শুক্রবার , অক্টোবর ৪ ২০২৪

জাটকা নিধন বন্ধ হলে দেশের মানুষ সুস্বাদু বড় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পাবে- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাটকা নিধন বন্ধ হলে দেশের মানুষ সুস্বাদু বড় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পাবে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

শনিবার (০১ এপ্রিল) সকালে পিরোজপুরের হুলারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৩ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, একটা মা ইলিশ ছয় লক্ষাধিক ডিম দেয়। কিছু দুর্বৃত্ত বালু উত্তোলন করতে গিয়ে ইলিশের প্রজননস্থলের পরিবেশ নষ্ট করে। নদী দূষণ করে ইলিশের ডিম ও পোনা নষ্ট করে। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে যত্রতত্র মাছ আহরণ করে মা ইলিশ ও জাটকা নিধন করে। একটা মা ইলিশ ধরা মানে ছয় লাখ ডিম নষ্ট করা। জাটকা ধরা মানে ছোট ইলিশ বড় হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া। যারা জাটকা ধরছে, এ মাছ বড় হলে তারাই ধরবে, বড় মাছ বিক্রি করে তারাই লাভবান হবেন। দেশের মানুষ সুস্বাদু বড় ইলিশ খেতে পারবে।

তিনি বলেন, একটা সময় দেশে মাছের আকাল ছিল। বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ মাছের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। ইলিশের উৎপাদন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিশ্বের মোট ইলিশের শতকরা ৮০ ভাগ শুধু বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। ২০০৮-০৯ সালে দেশে ইলিশের মোট উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১-২২ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা এবং তাঁর সরকারের অবদানের কারণে ইলিশের উৎপাদন অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মন্ত্রী আরো যোগ করেন, সরকারের লক্ষ্য দেশের প্রতিটি ঘরে সুস্বাদু ও সুদৃশ্য ইলিশ পৌঁছে দেওয়া এবং উদ্বৃত্ত উৎপাদন হলে দেশের বাইরে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা। তাই মৎস্যজীবীদের কাছে আহ্বান, জাটকা যাতে কেউ ধরতে না পারে।

মন্ত্রী আরো জানান, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় স্মার্ট মৎস্য খাতের দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির অনেক মাছ ফিরিয়ে এনে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছের পোনা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে অঞ্চলে যে মাছ নেই, সে অঞ্চলে সে মাছের পোনা ছাড়া হচ্ছে। এভাবে ভাতে-মাছে বাঙালির বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি আবার ফিরিয়ে আনা হবে।

শ ম রেজাউল করিম আরো যোগ করেন, দেশে মাছের উৎপাদন বাড়ার ফলে খাবারের যোগান বৃদ্ধি পাচ্ছে, পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। মাছ চাষের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, বেকারত্ব দূর হচ্ছে, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হচ্ছে। মাছ উৎপাদন, পরিবহন, বিপণন ও রপ্তানির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হচ্ছে। অপরদিকে মাছ রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে যা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

মৎস্যজীবীদের উদ্দেশে এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, জিআই সনদপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদ ইলিশ বিলুপ্ত হলে বাঙালির গর্বের ইলিশের জিআই সনদ থাকবে না।

সেজন্য কোনোভাবেই মা ইলিশ ধরা যাবেনা, জাটকা ইলিশ নিধন করা যাবে না। জাটকা নিধন বন্ধ থাকাকালে মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ দেওয়া হচ্ছে, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইলিশ বড় হতে দিতে হবে। বড় ইলিশ মৎস্যজীবীরাই আহরণ করবে।

এ সময় তিনি আরো বলেন, জাটকা নিধন বন্ধ না করলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। যারাই জাটকা নিধনের অবৈধ কাজে জড়িত থাকবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের মামলা ও জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, নৌপুলিশের ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন এস এম এনামুল হাসান, পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক। মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, পিরোজপুরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শেষে জাটকা রক্ষায়  জনসচেতনতামূলক প্রচারণার অংশ হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর প্রতিনিধিসহ কয়েকহাজার জেলে ও মৎস্যজীবীদের সাথে পিরোজপুরের হুলারহাট লঞ্চ ঘাট থেকে কচা নদীতে বর্ণাঢ্য নৌর‍্যালিতে অংশ নেন মন্ত্রী।

উল্লেখ্য, ‘করলে জাটকা সংরক্ষণ, বাড়বে ইলিশের উৎপাদন’-এ প্রতিপাদ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শনিবার (০১ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, ২০২৩। চলবে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তর।

This post has already been read 1383 times!

Check Also

বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েছেন মৎস্য চাষী, কৃষকসহ সাধারণ মানুষ

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল ডাকাতিয়া। খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া এবং যশোর …