Thursday 25th of April 2024
Home / পরিবেশ ও জলবায়ু / খুলনাঞ্চলে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে মৃত্তিকা সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন

খুলনাঞ্চলে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে মৃত্তিকা সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন

Published at ডিসেম্বর ৬, ২০২২

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): খুলনাঞ্চলে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। মৃত্তিকা সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার স্বাস্থ্যকর মাটির গুরুত্বের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা এবং মৃত্তিকা সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার পক্ষে সমর্থন করার জন্য প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস (World Soil Day) পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়- “মৃত্তিকা: খাদ্যের সূচনা যেখানে”। সকাল ১০.০০টায় বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে একটি র‍্যালীর আয়োজন করা হয়। র‍্যালী শেষে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাট জেলার জেলা প্রশাসক  মোহাম্মদ আজিজুর রহমান এবং সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাট জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আজিজুর রহমান। সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান ও মৃত্তিকা বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জিকেবিএসপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।

দিবসের  মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় মৃত্তিকা বিজ্ঞানী  অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস  বলেন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৮টি জেলার ১৩টি উপজেলার মাটি ও পানি বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত। ১৯৭৩ সালে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল ৮ লক্ষ ৩৩ হাজার হেক্টর। ২০০০ সালে বেড়ে গিয়ে ১০ লক্ষ ৩৩ হাজার হেক্টরে দাড়িয়েছে এবং ২০১০ সালে লবণাক্ততায় আক্রান্ত জমির পরিমাণ ১০ লক্ষ ৫৬ হাজার হেক্টর। লবণাক্ততার কারণে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে কৃষক ভাইয়েরা ফসল আবাদ করতে পারে না। জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ করার ফলে এলাকায় লবণাক্ততা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবার অন্যতম একটি কারণ। লবনাক্ততার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি জমির উর্বরতার মান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। মুখ্য পুষ্টি উপাদান নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও গন্ধক এবং গৌণ পুষ্টি উপাদান দস্তা ও বোরন এর ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬৮,৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অনাবাদি জমিতে পরিণত হচ্ছে। লবণাক্ত এলাকায় ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির জন্য খামার পুকুর প্রযুক্তি, মালচ ব্যবহার ও কলস সেচের মাধ্যমে বিভিন্ন মাদা ফসল এর আবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব। মাটি হলো খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি। সারা পৃথিবীতে মানুষ যে সকল খাবার খায়, তার অন্তত শতকরা ৯৫ ভাগ আসে মাটি হতে। তাই মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ন। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির সুসাস্থ্য বজায় রাখার বিকল্প নেই। তাই আমাদের উচিত মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সুষম মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যাতে মাটির কাংখিত উর্বরতা ধরে রাখা যায় এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। লবণাক্ততা, নদী ভাঙন ইত্যাদি কারণে প্রতি বছর এক দিকে কৃষি জমি যেমন কমে যাচ্ছে অপর দিকে ভেজাল সার ও অপরিকল্পিতভাবে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।

প্রধান অতিথি মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, মৃত্তিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এই সম্পদ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একদিকে মাটির পুষ্টি উপাদানের মাত্রা কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। তিনি আরো বলেন, মাটিকে আমাদের সম্পদে পরিণত করতে হবে। তবেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ । এদেশের মাটিকে সোনার চেয়ে খাঁটি বলা হয় অথচ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে এই মাটি আজ হুমকির সম্মুখীন। তাই আমাদের উচিত মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা যাতে মাটির কাংখিত উর্বরতা ধরে রাখা যায় এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

This post has already been read 1104 times!