার, সুতিয়াখালী বাজার, ভাবখালী বাজার, কে আর মার্কেট, শম্ভুগঞ্জ বাজার এবং গাছতলাসহ ১২টি স্থানীয়  বাজারের পোল্ট্রি দোকানের তথ্য নেওয়া হয়। একটি সুনির্ষ্টি প্রশ্নাবলীর তালিকা অনুসরণ করে এই ১২টি বাজারের ২৪টি  পোল্ট্রি দোকানের কর্মীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। এসব বাজারে সাধারনভাবে জবাইকৃত এবং প্রসেসিং ইউনিটের পদ্ধতি অনুসরণ করে পোল্ট্রি ফার্মে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাইকৃত মোট ২৬টি মাংসের (উরু এবং বুকের মাংস) নমুনা এবং ২টি পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। নমুনাগুলো বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল,” বলে জানান  অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন।

গবেষণায় উঠে আসা স্থানীয় বাজারের মুরগির দোকান গুলোর  অবস্থা সম্পর্কে গবেকষক বলেন, “গবেষণার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে ৮৪.৬২ শতাংশ দোকানে মুরগি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই, ৯২ শতাংশ দোকানে ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই এবং ৪৬.১৫ শতাংশ দোকানে পর্যাপ্ত আলো ছিল না। এছাড়াও, ৩০.৭৭ শতাংশ দোকানে মাংস কাটার জায়গা অস্বাস্থ্যকর ছিল এবং পরিকল্পিত বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল না। এরকম পরিস্থিতি ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি এবং দূষণের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।”

স্বাস্থ্যকর মাংস প্রাপ্তির বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারগুলোর অধিকাংশ পোল্ট্রি দোকানে অপর্যাপ্ত জায়গায় পাখিগুলোকে রাখা হয় এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই করা হয় যা অত্যন্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পন্ন এবং নানা রোগ বিস্তারের কারণ হতে পারে। এর সমাধানে স্থানীয় বাজারগুলোতে ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাংস পৌছে দেওয়া সম্ভব।”

তিনি আরো বলেন,  ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারগুলোতে ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা গেলে তা একইসাথে যেমন নিরাপদ মাংস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে, পাশাপাশি স্থানীয় পোল্ট্রি দোকানগুলো আরও লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। উল্লেখ্য যে, প্রসেসিং ইউনিটের মাংসে কোনও সালমোনেলা বা কলিফর্ম সনাক্ত করা যায়নি, যা ইঙ্গিত করে যে প্রসেসিং ইউনিট থেকে পাওয়া মাংস খাওয়ার জন্য নিরাপদ।

প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারের পোল্ট্রি দোকানীদের ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট স্থাপনে উৎসাহিত করতে হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পোল্ট্রি মুরগি বিক্রি বন্ধ করতে হবে। বাজার থেকে মাংস কেনার সময় ক্রেতাদের সতর্ক হতে হবে। ক্রেতা ও বিক্রেতাকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাইকৃত মাংসের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি করেন ওই অধ্যাপক।

This post has already been read 385 times!

Check Also

ডিমের দামে অস্বাভাবিক পতন: খামারীদের সুরক্ষায় বিপিআইএ’র ৮ দফা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিমের দামের অস্বাভাবিক পতনে দিশেহারা দেশের লেয়ার (ডিমপাড়া মুরগি) খামারিগণ। হাজার হাজার ক্ষুদ্র …