Friday 26th of April 2024
Home / মৎস্য / আমিষ-অর্থ উন্নয়নে মাছ চাষ

আমিষ-অর্থ উন্নয়নে মাছ চাষ

Published at এপ্রিল ১১, ২০১৮

গৌতম কুমার রায় : অনেকেই সাঁতার শিখতে শহরের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা শেখে। কিন্তু তখন নদী, পুকুর, বিল, ঝিল এর সাথে সময়ে যুদ্ধ কখনো মিত্রতা করে কখন যেন বাড়ির ছেলে-মেয়েটা সাঁতার শিখে ফেলতো। এখন তার সবই কথায় আছে বাস্তবে শূন্য। দিন বদলে গেছে। রিসোর্স হারিয়েছে। নদীর পেটে বিশাল বালুর টিউমার। নদীর নীরব কান্না মায়া ছড়িয়ে দেয়। মৃত প্রায় নদী এবং খালগুলো দখলের বেদনায় বিষাক্ত জলবহন করতে গিয়ে জলজপ্রাণি হারিয়েছে অনেক রকমের। কিন্তু মাছ! হারিয়ে গেলেতো চলবে না। দিন দিন মানুষ এবং তা থেকে বেড়েছে মুখ। প্রতিদিন খাবারের থালায় আমিষের প্রধান উপকরণ মাছ রাখতেই হবে। নচেৎ আমিষ ছাড়া মানুষ জন্ম দেবে বিকলাঙ্গ নতুবা বধির শিশু। এমন শিশুর জন্ম হলে রাষ্ট্র এবং জাতির ঘাড়ে অহেতুক অপ্রকৃতিস্থ মানুষের ভাঁড় ঘাড়ে নিয়ে যন্ত্রণা সইতে হয়। কেননা খাবারের পাতে মোট পরিমাণ আমিষের ৬০ শতাংশ যোগান আসে মাছ থেকে। যে কারণে মাছ এখন আর আপন নিয়মে বড় হয়না। এখন মাছেকে বড় করতে হয়। যেটা কিনা প্রযুক্তি বিলিয়ে। পদ্ধতিগত উপায় দিয়ে মাছ বড় হয়। এখন মাছ চাষ করতে প্রকৃতির ওপরে নির্ভর করতে হয় না তেমন। কৃত্রিমতা দিয়ে সে কাজটা সম্পাদন করতে হয়।

মৎস্য বিভাগের আপ্রাণ চেষ্টায়, চাহিদার রিলে-দৌড়ে মাছ উৎপাদনে আসছে। হ্যাচারিতে কৃত্রিম উপায়ে ডিম বের করে পোনার চাহিদা মিটাতে হচ্ছে। যে জন্য মোট কৃষিজ আয়ের ২৩.৮১ শতাংশ আসে মৎস্য খাত থেকে। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন কিংবা জিডিপি’র ৩.৬৫ শতাংশ মৎস্য খাতের। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১.৮২ কোটি মানুষ মৎস্য সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়মিত নিয়োজিত থেকে আয় উপার্জন করছেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে ২০১৪ এবং ২০১৫ সনে বিশ্বে ৫ম স্থান পেয়ে সফলতা পায়। কেননা মৎস্য খাতে শুধু মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যস্থির করা হয় না এর সাথে বেকার জনগোষ্ঠীর কাজের খাত সৃষ্টি এবং জলজ প্রজাতির সংকটময় প্রজাতির বংশ ধরে রেখে উৎপাদনক্রিয়া সচল রাখতে কৌশল নির্ধারণ করতে হয়।

ইলিশ মাছের উৎপাদন এবং সহজ প্রাপ্যতায় কাজ করে সফলতা পেয়েছে মৎস্য বিভাগ। যা কিনা মনে রাখার মতো। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক নিবন্ধে তাঁর বিভাগের কার্যক্রমের অগ্রগতিকে আরো বেগবান করতে এক পরিকল্পনার বিষয় ঘোষণা করেছেন। তাঁর মতে, চাষের মাছ উৎপাদন ১৮.৬ লাখ মে.টন থেকে ৪৫ শতাংশ এবং মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদনকে ৯.৬১ লাখ মে. টন থেকে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি করতে কাজ করছেন। ইলিশ মাছের উৎপাদন ৩.৫১ লাখ মে. টন থেকে আরো ২০ শতাংশ বাড়িয়ে এবং সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন আরো ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি করতে উৎপাদন কৌশল হাতে নিয়েছেন। রপ্তানিযোগ্য হিমায়িত চিংড়ি হতে আয় ১.২৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা, কর্মসংস্থানের পরিধি বাড়িয়ে বেকার জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা এবং মাছ চাষে ২৫ শতাংশ মহিলার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। মৎস্যচাষি এবং মৎস্যজীবিদের আয় আরো ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে কাজ করছে মৎস্য অধিদপ্তর। এছাড়া দেশ-বিদেশে নিরাপদ মৎস্য খাদ্যের যোগান বৃদ্ধি এবং তা নিশ্চিত করা।

এভাবে স্থির পরিকল্পনা করে যৌক্তিক পথে এগিয়ে গেলে জলের পরিপূর্ণ ব্যবহার করা গেলে উৎপাদন বাড়বে। আর উৎপাদন বাড়ানো গেলে আর্থিক শক্তির প্রভাব আমাদের আমিষ এবং অর্থ দেশের অর্থনীতিতে অর্থাৎ জিডিপি’তেও পড়বে। যে জন্য সরকারের প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।

This post has already been read 2797 times!