Friday 29th of March 2024
Home / পোলট্রি / হতাশায় পোলট্রি শিল্প : দুই মাসে শুধু পোর্ট ড্যামারেজ ক্ষতি ৪০ কোটি টাকা

হতাশায় পোলট্রি শিল্প : দুই মাসে শুধু পোর্ট ড্যামারেজ ক্ষতি ৪০ কোটি টাকা

Published at আগস্ট ২৬, ২০১৯

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: বিগত প্রায় দুমাস ধরে বন্দরে পণ্য খালাস জটিলতায় আছে দেশের পোলট্রি খাত। এর ফলে গত দুই মাসে সেক্টরটিকে শুধুমাত্র বন্দরজনিত জরিমানা (পোর্ট ড্যামারেজ) গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত প্রায় ৪০ কোটি টাকা। সঠিক সময় উৎপাদনে যেতে না পারা, অতি প্রয়োজনীয় কাঁচামাল স্থানীয় বাজার থেকে অতিরিক্ত দামে ক্রয় করা ইত্যাদি নানা বিষয় যোগ করলে লোকসানের হিসেব আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে পোলট্রি সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২১ জুলাই নারিশ ফিড মিলের ১২টি কন্টেইনারে আসা ৩০৮.৮৩২ টন ডিডিজিএস চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে এবং সেটি ছাড়করণ করা হয় আগস্ট। এতে মোট সময় লেগেছে ১৭ দিন। ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার শত ২৪ টাকা এলসি মূল্যের আমদানিকৃত পণ্যে অর্থদন্ড দিতে হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ৭৫ হাজার শত ৮৮ টাকা।

অন্যদিকে প্যারাগন ফিড লি. নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠানের কন্টেইনারে ২০৯.৭০৬ টন এবং অপর ১৫ কন্টেইনারে ৩৯২.৩৬৫ টন ডিডিজিএস চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে যথাক্রমে জুলাই জুলাই তারিখে। এরপর তা চুড়ান্ত অ্যাসেসমেন্ট ছাড়করণ করা হয় ২৯ ৩১ জুলাই। অর্থাৎ মোট সময় লেগেছে ২৮ থেকে ৩০ দিন। মোট ২৩টি কন্টেইনারে আসা কোটি ৩২ লাখ ৩৩ হাজর শত ৮৩ টাকার (এলসি মূল্য) পণ্যে অর্থদন্ড পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৩শত ৪১ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ধরনের কনসাইনমেন্ট ছাড় করাতে এক সপ্তাহ সময়ও লাগা উচিত নয়।

এছাড়াও এসিআই গোদরেজ নামের একটি কোম্পানীকে দেরীতে মাল খালাসের জন্য বন্দর বিলম্ব মাশুল গুনতে হয়েছে ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ৬শ৪৬ টাকা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা স্টেরিলাইজড ফিস মিল ছাড় করাতে কোম্পানিটির সময় লেগেছে ৩৫ দিন।

উপরে মাত্র ৩টি কোম্পানির বন্দরে বিলম্ব মাশুলজনিত ক্ষতির হিসেব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে নিবন্ধিত অনিবন্বিত মিলে দেশে প্রায় সাড়ে তিনশ বেশি ফিড আছে। সুতরাং সার্বিকভাবে হিসেব করলে ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে বলে সেক্টর সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) –এর সভাপতি মসিউর রহমান এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত কাঁচামাল আটকে যাওয়াতে পোর্ট ড্যামারেজ এর কারণে বন্দর মাশুল খরচ প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। সময়মতো কাঁচামাল না পাওয়াতে বিকল্প কাঁচামাল অধিক দামে ক্রয় করতে হয়েছে। ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে যার সরাসরি প্রভাব ভোক্তার ওপর পড়ছে।

জটিলতা নিরসনে বিপিআইসিসি পক্ষ থেকে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গত বুধবার (২১ আগস্ট) এনবিআর চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কমিশনারের সাথে দেখা করে আমাদের সমস্যাগুলোর কথা জানিয়েছি। তাঁরা আমাদের আশ^স্ত করেছেন উল্লেখিত জটিলতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন। তাঁরা আশ^স্ত করেছিলেন, পণ্য খালাসে এখন থেকে সর্বোচ্চ ১০দিন সময় লাগবে। আমরা ইতিমধ্যে তাঁদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি।

ঘটনার সূত্রপাত মূলত গুটিকয়েক অসাধু ট্রেডারফিস ফিডনামে এমবিএম আমদানি করে এবং সেগুলা চট্টগ্রাম বন্দরে ধরা পড়ে। চট্টগ্রাম খালাস হওয়ার সময় এসব পণ্যের বেশ কয়েকটি চালান ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে চট্টগ্রাম বন্দর কাস্টমস্ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে কয়েক ধাপের পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়া পোলট্রি, মৎস্য গবাদিপশু খাতের কোন পণ্যই ছাড় করা হচ্ছেনা। ফলে বিপাকে পড়েছেন ফিড উৎপাদন বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ২৩ জুন তারিখে ইস্যুকৃত একটি চিঠির মাধ্যমে ফিস মিল ডিডিজিএস আমদানীর ক্ষেত্রে সকল চালান চট্টগ্রামের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে নমুনা সংগ্রহপূর্বক পিআরটিসি ল্যাবে পরীক্ষা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। উক্ত চিঠিতে পরীক্ষায় যে বিষয়গুলো নিরীক্ষার কথা বলা হয়েছে তা হলো: শূকরের উপজাতের উপস্থিতি, মাইক্রোবায়োলজিকাল পরীক্ষা, ভারী ধাতুর উপস্থিতি ক্ষতিকারক এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি। অথচ কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ উক্ত পরীক্ষা সমূহের অতিরিক্ত বোভাইনের উপস্থিতিএবং Proximatic analysis করার শর্তও যুক্ত করে দিচ্ছেন। মূলত: এরপর থেকেই ল্যাব পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে এবং পণ্য খালাস করাতে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে।

ব্যাপারে মসিউর রহমান বলেন, নিরাপদ পোলট্রি পণ্য উৎপাদনের নিশ্চয়তা দিতে বিপিআইসিসি পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিপিআইসিসি উদ্যোগে সরকারের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বন্দরে একটি অত্যাধুনিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে যার সাথে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংযুক্ত থাকবে। আশা করি, তখন আমদানিকৃত পণ্য পরীক্ষানিরীক্ষা খালাসের সময় আরো বাঁচবে।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব) –এর সভাপতি এহহেশাম বি. শাহজাহান বলেন, পণ্যের ল্যাব পরীক্ষা করাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে পরীক্ষা, অ্যাসেসমেন্ট, রিঅ্যাসেসমেন্ট ইত্যাদির নামে যে সময়ক্ষেপন করা হচ্ছে এবং সেজন্য যে অর্থদন্ড দিতে হচ্ছে তার দায় আমদানিকারকদের কাঁধে আসার যৌক্তিকতা কোথায়? সেক্ষেত্রে যদি সরকারি কাজের জটিলতার কারণে পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রীতা ঘটে থাকে তবে সে দায় থেকে আমদানিকারকদের রেহাই দিতে হবে। এমনকি পণ্যের গুণগতমানের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। ল্যাব টেস্টে দীর্ঘসূত্রীতার অবসানে প্রয়োজনে একাধিক ল্যাব বা ইউনিট প্রতিষ্ঠা; এমনকি বেসকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব প্রতিষ্ঠায় সরকারি অনুমতিরও দাবি জানান তিনি।

জানা গেছে, কোরবানীর ঈদের ছুটি হিসেবে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ল্যাব টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রাখার নোটিশ ইস্যু করেছে পোল্ট্রি রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিআরটিসি) সরকারি সিদ্ধান্তে ল্যাব বন্ধ থাকলেও এই ১৪ দিনসহ পরীক্ষার জন্য আনুমানিক আরও প্রায় ২০  থেকে ২৫ দিন, অর্থাৎ মোট প্রায় ৩৪ থেকে ৩৯ দিনের বন্দর ডেমারেজ ঠিকই পরিশোধ করতে হবে। নিয়ে চরম হতাশা বিরাজ করছে পশু খাদ্য প্রস্তুতকারক কাঁচামাল আমদানিকারকদের মাঝে। বিষয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান।

This post has already been read 6042 times!