Friday 26th of April 2024
Home / খাদ্য-পুষ্টি-স্বাস্থ্য / ডাল খাওয়ার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে -কৃষিসচিব

ডাল খাওয়ার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে -কৃষিসচিব

Published at ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেছেন, ছোট্ট দেশে থেকে ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগানের জন্য বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে প্রতিযোগিতা করতে হয়। ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য, এটির  উৎপাদনে গুরুত্ব বেশি দিতে হয়। ধানের সাথে ডালসহ অন্যান্য ফসল প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। সেজন্য, আমরা ধানের উৎপাদন না কমিয়ে ডালের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি। একইসঙ্গে,  ডাল খাওয়ার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সেলক্ষ্যেই বিশ্ব ডাল দিবস পালন করা হচ্ছে।

আজ শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে বিশ্ব ডাল দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিসচিব এসব কথা বলেন।

দেশে প্রথমবারের মতো ডাল দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এই সেমিনার এবং র্যালি ও ডালের তৈরি খাবারের প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিলো টেকসই আগামীর জন্য ডাল।

কৃষিসচিব এ বছর যেমন আমরা ধানের উৎপাদন না কমিয়েই ২ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর বেশি  জমিতে সরিষা আবাদ বাড়াতে পেরেছি, তেমনি ডালের উৎপাদন বাড়াতেও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। যাতে বছরে ১৩- ১৪ লাখ টন ডাল উৎপাদন করতে পারি, তাতে আমদানি নির্ভরতা অনেকটা হ্রাস পাবে৷

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে বিগত ১৪ বছরে ডালের উৎপাদন প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে বর্তমানে ডাল উৎপাদন হয় প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু ডালের চাহিদা বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। ফলে প্রতিবছর প্রায় ১৩ থেকে ১৪ লাখ মেট্রিক টন ডাল আমদানি করতে হয়। এতে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিপুল জনগোষ্ঠীর পুষ্টিচাহিদা মেটাতে হলে ডালের উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে৷

সেমিনারে বারির ডাল গবেষণা কেন্দ্র জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৪৫ গ্রাম ডালজাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। দেশে মাথাপিছু প্রাপ্যতা ২৮ গ্রাম, আর  মানুষ মাথাপিছু মাত্র ১৭ গ্রাম ডাল খেয়ে থাকে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

সেমিনারে আলোচকেরা বলেন, ক্রমাগতভাবে দেশে আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টিনিরাপত্তার জন্য উচ্চফলনশীল জাতের ডাল ফসল উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ ও ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন। এই শস্য বিন্যাসে ডাল ফসলের আবাদ সম্প্রসারিত করার সুযোগ সীমিত। তবে বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চল, চরাঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চল, উপকূলীয় অঞ্চল, রেল সড়ক ও রাস্তার ধারে এবং বসতবাড়িতে উপযুক্ততা বিবেচনায় ডাল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন মাঠশস্য ও ফল বাগানে (বুল, কলা, পেয়ারা, মাল্টা, আম, লিচু ইত্যাদি) ডাল ফসলকে মিশ্র ফসল ও আত্মফসল হিসেবে চাষের মাধ্যমে ডালের উৎপাদন বৃদ্ধি করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

বারির মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার বলেন, ডাল বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় অনেক আধুনিক উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে। এসব উচ্চফলনশীল জাতের চাষ ও সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ২.৫ টনে উন্নীত করা সম্ভব হবে। তাহলে স্বল্প জমি থেকেই বেশি ডাল উৎপাদিত হবে।

বারির মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকারের সভাপতিত্বে বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, সদস্য পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, ডাল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মো. মহিউদ্দিন,  সাবেক পরিচালক তপন কুমার দে, এসিআইএআরের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর এমজি নিয়োগী, এসিআই এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফএইচ আনসারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।  মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আশুতোষ সরকার।

This post has already been read 1254 times!