বিভিন্ন সময় সার ফসল উৎপাদনের জন্য যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি সারের অতিরিক্ত ব্যবহার ফসল, মাটি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সারের অতিরিক্ত ব্যবহারে ফসল উৎপাদনের খরচ ও বৃদ্ধি পায়।
- পরিমিত সার ব্যবহারে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। ফলে বালাইনাশক কম লাগে।
- অধিক ইউরিয়া (N) ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন কখনো কখনো বৃদ্ধি পেলেও জমির উর্বরতা কমে যায়। নাইট্রোজেন বাতাসে মিশে পরিবেশ দূষণ করে। আবার পানিতে মিশে মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।
- অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ব্যবহারে গাছের কোষপ্রাচীর পাতলা হয়ে যায়। ফলে গাছের কাঠামোগত শক্তি কমে যায়। গাছের কান্ড স্বাভাবিকের চেয়ে লম্বা ও নরম হয়ে যায় এবং কান্ডের চেয়ে পাতা বেশি ভারী হয়। ফলে গাছ সহজেই হেলে পড়ে।
- নাইট্রোজেন বেশি ব্যবহারে মাটিতে বৌরন, দস্তা ও কপারের ঘাটতি হয়।
- টিএসপি/ ডিএপি (P) সার অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ফসলের বৃদ্ধি কমে যায় ও আগাম পরিপক্কতা দেখা যায়। অল্প মাটিতে ফসফেট আটকে যায় (Fixation) বিধায় গাছের কোন কাজেই আসেনা। বেশি ফসফেট জাতীয় সার (P) ব্যবহার করলে নাইট্রোজেন, আয়রন, জিংক , কপার ও ম্যা্ানিজ এর অভাব মাটিতে দেখা দেয়।
- এমওপি/ এসওপি পেটাশিয়াম- K) সার অতিরিক্ত ব্যবহার করলে মাটির ক্যালসিয়াম ও বোরন শুষে নেয় এবং পানি নিঃসরণের হার কমে যায়। গাছের বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে হাস পায়।
- জিপসাম সার (Ca, S সমৃদ্ধ) অতিরিক্ত ব্যবহার করলে শিকড়ের বৃদ্ধি কমে যায়। ফলে গাছের শারীরবৃত্তিয কার্যক্রম কমে যায়।
- জিংক সালফেট (Zn) অতিরিক্ত ব্যবহারে মাটিতে বিষক্রিয়া হয়, গাছের আমীষ উৎপাদন ব্যহত হয়।
- বোরণের অতিরিক্ত ব্যবহারে কচিপাতা ও ডগা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ফলন কম হয়।
- অম্লীয় মাটিতে চুন বেশি ব্যবহার করলে মাটিতে থাকা জিংক, বোরন, আয়রন, কপার ও ম্যাঙ্গানিজের অভাব হতে পারে।
করণীয়
- জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। খামার/গৃহস্থালীন আবর্জনা, উচ্ছিস্ট পদার্থ ইত্যাদি দিয়ে বিনা খরচে জৈব সার উৎপাদন করা যায়।
- ইউরিয়া সার প্রতি ফসলেই পূর্ণমাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়। রবি মৌসুমে (ক) [TSP/DAP প্রয়োগ করলে পরবর্তী মৌসুমে ৩০-৫০% কম লাগে (খ) এমওপি পরবর্তী মৌসুমে ৩০-৪০% কম লাগে (গ) জিপসাম পরবর্তী ফসলে ভিজা জমিতে পূর্ণমাত্রায় দিতে হয় এবং শুকনা জমিতে ৫০% দিলেই চলে। (ঘ) জিংক সার পরবর্তী মৌসুমে অর্ধেক দিলেই চলে (ঙ) বোরন বছরে ১ বার দিলেই চলে।
- জমিতে একবার চুন ব্যবহারের পর পরের ১ বছরে চুন ব্যবহার করতে হয় না।–
- সুষম মাত্রায় পরিমিত পরিমাণ সার ব্যবহারের জন্য মাটি পরীক্ষা করে/ অনলাইনে সার সুপারিশ নির্দেশনা মেনে সার দিন।
আপনার ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার (এসএএও) অথবা নিকটস্থ উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করুন। অর্থ বীচান, জমি ও ফসল নিরাপদ রাখুন।