শনিবার , জুলাই ২৭ ২০২৪

দেশের মৎস্য জগতে নতুন সেনসেশন লাল তেলাপিয়া

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: বাংলাদেশের মাছের বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। শিক্ষিত তরুনরা চাকুরির পেছনে না ছুটে মৎস্যচাষে ঝুঁকে পড়ায় দেশে এখন মাছের ঘাটতি নেই বললেই চলে।উপরন্তু এ খাতের উদ্যোক্তারা এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে মাছ রপ্তানির দিকে ঝুঁকছেন। এতদিন কেবল তাজা মাছ রপ্তানি হলেও ভবিষ্যতে প্রক্রিয়াজাত মাছ রপ্তানির বিষয়েও চিন্তাভাবনা করছেন এখন তারা।

অন্যদিকে দেশের মানুষ এখন নিরাপদ খাদ্য নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। আয় বাড়ার সাথে সাথে তারা এখন অপেক্ষাকৃত ভালো ও নিরাপদ খাদ্যের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। অ্যাকুরিয়াম থেকে জীবন্ত মাছ বিক্রির বাজারও দেশে বাড়ছে। ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজারে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে্ লাইভ ফিস মার্কেট। লাইভ ফিস ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের কাছে লাল তেলাপিয়া বহিঃবিশ্বে খুবই জনপ্রিয় মাছ বলে জানান মৎস্য বিশেষজ্ঞগণ। কারণ, মাছটি দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। খুব সহজে ছোট-বড় সকলের নজর কাড়তে সক্ষম।

ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড -এর পরিচালক মোহাম্মদ তারিক সরকার

জানা যায়, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৫ সন থেকে মাছটি নিয়ে গবেষণা করছে। ব্যাক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই চেষ্টা করছেন দেশে বাণিজ্যিকভাবে মাছটি সম্প্রসারণ, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের। এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে দেশের মৎস্য পোনা উৎপাদন ও বাজারজাতকারী স্বনামধন্য কোম্পানি ফিসটেক (বিডি)লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে সফলভাবে লাল তেলাপিয়া পোনা উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে এবং চলতি মাস থেকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত কার্যক্রম শুরু করেছে।

এ সম্পর্কে ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড -এর পরিচালক মোহাম্মদ তারিক সরকার এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, মাছটির পোনা উৎপাদন নিয়ে অনেকে চেষ্টা করলেও বাণিজ্যিকভাবে এর বিপণন কার্যক্রম ও সরবরাহ আমরাই শুরু করেছি। চলতি মাস (মে) থেকেই আমরা এর বিপণন কাজ শুরু করেছি। আশা করি, দেশের মৎস্য চাষি ও ক্রেতাদের মাঝে এক ধরনের সাড়া ফেলতে সক্ষম হবে দেখতে আকর্ষণীয় ও খেতে সুস্বাদু লাল তেলাপিয়া।

মাছটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ তারিক সরকার বলেন, এটি ক্ষেতে অনেক সুস্বাদু, দেখতে সুন্দর এবং মাংসল। সাড়া পৃথিবীতে তেলাপিয়ার জাতগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয়। লাল তেলাপিয়া মাছের ফিলেট আন্তর্জাতিক বাজারে খুবই জনপ্রিয়। রপ্তানিমুখী বাজার খুজতে গেলে লাল তেলাপিয়া খুবই উপযোগি একটি জাত।বহিঃবিশ্বে এ মাছের ফিলেটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।যারা তেলাপিয়ার ফিলেট রপ্তানি করতে চান তাদের জন্য এ মাছটি আদর্শ। তাছাড়া দেশের মৎস্য চাষিদের চাষকৃত মাছের ন্যায্যমূল্য পেতে গেলে আমাদের রপ্তানিমুখী মৎস্য বাণিজ্য চিন্তার বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, অন্যদিকে সৌখিন ভোক্তাদের কাছে মাছটি নজর কাড়তে সক্ষম হবে। কারণ, আমাদের দেশের অনেক ভোক্তাই এখন অ্যাকুরিয়াম থেকে সরাসরি তাজা মাছ ক্রয় করতে আগ্রহী হচ্ছেন। চায়না, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামে লাইভ ফিস ব্যবসা খুব জনপ্রিয়। আমাদের দেশেও ভবিষ্যতে ব্যবসার এ পদ্ধতিটি আরো বাড়বে।

মাছটির চাষ পদ্ধতির সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ তারিক সরকার বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয়  অনেক অঞ্চল এখন লবণ পানিতে নিমজ্জিত। ফসলের বিভিন্ন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে সরকার ও বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন, কীভাবে লবণ পানি প্রবেশকৃত এলাকাগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়।লবণ পানি আটকে থাকা এলাকাগুলোতে মাছটি চাষ করা যেতে পারে। লাল তেলাপিয়া চাষের একটি সুবিধা হলো স্বাদু পানির পাশাপাশি সামান্য লবণ (৩-১০ পিপিটি) পানিতেও মাছটি চাষ করা যায়। ফলে ঐসব এলাকার জমিগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার হবে। এছাড়াও মাছটি খাঁচায় ও সিমেন্টের ট্যাংকে চাষ করা যায়।

তিনি বলেন, লাল তেলাপিয়া মাছের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই ভালো। ফলে ওষুধসহ অন্যান্য খরচ সাশ্রয় হবে।৪-৫ মাস বয়সে এর গড় ওজন হয় প্রায় ৪০০ গ্রাম। প্রায় সব ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে।পুকুরে মাছটি এককভাবে চাষ করলে বেশি লাভ পাওয়া যাবে।

মোহাম্মদ তারিক সরকার আরো বলেন, ফিসটেক (বিডি)লিমিটেড শুধু মাছের খাদ্য, পোনা ও ওষুধ সামগ্রীই বিক্রি করেনা, আমরা চাষিদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।প্রযুক্তি, পরামর্শ এবং সেবা -এ তিনটি মূলমন্ত্র নিয়েই ফিসটেক। লাল তেলাপিয়া পোনা ক্রয় এবং চাষের প্রতি আগ্রহীরা উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন- ০১৯২৬ ৯৯০৫০০।

This post has already been read 6291 times!

Check Also

আগামীকাল থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন বৃদ্ধি, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের …