শুক্রবার , জুলাই ২৬ ২০২৪

বিশ্ব মন্দায় এবার কাঁচা পাটের দাম নেমেছে অর্ধেকে

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে এবার খুলনাঞ্চলের কাঁচা পাটের চাহিদা কমেছে। পাকিস্তানে পাঠ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি অনাবৃষ্টির কারণে নদীর নোনা পানিতে কাঁচা পাট পঁচানোর ফলে সোনালী আঁশ গুণগত মান হারিয়েছে। এসব কারণেই চাহিদা ও দাম কমেছে। এ মৌসুমে খুলনাঞ্চলের হাটে বাজারে কাঁচা পাট মন প্রতি দুই হাজার পাঁচশ থেকে ২৮শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২০২০ ও ২১ সালে প্রতি মনের দাম ছিল পাঁচ হাজার টাকা।

কাঁচা পাট নিয়ে মৌসুমের শুরুতেই রাজনীতিকরা হৈচৈ বাঁধায়। পাটকলগুলোর উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে এবং কাঁচা পাট বিক্রিতে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনে ২০১০ সালে ১৫ জুলই সরকার কাঁচাপাটের মানভেদে মনপ্রতি এক হাজার দুশ টাকা থেকে এক হাজার আটশ টাকা দাম বেঁধে দেয়। এরপর থেকে বেঁধে দেওয়া দামে পাট বিক্রি হয়নি। আম্পান ও ইয়াসের কারণে বড় ধরণের ধাক্কা খায় দক্ষিণাঞ্চলের পাট ক্ষেত।

২০২০ ও ২১ সালে এক লাফে মন প্রতি দাম বাড়ায় পাঁচ হাজার টাকায়। পাট অধিদপ্তর, খুলনা সূত্র জানান, মোংলা বন্দর দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ছয় কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের ছয় হাজার নয়শ বেল পাট, ২০২০-২১-অর্থ বছরে ৯৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা মূল্যের ৮১ হাজার বেল, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা মূল্যের ৩১ হাজার বেল পাট রপ্তানি হয়। মহামারি করোণার কারণে বিশ্ব বাজারে কাঁচা পাঠ রপ্তানি থমকে যায়। বিগত বছর গুলোতে বেলজিয়াম, পাকিস্তান, চীন, ভারত, নেপাল, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, আইভেরি কোস্ট, এলসালভাদর, রাশিয়া, ফিলিপাইন, ইউকে ও তিউনেশিয়ায় পাট রপ্তানী হয়। এমৌসুমের শুরু থেকেই যুক্তরাস্ট্র, বেলজিয়াম, আইভেরীকোস্ট, এলসালভাদর ও রাশিয়ায় পাট রপ্তানি হয়েছে। গত তিন মাসে পাট রপ্তানি ১০ হাজার বেলের কাছাকাছি। রাশিয়া ও ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশগুলোতে কাঁচা পাটের চাহিদা কমেছে।

পাট অধিদপ্তর, খুলনার মূখ্য পরিচালক সরিজত সরকার তথ্য দিয়েছেন, সাতক্ষীরা জেলায় এক লাখ ৮৯ হাজার বেল, খুলনা জেলায় ২৭ হাজার বেল এবং বাগেরহাট জেলায় ২২ হাজার বেল পাট উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলে কপিলমুনি, আঠারোমাইল, চুকনগর, শৈলদহ বাজার, বড়বুনি, চিতলমারির বড়বুনিয়া, মোল্লাহাট, সাতক্ষীরার বাশদহ, ঝাউডাঙ্গা, তালা, শুভাশিনী, জাতপুর ও পাটকেলঘাটা হাটে তোষা মনপ্রতি চব্বিশ’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ডুমুরিয়ার উপজেলার উপ-সহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা নিলয় মল্লিক জানান, অনাবৃষ্টির কারণে নদীর নোনা পানি দিয়ে পাট পঁচানোর ফলে সোনালী আঁশ গুণগত মান হারিয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা গ্রামের চাষি উত্তম কুমার জানান, স্থানীয় হাটে-বাজারে কাঁচা পাট মনপ্রতি দুই হাজার পাঁচশ টাকা থেকে ২৮শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষি শ্রমিকের মুজুরি বেশী, সারের মূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। স্বল্প দাম হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ হরিয়েছে।

রপ্তানীকারকদের সূত্র জানিয়েছেন, করোণা মহামারি, আম্পান ও ইয়াসের কারণে ২০২০ ও ২১ অর্থবছরে কাঁচা পাটের উৎপাদন কম ছিল। বেসরকারি পাটকলগুলোর চাহিদা বেশি থাকায় দাম বাড়ে। সেকারণেই প্রতি মানের মূল্য পাঁচ হাজার টাকা ছিল। উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়। পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশে চাহিদা কম এবং অনাবৃষ্টির কারণে নোনাপানিতে পাট পঁচানোর ফলে গুণগত মান নষ্ট হওয়ায় দাম অর্ধেকে নেমেছে।

This post has already been read 2711 times!

Check Also

পাটখড়ির চারকল থেকে প্রতি বছর দেশের রপ্তানি আয় ১০০-১৫০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাট গবেষণার বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক মানের জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন। পাটখড়িকে আমাদের উদ্যেক্তারা গোটা বিশ্বব্যাপি …