Thursday 28th of March 2024
Home / uncategorized / মিসকেসের অংশ-ব্যতীত সম্পূর্ণ নামজারি বাতিল না করার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর

মিসকেসের অংশ-ব্যতীত সম্পূর্ণ নামজারি বাতিল না করার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর

Published at জানুয়ারি ২৮, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাঠ পর্যায়ে ভূমিসেবার দায়িত্বে নিয়োজিতদের ক্রমাগত উন্নয়নে জোর দিয়ে তাদের কাজের যথাযথ মনিটরিং করার জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রতি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী আহবান জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি)  রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৩’-এ ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদানকালে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এই আহবান জানান। এই সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন এবং ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ সহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাভুক্ত দপ্তরসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পুরস্কৃত করা, ভুল করলে সংশোধন ও প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং ক্রমাগত ইচ্ছাপূর্বকভাবে করা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অন্যায় কাজের যথাযথ শাস্তির উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন ভূমিমন্ত্রী। পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে ভূমিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান কোভিড পরিস্থিতির কারণে ভূমি কর্মকর্তাদের রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষণ বন্ধ হলেও আবার তা চালু করা হবে।

প্রসঙ্গত, ভূমিসেবা নিবির মনিটরিংয়ের জন্য ড্যাশবোর্ড ও ভূমি সংশ্লিষ্ট সকলের অভিজ্ঞতা সংরক্ষণের জন্য দাপ্তরিক স্মৃতিকোষ স্থাপন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য বার্তা অ্যাপ চালু এবং ভূমি সেবা গ্রাহকদের ভালো সেবা প্রদানের স্বীকৃতি হিসেবে ভূমিসেবা পুরস্কার চালু করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এছাড়া, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভূমি সেবায় দায়িত্বরতদের দিকনির্দেশনা দিয়ে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন এবং অফিস আদেশ জারি করছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

বিবিধ মামলা নিয়ে যেন ভূমি সেবা গ্রাহককে হয়রানির শিকার না হতে হয় সেজন্য গত ১৯ জানুয়ারি এমনই একটি পরিপত্র জারি করে ভূমি মন্ত্রণালয়। জনগণকে হয়রানিমুক্ত ভূমি সেবা দেওয়াই এই পরিপত্রের লক্ষ্য। পরিপত্রে মিসকেস/বিবিধ কেস সংশ্লিষ্ট অংশ ব্যতীত – সম্পূর্ণ নামজারি কিংবা দাগ হতে সৃষ্টি হওয়া অন্যান্য সকল নামজারি – বাতিল না করার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি)দের (এসিল্যান্ড) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, রিভিও কেসে তামাদি শুনানি গ্রহণ করার পরই কেবল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্যেও এসিল্যান্ডদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৩-এ ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট যেসব প্রস্তাব এসেছে এর মধ্যে বেশিরভাগ (দুই-তৃতীয়াংশের বেশি) কার্যক্রম চলমান আছে কিংবা  ইতোমধ্যে কার্যক্রম গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো ‘ক’ গেজেটভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি ও খাসজমির ডাটাবেজ, কৃষি জমির সুরক্ষা, খাসজমি সংরক্ষণ, এল.এ কন্টিনজেন্সি খাত, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ, সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মামলার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সায়রাত মহাল ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নীতিমালা ও বিধিমালা সংস্কার ও তৈরি, ভূমি ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন সংশ্লিষ্ট।

এছাড়া নিয়োগ ও নতুন পদ সৃষ্টি সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবের মধ্যে কিছু আইনি জটিলতার জন্য আংশিক কার্যক্রম চলমান। যেমন কানুনগো পদে নিয়োগের ব্যাপারে মামলার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পদ যেমন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (প্রাক্তন তহশীলদার), সার্ভেয়ার ইত্যাদি পদে নিয়োগের উদ্যোগ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যান্য ধরণের জনবল যদি প্রয়োজন হয় এবং সে অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয় ডিজিটাল সেবা প্রবর্তনের পাশাপাশি আইন ও বিধি-বিধান সংশোধন, এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নতুন আইনের খসড়া করে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা স্থাপনে জোর দিচ্ছে।

যুক্তিসংগত কারণে কোনও বালুমহাল নির্ধারিত সময়ে ইজারা বন্দোবস্ত প্রদান করা না গেলে উক্ত বালুমহাল বন্দোবস্ত না হওয়া পর্যন্ত খাস আদায়ের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন সংশোধনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে যা খুব দ্রুত সংসদে পাঠানো হবে। আইন প্রণয়ন হলে বিধিমালা সংশোধন করা হবে। এতে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে, ইজারাবিহীন বালু মহালের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা সহজ হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ইজারাবিহীন জলমহালে খাস আদায়ের মাধ্যমে রাজস্ব. আহরণ করা হয়।

এছাড়া, হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০২৩ ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করা হয়েছে। হাট-বাজারের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের দায়ে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে এই বিলটি উঠানো হয়েছে।

নতুন কিংবা সংশোধিত আইন প্রণয়নের জন্য খসড়ার পাইপলাইনে আরও আছে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’, ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন’, ‘ভূমি উন্নয়ন কর আইন’, ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল (সংশোধন) আইন’, ‘ভূমি সংস্কার আইন’ এবং ‘ভূমি ব্যবহারস্বত্ব গ্রহণ আইন’।

This post has already been read 1448 times!