শনিবার , জুলাই ২৭ ২০২৪

নিসর্গবিদ ও লেখক দ্বিজেন শর্মা আর নেই

Dizen-Sharma20170830203835নিজস্ব প্রতিবেদক: নিসর্গবিদ ও লেখক দ্বিজেন শর্মা আর নেই। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন। প্রকৃতিবিষয়ক সংগঠন তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকাররম হোসেন জানান, দ্বিজেন শর্মার মেয়ে শ্রেয়সী শর্মা লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি ফিরলে পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিলো তাঁকে যেন দাহ না করে সিলেটের বড়লেখায় গ্রামের বাড়িতে সমাহিত করা হয়। আপাতত মরদেহ স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে থাকবে।

বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা ছাড়াও ফুসফুসে সংক্রমণে ভুগছিলেন দ্বিজেন শর্মা। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর৷ তাঁকে গত ২৩ জুলাই রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ২৯ জুলাই তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউতে) নেওয়া হয়। সেখান থেকে গত বুধবার তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়৷

১৯২৯ সালের ২৯ মে সিলেট বিভাগের বড়লেখা থানার শিমুলিয়া গ্রামে কবিরাজ চন্দ্রকাণ্ড শর্মা ও সমাজসেবী মগ্নময়ী দেবীর ঘরে জন্ম নেন দ্বিজেন শর্মা৷ বাবা ভিষক বা গ্রাম্যভাষায় কবিরাজ ছিলেন বলে বাড়িতেই দেখেছেন নানা লতা-পাতা আর বৃক্ষের সমাহার। প্রজাপতি ডানা মেলা দিনগুলোতে পাথারিয়া পাহাড়ের আরণ্যক নিসর্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই হয়তো গাছ-পালার প্রতি তাঁর এই ভালোবাসার জন্ম।

শৈশবেই গ্রামের পাঠশালায় তাঁর হাতেখড়ি হয়। তারপর করিমগঞ্জ পাবলিক হাইস্কুলে পড়াশুনা। মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলে ডাক্তার হবে কিন্তু প্রকৃতিপ্রেম তাঁকে উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করল। আর তাই কলকাতা সিটি কলেজে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (১৯৫৮) ডিগ্রি লাভ করেন।

দ্বিজেন শর্মা উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেছেন করিমগঞ্জ কলেজ, বিএম কলেজ ও নটরডেম কলেজে। পরে মস্কোর প্রগতি প্রকাশনে চাকরি করেছেন প্রায় কুড়ি বছর। এরপর দেশে ফিরে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতে। বাংলা একাডেমি, একুশে পদকসহ বিভিন্ন জাতীয় সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

দ্বিজেন শর্মার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘সপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস’, ‘ফুলগুলি যেন কথা’, ‘গাছের কথা ফুলের কথা’, ‘এমি নামের দুরন্ত মেয়েটি’, ‘নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা’, ‘সমাজতন্ত্রে বসবাস’, ‘জীবনের শেষ নেই’, ‘বিজ্ঞান ও শিক্ষা : দায়বদ্ধতার নিরিখ’, ‘ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি’, ‘বিগল যাত্রীর ভ্রমণ কথা’, ‘গহন কোন বনের ধারে’, ‘হিমালয়ের উদ্ভিদরাজ্যে ডালটন হুকার’, ‘বাংলার বৃক্ষ’ ইত্যাদি।

১৯৬০ সালে বরিশালে দেবী চক্রবতীর সঙ্গে বিবাহ হয়। ছেলে ডা. সুমিত শর্মা ও কন্যা শ্রেয়সী শর্মা। ড. দেবী শর্মা ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেনস কলেজের দর্শনের সাবেক অধ্যাপিকা।

This post has already been read 3398 times!

Check Also

বারিতে “প্রোগ্রামভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ” বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

গাজীপুর সংবাদদাতা: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর গবেষণা উইং এর আয়োজনে (১০ জুলাই) ইনস্টিটিউটের …