Friday 29th of March 2024
Home / পরিবেশ ও জলবায়ু / উপূলীয় শ্যামনগরের দুর্গাবাটি ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ শুরু

উপূলীয় শ্যামনগরের দুর্গাবাটি ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ শুরু

Published at জুলাই ১৯, ২০২২

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) :  পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাব কমায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটি এলাকার ভেড়িবাঁধের ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয় বোর্ড (পাউবো)। গতকাল সোমবার সকাল থেকে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক পাউবো’র নিয়োগকৃত ঠিকাদারের তত্ত্বাবধানে এই রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে। ঠিকাদারের কাজে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এদিকে ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে খোলপেটুয়া নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভাঙন পয়েন্টের বিস্তৃতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচশ’ফুটে। নদীর পানির স্রোতে ভেসে গেছে ৫ হাজারেরও অধিক মৎস্য ঘের ও কাঁকড়ার খামার। এতে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে ওই এলাকার মাছ চাষি ও কাঁকড়া খামারিদের। আগামী আমাবস্যার জোয়ারের আগে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করতে না পারলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম বলেন, পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাব কমায় সোমবার থেকে দুর্গাবাটির ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োগকৃত ঠিকাদার মোশারফ হোসেন মুসা। আমরা পরিকল্পনা দিয়েছি ও ঠিকাদারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি। কিন্তু জোয়ার-ভাটা খেলায় ইতিমধ্যে ভাঙ্গন পয়েন্টের বিস্তৃতি ৫০০ ফুট ছাড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, সোমবার প্রায় ৫০০ শ্রমকি দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেছেন। আজ এক হাজার শ্রমিক কাজে নিয়োগ করা হবে। একদিনে প্রায় ৩০০ ফুটের মত বাঁশের পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। পাইলিংয়ের পাশাপাশি সেখানে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে বুধবার নাগাদ ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হবে। তবে একই সাথে নির্ধারিত ডিজাইনে রিং বাঁধের উপর দিয়ে বেড়ি নির্মাণের কাজও শেষ হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগর অঞ্চলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, খোলপেটুয়া নদীর চর বসে যাওয়ার কারণে এই বাঁধ ধ্বসে পড়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক কাজের তদারকি করছি। সোমবার সকাল থেকে বাঁশ পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। দূর্গাবাটিতে রিংবাঁধ নির্মাণের জন্য ১৫ হাজার জিওব্যাগ, ১লাখ সিনথেটিক ব্যাগ, পর্যাপ্ত পরিমাণে বাঁশ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৫ হাজারেরও অধিক মাছের ঘের ও কাঁকড়া খামার। এ সমস্ত ঘের ও খামারে সাধারণ চিংড়ি, কাঁকড়া, সাদা মাছসহ মাছের পোনা চাষ হতো। ধারণা করছি সব মিলিয়ে আনুসঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতি প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এসব চাষিদের তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তালিকা প্রস্তুত শেষ হলে তালিকাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। জেলা প্রশাসক আশ্বাস্ত করেছেন তিনি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করবেন।

প্রসঙ্গত, খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-১ এর আওতাধীন ৫নং পোল্ডারের শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দুর্গাবাটি এলাকায় ভেড়িবাঁধের ১৫০-১৬০ ফুট অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে ভাঙন পয়েন্ট দিয়ে নদীর পানি ঢুকে প্রথমে ওই ইউনিয়নের চারটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নদীতে ফের জোয়ার শুরু হলে পশ্চিম পোড়াকাটলা, পশ্চিম ও পূর্ব দুর্গাবাটি, আড়পাঙ্গাশিয়া, বুড়িগোয়ালিনীর আংশিকসহ আরো কয়েকটি গ্রামে পানি ঢোকে। শুক্রবার ও শনিবার দিনভর চেষ্টা করে ভাঙ্গন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় শনিবার রাত পর্যন্ত বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মোট ১৩ টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল খুলনার প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম বলেন, দুর্গাবাটি এলাকায় পাউবো’র ভেড়িবাঁধ হঠাৎ ধ্বসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। যে কারণে বাঁধটি সংষ্কার করার কোন সুযোগ ছিল না। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধ মেরামতের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু পূর্ণিমার তীব্র জোয়ারের কারণে গত তিন দিনে ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি ডিজাইন মাফিক সম্পূর্ণ ভেড়িবাঁধ নির্মাণে একজন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ ও পর্যাপ্ত বাঁশ দিয়ে প্রাথমিক অবস্থায় রিং বাঁধ নির্মাণের কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। পাইলিংয়ের কাজ প্রায় ৭০ ভাগ শেষ হওয়ায় এখন আমাদের আয়ত্তে¡ চলে এসেছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হবে।

This post has already been read 1538 times!