Friday 19th of April 2024
Home / পোলট্রি / পোলট্রি খামারিদের কষ্ট বুঝতে পেরেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী -মসিউর রহমান

পোলট্রি খামারিদের কষ্ট বুঝতে পেরেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী -মসিউর রহমান

Published at মার্চ ১৪, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমরা সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণ, পোল্ট্রি পালনের ডিনামিক্স বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিকই চলমান সংকট বুঝতে পেরেছেন। এজন্য দেশের ৬০লাখ খামারি ও তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা’র সভাপতি মসিউর রহমান। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ডিম ও মুরগির উৎপাদন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন।

মসিউর বলেন, পোল্ট্রি একটি লাইভ ইন্ডাষ্ট্রি। এখানে গ্যারান্টি দিয়ে কোন কিছুই বলা সম্ভব নয়। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, চাহিদা কমে যাওয়া, রোগজীবানুর সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে ডিম-মুরগির উৎপাদন ও দাম কখনও বাড়ে আবার কখনও কমে। অনেক খামারি ইতোমধ্যেই ঝরে গেছে। এখন সমালোচনা নয় বরং পোল্ট্রি শিল্পের পুণর্গঠন এবং খামারিদের উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে। মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) ওয়াপসা-বিবি আয়োজিত দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।

মসিউর বলেন, ডিম-মুরগির উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগ-জীবানুর সংক্রমণ রোধ করা এবং নিরাপদ ডিম ও মুরগি উৎপাদনের কৌশল নিয়ে আলোচনার জন্যই মূলত: এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এবারের ¯স্লোগান “টেস্টি এন্ড হেলদি প্রোটিন ফর অল”। তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংসকে ভোক্তাদের কাছে আরও জনপ্রিয় করতে হলে স্বাদের দিকে নজর দিতে হবে। ভোক্তাদের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে- আমরা পোল্ট্রিতে প্রচুর এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করছি। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে আমরা প্রচুর পরিমাণে প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক এবং এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করছি। এখন ভোক্তারা চাইলেই এন্টিবায়োটিক রেসিডিউমুক্ত ডিম ও মাংস গ্যারান্টি সহকারেই বাজার থেকে কিনতে পারেন। মসিউর বলেন, অনেকেই জানেন না যে পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ফুড চেইনগুলোও এখন আমাদের দেশের খামার থেকে ডিম ও মুরগির মাংস নিচ্ছে। তাঁর ভাষায়, বিগত তিন দশকে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প অনেকখানি এগিয়েছে। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বর্জ্য রিসাইক্লিং করে বায়োগ্যাস, জৈবসার এমনকি বিদ্যুৎও উৎপাদন করছে। মসিউর বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে পোল্ট্রি ফিডের কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে, ফলে বেড়েছে ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন খরচ। কিভাবে এ খরচ কমিয়ে আনা যায়, বিকল্প কাঁচামালের ব্যবহার করে কিভাবে সাশ্রয়ীমূল্যে সবার জন্য প্রাণিজ আমিষের যোগান নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে সেমিনারে আলোচনা হবে।

ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, ফিড মিলারদের বারবার দোষ দেয়া হচ্ছে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তাঁরা লাভ করতে পারছেন না। গত একবছরে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম তলানিতে ছিল। তাই প্রকৃত চাহিদার হিসাব বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী উৎপাদন করতে হবে। তা না হলে কখনও ওভার প্রোডাকশন আবার কখনও আন্ডার প্রোডাকশন হবে; দাম উঠানামা করবে। এতে খামারি ও ভোক্তা উভয়েই ক্ষতির শিকার হবেন।

ওয়াপসা-বিবি’র সাধারন সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান বলেন, ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখায় গবেষণাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ বছর থেকেই WPSA-BB Research Grant চালু করা হচ্ছে। প্রতি বছর ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী-গবেষকদের গবেষণায় সহায়তা করার জন্য প্রত্যেক কে ১ লক্ষ টাকার বৃত্তি প্রদান করবে ওয়াপাস-বিবি।

ওয়াপসা হেডকোয়ার্টার্স এর প্রেসিডেন্ট মিজ মিশেল বায়োচার্ড এক ভিডিও বার্তায় বলেন, পোল্ট্রি’র জেনেটিক্সের উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্প পরিসরে ডিম-মাংসের উৎপাদন ও মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে হবে; বর্তমান ও আগামী পৃথিবীর মানুষের জন্য খাদ্য ও পুষ্টির সংস্থান করতে হবে।

এমদাদুল হক চৌধুরী, প্রফেসর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় (বাকৃবি) বলেন, পোল্ট্রি শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। সারাবিশ্বের আধুনিক গবেষণা এবং বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতাগুলোকে একত্রিত করা আমাদের অন্যতম একটি লক্ষ্য- যাতে এদেশের খামারি ও উৎপাদকগণ তা থেকে উপকৃত হতে পারেন।

ড. শওকত আলী, প্রফেসর, বাকৃবি বলেন- পোল্ট্রি একটি লাইভ ইন্ডাষ্ট্রি। প্রতিনিয়তই এর আপগ্রেডেশন হচ্ছে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন নতুন রোগ-জীবানুর প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। কাজেই জীবানুর সংক্রমণ রোধ করা, খামারকে সুরক্ষিত রাখা এবং উৎপাদন ও পণ্যেও মান বাড়াতে বিজ্ঞানীদের সর্বদাই সচেষ্ট থাকতে হয়। ওয়াপসা প্লাটফর্মের মধ্য দিয়ে সে চেষ্টাই আমরা করছি।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয় দেশী-বিদেশী মিলিয়ে মোট ৪০টি ওরাল এবং ৫২টি পোষ্টার প্রেজেন্টেশন থাকবে। বিশে^র বিভিন্ন দেশের পোল্ট্রি বিজ্ঞানীরা প্ল্যানারি সেশনগুলোতে উপস্থিত থাকবেন।

This post has already been read 1785 times!