Saturday 20th of April 2024
Home / পরিবেশ ও জলবায়ু / সুন্দরবনে দস্যুতা, যুক্ত হচ্ছে নতুন বাহিনী

সুন্দরবনে দস্যুতা, যুক্ত হচ্ছে নতুন বাহিনী

Published at সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৭

sundarbans1ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): গত এক বছরে একে একে আত্মসমর্পণ করেছে দশটি দস্যুবাহিনী। তারা জমা দিয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। তারপরও সুন্দরবনে থামছে না দস্যুতা। নিয়মিতই চলছে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দাবি, দস্যুতায় যোগ হচ্ছে নতুন সদস্য, নতুন বাহিনী।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) খুলনা সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাব-৬-এর হাতে গত বছর ১০ বনদস্যু গ্রেপ্তার হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশি নয়টি অস্ত্র ও ১ হাজার ৫৩৬ রাউন্ড গুলি। চলতি বছরের গত দেড় মাসে শামসু বাহিনীর পাঁচ সদস্যদের কাছ থেকেও ১০টি অস্ত্র ও ৬৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া দস্যু দমন অভিযান মিলিয়ে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের সংখ্যা প্রায় ২০০।

গত এক বছরে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছে জাহাঙ্গীর বাহিনী, খোকা বাহিনী, মাস্টার বাহিনী, মজনু বাহিনী, ইলিয়াস বাহিনীসহ বেশ কিছু বাহিনী।
তবে এর মধ্য দিয়ে সুন্দরবনে দস্যু নির্মূল হয়ে গেছে, তা নয়। নতুন দস্যুবাহিনী  সেখানে জায়গা নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সুন্দরবনে বর্তমানে চারটি বাহিনী দস্যুতায় সক্রিয়। এর মধ্যে রয়েছে জোনাব বাহিনী, আমিনুর বাহিনী, শীর্ষ বাহিনী ও রবিউল বাহিনী। জোনাব ও রবিউল বাহিনীর প্রধানের বাড়ি সাতক্ষীরার চাঁদনীমুখা গ্রামে। আর শীর্ষ বাহিনীর প্রধানের বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর গ্রামে। জোনাব, রবিউল ও শীর্ষ বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে কয়রা উপজেলার সুন্দরবন এলাকা।

একটি সূত্র জানায়, বনদস্যুদের অর্থ লেনদেনের বিষয়টি দেখাশোনা করেন কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ এলাকার রউজ উদ্দিনের ছেলে আরাফাত হোসেন উজ্জ্বল। গত ৬ ফেব্রæয়ারি উজ্জ্বল একই এলাকার আ. রউফকে ডেকে নিয়ে ভারতের বনগাঁ স্টেশন এলাকায় যায়। সেখানে তাকে বেদম মারধর করে গুরুতর জখম করে। উজ্জ্বল ভারতে অবস্থান করছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। তার অবর্তমানে বনদস্যুদের অর্থ লেনদেনের বিষয়টি দেখভাল করে তার পরিবারের সদস্যরা।

উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে র‌্যাবের ওপর গুলি বর্ষণ, অবৈধ অস্ত্র সংরক্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গুলি বর্ষণের ঘটনায় কয়রা থানায় পৃথক দুটি মামলা রয়েছে। গত বছরের ২৭ অক্টোবর মামলাগুলো করা হয়। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন কয়রা থানার এসআই কিশোর কুমার।

এদিকে বিভিন্ন মৌসুমে তৎপর হয়ে উঠেছে দস্যুরা। বাওয়ালী বাচ্চু মীর বলেন,  গোলপাতা আহরণ মৌসুম শুরুর ১৫ দিনের মধ্যে তিনি দুবার মুক্তিপণ দিয়ে তার নৌকার তিন বাওয়ালীকে ছাড়িয়ে এনেছেন। এখন আগের মতো বড় বাহিনী না থাকলেও ছোট ছোট বাহিনীর সদস্যরা বনজীবীদের নাজেহাল করছে।’

র‌্যাবের সূত্র জানায়, র‌্যাব-৬-এর হাতে গত বছর ১০ বনদস্যু গ্রেপ্তার এবং অভিযানে সাত বনদস্যু নিহত হয়। আত্মসমর্পণসহ গ্রেপ্তার হয়েছে ৭০ জন বনদস্যু। এসব অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২০০ দেশি-বিদেশি অস্ত্র। র‌্যাবের দুই বিভাগ মিলিয়ে ৯ দস্যুবাহিনীকে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক বিভাগ দাবি করেছে, র‌্যাব-পুলিশের হাতে শতাধিক দস্যু গ্রেপ্তার ও আত্মসমর্পণ করেছে। এরপরও থামানো যাচ্ছে না তাদের। দল থেকে বের হয়ে কেউ কেউ ছোট ছোট বাহিনী গঠন করে বনজীবীদের অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করছে।

র‌্যাব-৬-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম দস্যুতা না থামার পেছনে নতুন নতুন দস্যু বাহিনী গঠন হওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনে দস্যু হিসেবে নতুন নতুন লোক আসছে। বর্তমানে ছোট ছোট তিন-চারটি বাহিনী রয়েছে। এ ছাড়া বাগেরহাটের শরণখোলার নিচে কিছু দস্যু রয়েছে, যারা একেবারে ছোট ছোট বাহিনীতে সংশ্লি¬ষ্ট। পাইপগান নিয়ে পাঁচ-সাতজন মিলে নতুন বাহিনী গঠন করছে। দলের দু-একজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য জানা গেছে। তাদের আত্মসমর্পণ করানো কিংবা গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

This post has already been read 2666 times!