Friday 29th of March 2024
Home / প্রাণিসম্পদ / কোরবানির পশু পালনকারী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের করণীয়

কোরবানির পশু পালনকারী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের করণীয়

Published at আগস্ট ১৯, ২০১৮

ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম: ঈদ আসে ঈদ চলে যয়, ঈদ হাসতে শেখায় ভালোবাসতে শেখায়। পবিত্র ঈদ-উল-আযাহা মুসলিমদের জন্য এক বিশেষআনন্দের দিন। বছর ঘুরেই এই আনন্দের দিনটি আসে আমাদের মাঝে। আরবি জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদ-উল-আযহা পালন করা হয়। এই দিনে ঈদ হিসেবে আনন্দ তার সাথে যুক্ত হয়েছে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য প্রিয় প্রাণী কোরবানির আনন্দ। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই এই কোরবানির মর্মকথা। হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর সময়কাল হতেই এই কোরবানির রেওয়াজ চালু আছে ইসলাম ধর্মে। কোরবানির পশু জবাহের কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে যেগুলো জানলে খুব সহজে, অল্প সময়ের মানসম্মত কোরবানির গোশত তৈরি করা যায়। পাশাপাশি জাতীয় অর্থনৈতিতে অবদান রাখার অন্যতম উপাদান চামড়ার গুণগত মানও ঠিক রাখা যায় এবং পরিবেশসম্মত উপায়ে পরিবেশকে ভালো সুস্থ রেখে আমরা সমুদয় কার্যক্রম শেষ সম্পন্ন করা যায়।

আশা করা যায়, এ বছর বাংলাদেশে ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৩টি পশু জবাই হবে কোরবানি উপলক্ষে। এর মধ্যে ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার গরু, ৭১ লাখ ছাগল ভেড়া এবং ৩১ হাজার ৯২৩টি অন্যান্য প্রাণি। পুরো বছরে যে সংখ্যক গবাদিপশু জবাই হয় তার সিংহভাগই হয় কোরবানির দিনে। আর সেই কোরবানির পশুর চামড়া দেশের ট্যানারি শিল্পের জন্য এক অমুল্য রতন। জাতীয় আয়ের একটা গুরুত্বপুর্ণ খাত। দেশের সবজায়গায় কোরবানি করা হয় বলে পরিবেশের ওপর একটা চাপ পড়ে, সচেতনতার অভাবে যত্রতত্র প্রাণির বর্জ্য ফেলার ফলে পরিবেশ দূষণও হয়। তাই সচেতন হয়ে পুরো কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ কিছু কৌশল এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন। কোরবানির চামড়া মান ঠিক রাখা গুরুত্বপূণ কেননা কোরবানির চামড়া হলো মূল্যবান জাতীয় সম্পদ।বিশেষত এতে গরীব দুখি মানুষের হক রয়েছে। সে জন্য এর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেক।

পশু পালনকারীর জন্য
স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ উপায়ে পশু পালন করুন; চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে স্টেরয়েড, হরমোন, এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন না। রোগাক্রান্ত পশু কোন বেচা থেকে বিরত থাকুন; এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হলে প্রত্যাহারকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত গবাদি পশু বিক্রি করবেন না। সবকাজে সচেতনতা দেখানে আমাদের সার্বিক লাভ বেশি হবে।

বিক্রেতাদের জন্য
কোরবানির হাটে পশু অসুস্থ হলে কাছের প্রাণিচিকিৎসকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’র আওতায় নিরাপদ খাদ্য বিরোধীকাজ ও অপরাধের জন্য ৫ বছর পর্যন্ত কারাদ- অথবা ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে। নিজে সচেতন হবো পুরো জাতিকে সচেতন করবো দেশে লাভ নিশ্চিত করবো।

ক্রেতাদের জন্য
কোরবানির জন্য সুস্থ্য সবল পশু আবশ্যকীয়। নিরোগ স্বাস্থ্যবান সতেজ, স্বাভাবিক কাজ, জাবর কাটা, নাকের নিচে লোমবিহীন অংশে (মাজল) ভেজা ভাব ও উজ্জল চেহারা সম্পন্ন; কোরবানির জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক পশু অন্যূন ২ বছর বয়সের গরু, ১ বছরে বয়সের ছাগল/ভেড়া কিনুন। কোরবানির জন্য গর্ভবতী অসুস্থ, বিকলাঙ্গ পশু কেনা বেচা থেকে বিরত থাকুন; প্রয়োজনে কাছের প্রাণিচিকিৎসকের সহায়তা নিন। দেখেই বোঝা যায় ,শরীরে কোন কাটা বা ক্ষতের দাগ আছে কিনা এগুলো থাকলে চামড়ার মান মাংসের মান অনেকটাই কমে যায়।

কোরবানীর মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রান্নাকারীদের জন্য
পশুর কাঁচা মাংস স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৪ ঘণ্টা বেশি না রেখে যত দ্রুত সম্ভব রান্না করুন। মাংস অল্প সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে রেফ্রিজারে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে সংরক্ষণ করতে হবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে ডিপফ্রিজে মাইনাস ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তার নিচের তাপমাত্রায় ছোট ছোট আলাদা প্যাকেটে রাখুন। প্রতিবারে রান্নার উপযোগী পরিমাণ মাংস আলাদা প্যাকেটে সংরক্ষণ করতে হবে। মাংস সঠিক তাপে ভালোভাবে রান্না করুন। এতে মাংসে কোন ক্ষতিকর জীবাণু থাকলে তা নষ্ট হয়ে যাবে। মাংসে অতিরিক্ত মসলা তেল ব্যবহার না করে পরিমাণ মতো ব্যবহার করেল বহুমুখী লাভ হয়।

লেখক: কৃষিবিদ, লেখক ও কৃষি মিডিয়া বিশেষজ্ঞ।

This post has already been read 2225 times!