Friday 19th of April 2024
Home / খাদ্য-পুষ্টি-স্বাস্থ্য / প্রানিজ খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান

প্রানিজ খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান

Published at জুলাই ৭, ২০১৮

কাবেরী আজিজ : আমাদের দেহে পুষ্টির যোগান দেয় এমন যেকোনো উপাদান খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত। খাদ্য প্রানিজ ও উদ্ভিজ্জ উভয় উৎস হতে পাওয়া যায় যা আমাদের দেহে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করে। আমাদের দেহের কোষসমূহ গ্রহণকৃত খাদ্য উপাদান হতে শক্তি সংগ্রহ করে দেহের বৃদ্ধি ঘটায়। এক্ষেত্রে প্রানিজ খাদ্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এখানে আমরা প্রানিজ খাদ্য ও তার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।

প্রানিজ খাদ্যের কয়েকটি উৎস হলো মাংস, মাছ, ডিম, দুধ ও দুধ জাতীয় খাদ্য। এছাড়াও রয়েছে ওফাল। আমাদের দেশে গাভী, ভেড়া, ছাগল, মুরগি থেকে সাধারণত মাংস আহরণ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গৃহে পালিত পশুকে নির্দিষ্ট ওজনে পৌঁছানোর পর জবাই করে বাজারে বিক্রি ও রান্না করা হয়। এই মাংস সম্পূর্ণ প্রোটিন, হিম আয়রণ, জিংক ও বি ভিটামিন এর খুব ভালো উৎস। এর প্রোটিন ও ফ্যাট শক্তির অন্যতম উৎস হলেও মাংসের অধিকাংশ ফ্যাট সম্পৃক্ত শ্রেণির যাতে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিডের মাত্রা কম থাকে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মুরগির মাংস। এতে স্নেহের পরিমাণ কম থাকে এবং এই স্নেহ অসম্পৃক্ত শ্রেণির যা আমাদের দেহের জন্য উপকারী। একটি মাংসের পুষ্টি গুণাগুণ নির্ভর করে মূলত পেশী, স্নেহ ও হাড়ের পরিমাণের ওপর।

মাছ প্রকৃতি হতে স্বাভাবিক উপায়ে আহরণ করা হয়। মাছ হতে আমরা সম্পূর্ণ প্রোটিন, হিম আয়রণ, ক্যালসিয়াম ও বি ভিটামিন পাই। সামুদ্রিক মাছ হতে যথেষ্ট পরিমাণ আয়োডিন পাওয়া যায়। মাছের লিভার হতে ভিটামিন এ ও চর্বিযুক্ত মাছ হতে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় যা আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারী। লবণাক্ত মাছে লবণের পরিমাণ অধিক। অন্যদিকে শুটকি মাছে পানির পরিমাণ কম থাকে।

পশু ও পাখির মাংস ব্যতীত অন্যান্য ভক্ষণযোগ্য অংশের নাম ওফাল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হার্ট, লিভার, কিডনী ও রক্ত। ওফাল মাংসের ন্যায় পুষ্টিসমৃদ্ধ। রক্ত হিম আয়রণ এর উৎকৃষ্ট উৎস। পশু, পাখি ও মাছের লিভার মাংস অপেক্ষা কয়েকটি উপাদানে অধিক সমৃদ্ধ, যথা- হিম আয়রন, ভিটামিন এ, ফলেট, ভিটামিন বি, সি ও ডি।

মুরগি ও হাঁসের ডিম বাজারে বেশি দেখা যায়। ডিম সম্পূর্ণ প্রোটিন ও কিছু বি ভিটামিন এর ভালো উৎস। ডিমের কুসুমে স্নেহ ও নন-হিম আয়রণ পাওয়া যায়। তবে এই আয়রণ আমাদের দেহে ভালোভাবে শোষিত না হওয়ার ফলে ডিমকে নন-হিম আয়রণ এর উৎস হিসেবে গণ্য করা যায় না।

দুধ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য। তবে গরু, উট ও ছাগলের দুধে প্রোটিন ও ফ্যাট এর পরিমাণ প্রায় সমান। ভেড়া ও মহিষের দুধে প্রোটিন অপেক্ষা ফ্যাট এর পরিমাণ বেশি। মায়ের দুধেও ফ্যাট অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। দুধের ফ্যাট সম্পৃক্ত ও অল্প কয়েকটি অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড ধারণ করে। তবে ব্যতিক্রম মায়ের দুধ। মায়ের দুধে অধিক অসম্পৃক্ত ফ্যাট ও অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সম্পূর্ণ প্রোটিন এর এটি একটি ভালো উৎস।

ক্যালসিয়াম -এর একটি ভালো উৎস দুধ। এতে অধিকাংশ ভিটামিন, বিশেষত ভিটামিন এ ও ফলেট পাওয়া যায়। বাজারে প্রাপ্ত দুধ প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করা হয়। এর ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াসমূহ ধ্বংস হয়।

আামাদের প্রতিদিনের খাবারে যদি আমরা প্রানিজ খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করি তবে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল -এর চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব। প্রানিজ প্রোটিন শিশুর বর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বর্ধন শুরু হয়ে যায় মায়ের গর্ভে থাকার সময়েই। তাই গর্ভবতী মা, বর্ধনশীল শিশু ও টিনএজারদের খাদ্য তালিকায় প্রানিজ খাদ্য অবশ্যই থাকতে হবে। আমাদের রক্তের গঠন, হাড়ের বৃদ্ধি, ত্বকের মসৃণতা, জীবনীশক্তি লাভ এ সবকিছুর মূলে রয়েছে সঠিক মাত্রায় প্রানিজ খাদ্য গ্রহণ। তাই প্রানিজ খাদ্য গ্রহণে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।

This post has already been read 15624 times!