Thursday 28th of March 2024
Home / খাদ্য-পুষ্টি-স্বাস্থ্য /  দেশে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় বছরে খরচ হয় ১১ হাজার কোটি টাকা

 দেশে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় বছরে খরচ হয় ১১ হাজার কোটি টাকা

Published at মার্চ ৪, ২০১৯

চট্টগ্রাম সংবাদাতা: দেশে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ বছরে খরচ হয় ১১ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ল্যানচেট –এ এমন একটি তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

উক্ত জার্নালের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬০ ভাগ হয় অসংক্রামক (হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার) রোগে। তামাক  ব্যবহার অসংক্রামক রোগের মূল কারণ। ২০১৩ সালে ১ লাখ ৭৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় স্ট্রোকে, ১ লাখ ৬ হাজার মানুষ হার্ট অ্যাটাকে, ২৮ হাজার মানুষ উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগে মারা যায়। দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশই তরুণ অর্থাৎ ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৬ লাখ। ২০৬১ সালের মধ্যে দেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বর্তমানের ৫ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ২০১১ সালে যে সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১২ লক্ষ তা ২০৬১ সালে দাড়াবে আনুমাকি ৫ কোটি ৫৭ লক্ষ।

তরুণ সমাজে যদি অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে না পারে তাহলে আগামী দিনগুলিতে প্রবীণদের মাঝে ভয়াবহ অবস্থা তৈরী হবে। বর্তমান সরকার ২০৪০ সাল নাগাদ দেশকে তামাকমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন। তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপণ, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণে আইনের ৫নং ধারায় বলা আছে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই ধারার বিধান লংঘন করলে অনুর্ধ ৩ মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। কিন্তু দেশের কোনো জায়গায় এ ধরনের আইন প্রয়োগের ঘটনা তেমন একটা দেখা যায় না।

ধুমপানের প্রচারণা, পৃষ্ঠপোষকতা ও বিজ্ঞাপণের বিরুদ্ধে আইন, বিধি নিষেধ থাকলেও নগরজুড়ে ধুমপানের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা এমনকি প্রশাসন, আদালত, হাসপাতাল, ক্লিনিক, নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও ধুমপানের বিজ্ঞাপন ও বিক্রি মুক্ত নয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ক্লিন ও গ্রীন সিটিতে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিলেও যত্রতত্র ময়লার স্তুপ, আবর্জনা, রাস্তায় ধুলাবালি, নালা-নর্দমায় ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি, মানুষ ঘর থেকে ময়লাগুলি ডাস্টবিনে না ফেলে নালা-নর্দমায় ফেলছে। তাই তামাকমুক্ত, ক্লিন ও গ্রীন সিটি ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র বিজ্ঞাপণ ও প্রচারণা বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগের আহবান জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (১ মার্চ) চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর পতেঙ্গা মুসলিমাবাদ কেজি স্কুলে ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড কমিটির ওরিয়েন্টেশনে বিভিন্ন বক্তাগণ উপরোক্ত দাবি জানান। ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস’র সহায়তায় পিপলস জুবিল্যান্ট এনগেজমেন্ট ফর টোবাকো ফ্রি চিটাগাং সিটি প্রকল্প, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের আয়োজনে ওরিয়েন্টেশনে সভাপতিত্ব করেন, ক্যাব ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস। প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন। ক্যাব ডিপিও জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় ওরিয়েন্টেশনে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাব চান্দগাঁও থানা সভাপতি জানে আলম ও স্বপপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলী সিদকার। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার, হাজী নুরুল আলম, সাবেক ব্যাংকার আবদুল হাই, সমাজকর্মী সাকেরা আকতার, সেনোয়ারুল করিম প্রমুখ।

ওরিয়েন্টেশনে আরও বলা হয়, সরকার ইয়াবার বিরুদ্ধে শুণ্য সহনশীলতা দেখালেও চাহিদা থাকায় ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। আর ধুমপান হলো মাদক সেবন শুরুর প্রথম সোপান। সে কারণে জনবহুল স্থান বিশেষ করে হাসপাতাল, আদালত প্রাঙ্গণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাস-ট্রেন স্টেশনে ধুমপান ও বিজ্ঞাপণ এবং প্রচারণা নিষিদ্ধ হলেও আইনের কার্যকারিতা না থাকায় সমাজ থেকে এই ব্যাধি নির্মূল করা যাচ্ছে না। বিজ্ঞাপণ, বিক্রি ও প্রচারণা নিষিদ্ধ হলেও প্রকাশ্যে বিড়ি-সিপারেট, পান জর্দা বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না। নতুন নতুন ধুমপায়ী সৃষ্টি করতে তামাক কোম্পানীগুলি নানা কৌশলে উপটৌকন ও প্রণোদনা দিয়ে তরুণদের আকৃষ্ট করছে। তাই তামাক সেবনের অপকারিতা বিষয়ে তরুণ সমাজসহ সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগসহ সামাজিক শক্তিগুলির উদ্যোগ ও মরনব্যাধি এই তামাক সেবনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান।

এদিকে একই বিষয়ে ক্যাব ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওর্য়াড কমিটির ওরিয়েন্টেশন শনিবার (০২ মার্চ) বন্দরটিলা স্বপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে কমিটির সভাপতি মো. সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। ক্যাব ডিপিও জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় ওরিয়েন্টেশনে অন্যান্যদের মধ্যে ক্যাব চান্দগাঁও থানা সভাপতি জানে আলম, স্বপপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলী সিদকার, ডা. প্রবোদ দাশ, প্রদীপ শীল, স্বাগতম বড়ুয়া, ফারজানা আকতার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

This post has already been read 1580 times!