Tuesday 19th of March 2024
Home / আঞ্চলিক কৃষি / দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চেলের সার মাটি ব্যবস্থাপনা ও  প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি 

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চেলের সার মাটি ব্যবস্থাপনা ও  প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি 

Published at মার্চ ২৪, ২০২২

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প (এসআরডিআই অংগ) দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চেলের ৫ টি জেলায় কৃষির উন্নয়েনর জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে বিগত বছরে কৃষকের মাঠে সুষম সার ব্যবহারের উপকারিতা, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ, লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রায় ১১৭৫টি গবেষণা প্লট স্থাপন করা হয়। গবেষণা প্লটের ফলাফলে দেখা যায়, সুষম সার ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট প্লটে ধান জাতীয় শস্যের ফলন শতকরা ২০-২৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়। সবজি জাতীয় ফসলের ফলন শতকরা ১৫-২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, প্রকল্পের একটি বিশেষ অর্জন হলো, লবণাক্ত এলাকায় ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতিতে ভিজা মাটিতে ভুট্টা লাগিয়ে ভুট্টার চাষ।

এই পদ্ধতিতে ভুট্টা চাষ করতে পারলে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির পূর্বেই ঘরে ভুট্টা উত্তোলন করা সম্ভব। এছাড়া, গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চেলের লবণাক্ত জমিতে ভুট্টা চাষের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। ভুট্টা চাষের গবেষণার ফলাফল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ছড়িয়ে প্রকল্প এলাকায় ছরিয়ে পড়েছে। এছাড়া, বিগত বছরের প্রকল্পের আরেকটি সফলতা হলো, সার ও মাটির ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঘেরের পাড়ে বর্ষাকালীন (অসময়ের) তরমুজের প্রযুক্তি উদ্ভাবন।

প্রযুক্তিতে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার দিবাকর মন্ডলের ঘেরের পাড়ের মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাত্র দেড় বিঘা জমির ঘেরের পাড়ের মাটিতে দুই লক্ষাধিক টাকার তরমুজ বিক্রি করা হয়। এই প্রযুক্তিতে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চাঁদগড় গ্রামের কৃষক জয়ন্ত বিশ্বাসের এক বিঘা জমির ঘেরের পাড়ে প্রায় এক লক্ষাধিক টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। এছাড়া, একই পদ্ধতিতে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বৃত্তি ভুলবাড়িয়া গ্রামে বেশ কয়েকজন কৃষকের ঘেরের পাড়ের মাটি ব্যবস্থাপনা ও সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যেমে শিমের গবেষণা প্লট স্থাপন করা হয়। এতে কৃষকগণ বিগত বছরের থেকে প্রায় ২৫% ফলন বেশি পেয়েছেন।

গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের (এসআরডিআই অংগ )র প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন,কৃষি উন্নয়ন এ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য দিক হলো, বর্ণিত ৫টি জেলার সকল উপজেলার সকল ইউনিয়নের মাটি পরীক্ষা করে ইউনিয়ন সহায়িকা প্রস্তুত করা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অর্থায়নে বিগত বছরে প্রায় ১২১টি ইউনিয়নের মাটি পরীক্ষা করে ইউনিয়ন সহায়িকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ইউনিয়ন সহায়িকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই অতি সহজে তার জমির সার সুপারিশ করে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে পারছেন। এছাড়া, প্রকল্পের অর্থায়নে, ৫ জেলার সকল উপজেলার সকল নদী ও বড় বড় খালের পানির বছরব্যাপী লবণাক্ততা পরীক্ষা কার্যক্রম চলছে। যে তথ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এই তথ্য ব্যবহার কৃষকরা সহজেই তার ক্ষেতের পানির সেচের উপযোগিতা নির্ণয় করতে পারছে। ফলে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হতে রক্ষা পাচ্ছে।

প্রকল্পের অর্থায়নের ইতোমধ্যে প্রায় ১২০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে সুষম সার ব্যবহার, ভেজাল সার সনাক্তকরণ, ইউনিয়ন সহায়িকা ও উপজেলা নির্দেশিকা ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এতে মাঠ পর্যায়ে সুষম সার ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া, প্রকল্পের অর্থায়নে প্রায় ১৫,০০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এতে করে সুষম সার ব্যবহার করে ফসলের ফলন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্পের অর্থায়নে ৫ জেলায় প্রায় ৫,৫০০ কৃষককে সার সুপারিশ কার্ড প্রদান করা হয়েছে। এতে করে সুষম সার ব্যবহার করে কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন।

This post has already been read 1989 times!