Tuesday 19th of March 2024
Home / পোলট্রি / ডিম খাওয়ার কোন বয়স নেই, দিনে ২টি ডিম খাওয়ার পরামর্শ

ডিম খাওয়ার কোন বয়স নেই, দিনে ২টি ডিম খাওয়ার পরামর্শ

Published at অক্টোবর ৮, ২০২১

বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিশুদের ডিম খাওয়াচ্ছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, সচিব এবং বিপিআইসিসি নেতৃবৃন্দ।

নিজস্ব প্রতিবেদক:  প্রতিদিন ডিম খাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই -এ স্লোগানে আজ  সারাদেশে উদযাপিত হলো বিশ্ব ডিম দিবস। পুষ্টিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিম খাওয়ার কোন বয়স নেই, ডিমের জিংক ও ভিটামিন ডি কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। ডিম ইমিউনিটি বাড়ায়, হার্ট সুস্থ রাখে, টাইপ-২ ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমায়, ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। সুস্থ-সবল থাকতে তাঁরা বেশি বেশি ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি), ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা যৌথভাবে এবছর দেশব্যাপী ডিম দিবসের কর্মসূচী পালন করে- যার মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমসহ দুস্থদের মাঝে ডিম বিতরণ, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ, ইত্যাদি।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এম পি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ। সম্মাননীয় অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. রবার্ট ডি. সিম্পসন। সভাপতিত্ব করেন বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমান।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এম পি বলেন, পুষ্টিসমৃদ্ধ আমিষের চাহিদা পূরণ করতেই হবে কারন অপুষ্টির শিকার মা-বাবা থেকে সুস্থ ও মেধাবি শিশু পাওয়া সম্ভব নয়। দিনে ২টি করে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্তের কারনে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প আজ বার্ড-ফ্লু’র প্রভাব থেকে অনেকটাই মুক্ত। তবে বার্ড-ফ্লু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ানো হয়েছে। করোনা মহামারিকালীন সময়েও মিথ্যা খবর ছড়িয়ে বলা হয়েছে- ডিম, দুধ, মাংসের মাধ্যমে করোনা ছড়ায়। আমরা বলেছি, বিষয়টা সম্পূর্ণ উল্টো। জনসচেতনতা বাড়াতে আমাকেও এক পর্যায়ে গণমাধ্যমের সামনে সচেতনতামূলক ভিডিওতে অংশ নিতে হয়েছে। এতে মানুষের বিভ্রান্তি অনেকটাই কেটেছে। অনুষ্ঠান স্থলে দুটি শিশুকে সিদ্ধ ডিম খাওয়ানোর মাধ্যমে মন্ত্রী এবং সচিব মহোদয় ডিম দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। শিশুরা ‘প্রতিদিন ডিম খাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই’ বলে স্লোগান দেয়।

দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন- প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে রাস্তার পাশে বসা মুচি পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের জন্য সাশ্রয়ীমূল্যে ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ করছে পোল্ট্রি শিল্প। ডিমের দাম বৃদ্ধিজনিত সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও জানান তিনি। বিএসটিআই মান সনদ বিষয়ক ইস্যুটি দ্বৈত প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি করছে তাই এটির সমাধা হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী।

প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, সয়াবিন মিল নিয়ে দেশে যেন একটা ব্লেম গেম চলছে। গতবছর থেকে সয়াকেক এর আমদানি শুল্ক শূণ্য করা হয়েছে কিন্তু তারপরও ৩৮ টাকার সয়াকেক এখন ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাহলে এ সুবিধা দিয়ে লাভ কী হলো? বেশি ডিম দিতে সক্ষম দেশি জাতের মুরগি উদ্ভাবন করার তাগাদা দেন তিনি। রওনক মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারির কারনে সাধারন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। তাই সাশ্রয়ী মূল্যে ডিমের যোগান নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা চান তিনি।

এফএও এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. রবার্ট ডি. সিম্পসন বলেন, ফিডের উচ্চমূল্য, খামার পর্যায়ে ডিমের কম দাম ও রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাবের কারনে বাংলাদেশের এগ ইন্ডাষ্ট্রি অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। তিনি জানান, ছোট ও মাঝারি পোল্ট্রি খামারের জন্য একটি টেকসই মডেল তৈরি, পোল্ট্রি হ্যাচারির জন্য গাইডলাইন ও লাইভস্টক এক্সটেনশন ম্যানুয়াল তৈরির কাজ করছে এফএও।

বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘মিড ডে মিল’ -এ খিচুরির ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জটিলতার কারনে উদ্যোগটি থেমে গেছে কিন্তু সিদ্ধ ডিম দেয়ার ক্ষেত্রে সে ধরনের কোন জটিলতা নাই কারণ ডিম সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান নিজেই ডিম সিদ্ধ ও সরবরাহ করা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করতে পারবে। অন্যদিকে ডিমের খোসা রিসাইক্লিং করে পুনরায় পোল্ট্রি শিল্পে ব্যবহার করা যাবে। মসিউর বলেন- পোশাক শ্রমিকরা প্রচুর ডিম খায়। প্রতিষ্ঠানের মালিকরা যদি তাদেরকে টিফিন হিসেবে ডিম খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন তবে তাঁদের স্বাস্থ্য ও কর্মশক্তি উন্নত হবে। সরকারি ত্রাণে ডিম কে অন্তর্ভূক্ত করারও অনুরোধ জানান মসিউর।

বিপিআইসিসি’র সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, গত দশকের তুলনায় এই দশকে সারাবিশ্বে ডিমের উৎপাদন প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১২,৪৬৭ কোটি টাকার ডিম কেন্দ্রিক বাণিজ্য হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ শেখ আজিজুর রহমান বলেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫৭৪.২৪ কোটি। ২০১৯-২০ সালে এ পরিমান ১৭৩৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে গত দশ বছরে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঢাকায় আয়োজিত ডিম দিবসের আলোচনা সভাটি ফেসবুক লাইভ এবং জুম অ্যাপসের মাধ্যমের সম্প্রচারিত হয়। সারাদেশের বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও সাধারন ভোক্তারা ভাচুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

This post has already been read 3133 times!