Friday 19th of April 2024
Home / পোলট্রি / নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনে শিল্প ও শিক্ষার সাথে প্রান্তিক খামারিদের সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে

নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনে শিল্প ও শিক্ষার সাথে প্রান্তিক খামারিদের সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে

Published at জুলাই ৬, ২০১৯

বিপিআইসিসি, এজিসিও-জিএসআই, প্যারাগন গ্রুপ ও পোল্ট্রি কনসালটেন্টের সহায়তায় বাকৃবিতে অটোমেটেড কমার্শিয়াল পোল্ট্রি হাউস স্থাপন বাকৃবি (ময়মনসিংহ) : স্বাস্থ্যবান জাতি গড়তে হলে হেলদি ফুড বা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দরকার। হেলদি ফুড তৈরি করতে হলে হেলদি ফিডের বিকল্প নেই। নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনের ক্ষেত্রে তিনি শিল্প ও শিক্ষার সাথে প্রান্তিক খামারিদের সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে।

শনিবার (৬ জুলাই) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির দুটি অটোমেটেড হাউসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান।

তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবার আগে শিক্ষার আধুনিকায়ন প্রয়োজন। শুধুমাত্র সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। শিল্পপতি ও অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে সরকারের ওপর চাপ কমবে; দিন বদলের সাথে সাথে বদলে যাবে দেশ। উপাচার্য বলেন, দেশের জন্য মেধাবি শিক্ষার্থী দরকার। সেজন্য পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষার্থীদের এমনভাবে তৈরি হতে হবে যেন তারা দেশে ও বিদেশে নিজেদের যোগ্যতর অবস্থান তৈরি করতে পারে। উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জসিম উদ্দিন খান বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে বাকৃবি। উন্নত দেশগুলোতে বড় বড় গবেষণার ফান্ড আসে বেসরকারি পর্যায় থেকে। অত্যাধুনিক পোল্ট্রি হাউস নির্মাণের ফলে বর্তমান ইন্টার্নরা পোল্ট্রি রেয়ারিং, হ্যাচিং, ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি বিষয়ে বাস্তবসম্মত জ্ঞান লাভ করতে পারবে বলে মন্তব্য করেন ড. খান। অ্যানিমেল হাসবেন্ডারি ফ্যাকাল্টির ডীন প্রফেসর ড. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার আধুনিকায়ন করতে না পারলে আমাদের পিছিয়ে পড়তে হবে। পোল্ট্রি হাউস নির্মাণে সহায়তা করার জন্য তিনি বিপিআইসিসি, এজিসিও-জিএসআই, প্যারাগন গ্রুপ ও পোল্ট্রি কনসালটেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস কে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, এভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়তে থাকলে দেশে ও বিদেশে বাকৃবির র‌্যাংকিং আরো বাড়বে। পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, অত্যন্ত ইতিবাচক একটি অগ্রগতি সূচিত হলো আজ। শিক্ষার ক্ষেত্রে, ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসে যে মাইলফলকটি আজ স্থাপন করলেন তা আগামী দিনের পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। ব্যবহারিক জ্ঞানের যে অভাব ছিল তা এবার পূর্ণ হবে এবং পেশাগত জীবনে বাকৃবির পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আরো ভালো করবে বলে তিনি মনে করেন।

বিপিআইসিসি’র সভাপতি এবং প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক জ্ঞান লাভ করলেও ব্যবহারিক জ্ঞানের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। অনেকে ভালো রেজাল্ট করেও চাকুরির বাজারে হোঁচট খাচ্ছেন। অনেকে বলেন, তারা চাকুরি পাচ্ছেন না; আর আমরা বলি চাকুরি দিতে চাই কিন্তু দক্ষ মানুষ পাচ্ছিনা। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ, অটোমেশনের যুগ। আপগ্রেড থাকতে না পারলে পিছিয়ে পড়তে হবে। আগামীতে আরও সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। ভেটেরিনারি বিভাগের সাথে একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। AGCO-GSI (Malaysia), Sdn, Bhd. -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. গোহ্ ব্যাক ইয়ান বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্যই তাঁদের এ প্রয়াস। কৃষি খাতের উন্নয়নে আগামীতে আরো সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

পোল্ট্রি কনসালট্যান্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস – এর প্রধান নির্বাহী মো. রফিকুল হক বলেন, শিল্পের দুঃসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে শিল্পদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি। ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, যুগের সাথে তাল মেলাতে হলে গ্র্যাজুয়েটদের কে প্রয়োজনে রিএডুকেট করতে হবে, প্রাইভেট সেক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে লিংকেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশীয়ভাবে পোল্ট্রি’র ভ্যাকসিন আবিষ্কারে এগিয়ে আসার জন্য তিনি গবেষকদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পোল্ট্রি খাতে যে হারে কর ও শুল্ক বাড়ছে তাতে আমাদের কমপিটিভনেস কমে যাচ্ছে। শিক্ষা, গবেষণা ও পলিসি ফর্মুলেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশে থাকার আহ্বান জানান শাহরিয়ার। ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রকিবুর রহমান টুটুল বলেন, জীবাণু সংক্রমণের কারণে পোল্ট্রি পালন দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই আগামীতে জীব-নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা আরো বাড়বে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাকৃবি’র অনুকরনে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান বলেন, শুধু ব্যবসা করলেই হবেনা সামাজিকভাবে আমাদের সকলকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। পোল্ট্রি খাতে বর্তমানে দুঃসময় চলছে, এ অবস্থার উত্তোরনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয় “অটোমেটেড পোল্ট্রি কমার্শিয়াল হাউস” প্রকল্পের জন্য ব্যায়িত অর্থের পরিমান প্রায় ২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় ১০০ ফিট X ৪০ ফিট আকারের একটি ব্রয়লার হাউস এবং ১০০ ফিট X ৩০ ফিট আকারের অপর একটি লেয়ার হাউস স্থাপন করা হয়। এ প্রকল্পে জমি ও প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাকৃবি’র পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগ। ওয়েল ইকুইপড্ ভেনটিলেটেড অটোমেটিক প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড কমার্শিয়াল হাউস ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে এজিসিও-জিএসআই (মালয়েশিয়া)। পোল্ট্রি হাউসের কেইজ ও ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করেছে প্যারাগন গ্রুপ। যন্ত্রাংশ পরিবহন ও ইনস্টলেশন খরচ বহন করেছে পোল্ট্রি কনসালটেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস এবং সিভিল ওয়ার্কের যাবতীয় খরচ বহন ও সমন্বয়কের কাজ করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- প্রফেসর এস.ডি চৌধুরি, ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আলী ইমাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়েজুর রহমান ফয়েজ, কোষাধ্যক্ষ এসএমএফবি আব্দুস সবুর ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান; অলটেক বাংলাদেশের কান্ট্রি চীফ সাইফুল ইসলাম, প্রমুখ। অনুষ্ঠান চলাকালে একটি সাপ্লিমেন্টারি এম.ও.ইউ স্বাক্ষরিত হয়।

বিপিআইসিসি, প্যারাগন গ্রুপ, এজিসিও-জিএসআই এবং পোল্ট্রি কনসালটেন্ট এন্ড ডেভেপমেন্ট সার্ভিসেস -এর প্রতিনিধিবৃন্দের হাতে সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট তুলে দেন বাকৃবি উপাচার্য্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে নবনির্মিত পোল্ট্রি হাউস পরিদর্শন করেন বাকৃবি উপাচার্য্য।

This post has already been read 2400 times!