Friday 19th of April 2024
Home / পোলট্রি / ঢাকায় ‘পোলট্রি শিল্প: সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা

ঢাকায় ‘পোলট্রি শিল্প: সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা

Published at মে ১৪, ২০১৮

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: পোলট্রিতে আসার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য, দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা আছে কি না -এসব বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে ভবিষ্যতে হ্যাচারি ব্যবসার অনুমোদন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সরকার। এ শিল্পের ওপর ব্যাংক সুদের হার, ফিডের কাঁচামালের ওপর আরোপিত ভ্যাট-ট্যাক্স ইত্যাদি বিষয়গুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। পোলট্রি সেক্টরে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য আলাদা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট তৈরির চিন্তাও চলছে। রপ্তানির ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা হবে। তবে তার আগে রপ্তানির জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত কি না সেটিও যাচাই করে দেখতে হবে। কারণ, রপ্তানিতে গুণগত মানের ক্ষেত্রে কোন আপোষ করা চলবেনা। হ্যাচারি কোম্পানিগুলোর উচিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভে সবসময় যাতে বাচ্চা বিক্রি হয় সেটি নিশ্চিত করা। তাহলে বাজারের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

সোমবার রাজধানীর স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ডিবিসি সংলাপ আয়োজিত ‘পোলট্রি শিল্প: সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনার টেবিলে পোলট্রি নেতৃবৃন্দ ও উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন দাবীর প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এম.পি। তিনি বলেন, সরকার অনেক আগ্রহী শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য। কারণ, পোলট্রি শিল্প না থাকলে দেশে মাংসের বাজার যে কোথায় যেত সেটা চিন্তারও বাইরে। তাই সরকার শিল্পটির ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। ব্যাংক ঋণের সুদের বেশি স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। আন্তঃমন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সবগুলো সমস্যার সমাধান দেয়া হবে।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও ডিবিসি চ্যানেল চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরি বলেন, সুস্থ সবল নীরোগ জাতি গঠনের জন্য পোলট্রির কোন বিকল্প নেই। কারণ, সুস্থ সবল জনশক্তির জন্য পোলট্রি পুষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজন। এছাড়াও দেশের কর্মসংস্থানেও খাতটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাই পোলট্রি শিল্পের ওপর আরোপিত ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করা জরুরি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রিয় মোহন দাস বলেন, পোলট্রি সেক্টরে এখন চলছে একে অপরকে দোষারোপের পালা। বাস্তবতা হলো, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমরা কম বেশি সবাই দায়ী। তাই সকলকে সম্মিলিতভাবে উত্তরণের পথ খুজতে হবে।

তিনি বলেন, ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারিভাবে সংরক্ষণাগার তৈরি করা যেতে পারে। যাতে হঠাৎ করে ডিমের দাম কমে বা বেড়ে গেলে তার লাগাম টেনে ধরা যায়। যত্রতত্রভাবে যাতে কেউ এ শিল্পে না আসতে পারে সেজন্য একটি নীতিমালা থাকা দরকার। হ্যাচারি করার অনুমতি দেয়ার আগে যাচাই করতে হবে তার আর্থিক সামর্থ্য, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আছে কী না। একই ব্যাক্তি যাতে পোলট্রি বাচ্চা, ডিম, ফিড ও ওষুধের ব্যবসা না করতে পারে সেটি নিয়ন্ত্রণের একটি সময় এসেছে এখন। সরকারের একটি নীতি থাকার দরকার কে হ্যাচারি করতে পারবে আর কে পারবেনা।

ড. প্রিয় মোহন আরো বলেন, পোলট্রি পণ্য বিদেশে রপ্তানির জন্য আলাদা একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল তৈরি করা যেতে পারে। তবে সেটি কোনো চরে হলে ভালো হয়, যাতে জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সহজ হয়। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদে পোলট্রি শিল্পকে রক্ষা করতে হলে ’ন্যাশনাল পোলট্রি এডভাইজরি বোর্ড’ গঠন করা জরুরি।

আহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ডিবিসি চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল আহসান বলেন, কৃষিতে সরকার প্রায় ৮-১০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিলেও পোলট্রি খাতে সেটি অনুপস্থিত। পোলট্রি কৃষির অংশ হলেও সবচেয়ে অবহেলিত অংশ। প্রান্তিক খামারিদেরকে এ প্রণোদনার আওতায় আনা যেতে পারেন। এছাড়াও পোলট্রি শিল্পের ওপর আরোপিত ভ্যাট- ট্যাক্স, কাস্টমস জটিলতা বর্তমানে একটি বিরাট সমস্যা। ব্যাংকিং খাতে কিছু জটিল নীতির কারণে সুদের হারেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়না। এজন্য পোলট্রি শিল্পে একটি সমন্বিত পলিসি দরকার।

ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন -বাংলাদেশ শাখা’র সভাপতি ও নারিশ -এর পরিচালক শামসুল আরেফীন খালেদ বলেন, পোলট্রিকে কৃষি খাতের অন্তর্ভুক্তি করা হলেও ব্যাংক সুদ ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা সে সুবিধা পাচ্ছিনা। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটা কাঁচামালের দাম ও ব্যাংক সুদ বেড়ে যাওয়ার কারণে ফিড উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়াও পরিবহন খাতে কিছু ভুল নীতির জন্য এ খাতেও খরচ বেড়ে গেছে। সার্বিক বিষয়গুলোর সমাধান না হলে প্রাণিজ আমিষের সবচেয়ে সহজলভ্য এ মাধ্যমটি হুমকির মুখে পড়ে যাবে।

তিনি বলেন, মানুষের আয় বাড়ার সাথে সাথে প্রোটিন গ্রহণের পরিমানও বাড়বে। গ্রামীন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য পোলট্রি হচ্ছে সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। এ সময় তিনি অবিলম্বে ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার আহ্বান জানান।

রশিদ কৃষি খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লে. জেনারেল (অব.) হারুনুর রশিদ বলেন, পোলট্রি সেক্টরে সরকারের নীতির সাথে ব্যাংক সহযোগিতার মিল নেই। সুদ বেশি হওয়ার কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সাথে দেশীয় ব্যবসায়ীদের অসম প্রতিযোগিতা চলছে দীর্ঘদিন ধরেন। এছাড়াও বড় বড় উদ্যোক্তাদের সাথে অসম প্রতিযোগিতা চলছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের। বড় উৎপাদনকারীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ফলে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে প্রান্তিক খামারিরা। এ ব্যবস্থার উত্তরণ হওয়া জরুরি।

তিনি বলেন, পোলট্রি শিল্পে বাস্তবিক দক্ষ ও প্রশিক্ষিত লোকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে। এ শিল্পে দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য আলাদা কোন ইনস্টিটিউট নেই। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যবহারিক জ্ঞান আহরনের জন্য পর্যাপ্ত খামার নেই। জটিল ভাইরাস ও রোগ সনাক্তকরণের জন্য অনেক সময় আমাদের বাইরের দেশের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ সময় তিনি টেকসই পোলট্রি শিল্পের জন্য পোলট্্ির বীমা চালুর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

আলোচনা টেবিলে সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকা ডিবিসি চ্যানেল সম্পাদক প্রণব সাহা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নানামুখী সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে বিকাশমান পোলট্রি খাত। একদিকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা মোকাবেলা করতে হচ্ছে অন্যদিকে পোলট্রি ফিড, ডিম ও মাংসের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর উচ্চ হারে ভ্যাট ট্যাক্স আরোপের জন্য। সরকারের নীতি সহায়তার জন্য আমাদের আলোচনা করা দরকার।
আলোচনা টেবিলে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামছুল আলম, ফিআব সভাপতি মো. আহসানুজ্জামান, আহ্কাব সভাপতি একেএম আলমগীর, পোলট্রি কনসালটেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল হক, ইয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিন উদ দৌলা, প্লানেট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ হাবিবুল হক।

This post has already been read 5132 times!