Thursday , September 18 2025

পুদিনার রোগ ও প্রতিকার

বিজ্ঞানী ড. কে.এম. খালেকুজ্জামান

পাউডারি মিলডিও (Powdery mildew) রোগ

রোগের কারণ : এরাইসিপি স্পেসিস (Erysiphe polygoni) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তার : শীতের সময় হঠাৎ মেঘ করে ঠান্ডা কমে গেলে এবং শুস্ক আবহাওয়া বা ৫০-৬০% বাতাসের আর্দ্রতায় এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। গাছ বেশি ঘন হলে এবং খরা অবস্থায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।

পাউডারি মিলডিও রোগের লক্ষণ

রোগের লক্ষণ

˙পাউডারি মিলডিও পুদিনার একটি মারাত্মক রোগ।

˙পাতার উপর ধূসর বা সাদা পাউডারের মত দাগ পড়ে।

˙আক্রান্ত পাতার সবুজ রং নষ্ট হয়ে যায় এবং শুকিয়ে যায়।

˙পাতার উপর পাউডার দ্বার আবৃত থাকায় সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে গাছ ছোট আকারের হয়।

˙রোগ মারাত্মক আকারে হলে পাতা ঝরে পড়ে।

˙রোগের প্রকোপ বেশি হলে সমস্ত গাছ (শাখা ও কাণ্ড) আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়।

রোগের প্রতিকার

˙ফসল সংগ্রহের পর অবশিষ্টাংশ এবং আবর্জনা পুড়ে ফেলতে হবে।

˙রোগাক্রান্ত গাছ সমূহ তুলে ধ্বংস করতে হবে।

˙দ্রুত বেগে পানি স্প্রে করলে রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যায়।

˙রোগ দেখা মাত্রই সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন-থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউ বা কুমুলাস ডিএফ) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে অথবা ট্রাই ব্যাসিক কপার সালফেট গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-কুপ্রোক্স্যাট ৩৪৫ এসসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে  মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

পাতা পোড়া/ঝলসানো (Leaf blight) রোগ

রোগের কারণ: সেফালোস্পোরিয়াম স্পেসিস ((Cephalosporium spp.)) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তার: জীবাণু গাছের পরিত্যাক্ত অংশে বেঁচে থাকে।

রোগের লক্ষণ:

˙বছরের যে কোন সময় এ রোগ দেখা দিতে পারে।

˙রোগ দেখা দিলে সমস্ত পাতা গাঢ় খয়েরী বা কালো হয়ে ঝরে পড়ে।

রোগের প্রতিকার

˙রোগাক্রান্ত পাতা পুড়ে ফেলতে হবে।

˙পাতা পোড়া/ঝলসানো রোগ দেখা দিলে ডাইফেনোকোনাজল+ এ্যাজোক্সিস্ট্রবিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-এমিস্টার টপ ৩২৫ এসসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে অথবা মেটিরাম ৫৫% + পাইরাক্লস্ট্রবিন ৫% গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-ক্যাবরিওটপ ৬০ ডব্লিউপি) ৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।

মরিচা রোগ (Rust) রোগ

রোগের কারণ: পাকসিনিয়া মেনথি (Puccinia menthae) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তার: ফসলের পরিত্যক্ত অংশে ছত্রাক বেঁচে থাকতে পারে। বিকল্প পোষক হতে বায়ূর মাধ্যমে এ রোগ সুস্থ গাছে ছড়ায় এবং আর্দ্র্র্র আবহাওয়ায় বিস্তার লাভ করে। বয়স্ক গাছে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।

মরিচা রোগের লক্ষণ

রোগের লক্ষণ:

˙পাতার নীচে ছোট, ময়লাযুক্ত, উজ্জ¦ল কমলা বা হলুদ বা বাদামী ফোস্কার মত দাগ দেখা যায়।

˙ নতুন ডগা ও কান্ডেও দাগ পড়ে এবং ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে।

˙পাতার অনেক বড় অংশের টিস্যু মরে  যায়

˙পাতা ঝরে পরতে পারে।

রোগের প্রতিকার

˙ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা এবং আবর্জনা পুড়ে ফেলতে হবে।

˙জমিতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক ও বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

˙জমিতে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।

˙কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি ) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে তাতে পুদিনা গাছের কাটিং শোধন করে জমিতে লাগাতে হবে।

˙হেক্সাকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-কনটাফ ৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি অথবা প্রোপিকোনাজোল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।

লেখক: উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।

This post has already been read 7095 times!

Check Also

চলতি অর্থবছরে ৩৯ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ দেবে সরকার – কৃষি সচিব

গাজীপুর সংবাদদাতা : কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেছেন, আমাদের অনেক উদ্যেক্তা আছেন …