Saturday , May 17 2025

ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশে কারবালা তৈরি করেছে -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

রাজশাহী সংবাদদাতা : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ  উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন,  ” পদ্মার উজানে ভারতের দেওয়া ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশে কারবালা তৈরি করেছে। পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ার কারণে এ দেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সরকার তৎপর রয়েছে। ফারাক্কা পানি চুক্তি শেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশ নতুন করে পানির হিস্যা চাইবে। বাংলাদেশ কারো দয়া নয়, ন্যায্য হিস্যা চায়। সে ন্যায্য অধিকার ভারতকে দিতে হবে।”

উপদেষ্টা আজ (১৬মে) বিকালে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন,পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফারাক্কা বাঁধের কারণে চার কোটিরও বেশি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারত এত বছর ধরে আমাদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে আর এর ফলে আমাদের প্রাণীকে – আমাদের মানুষকে তিলে তিলে কষ্ট দিচ্ছে তারা।

ফারাক্কা বাঁধকে মরণ ফাঁদ উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, এ মরণ বাঁধের কারণে আমাদের কী ক্ষতি হচ্ছে তা চিহ্নিত করতে হবে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়াই নদীর মাধ্যমে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মাছের বৈচিত্র কমে যাচ্ছে, এমনকি মাছ বিলুপ্তও হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, গড়াই নদীর অববাহিকার বড় অংশ শুকিয়ে গেছে। একসময় নবগঙ্গা নদীতে ৪১টি মাছের প্রজাতি পাওয়া যেত কিন্তু বর্তমানে সেখানে ৩৫টি প্রজাতি আছে। ১৬টি প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে এবং কিছু কিছু সেখানে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ সকল অঞ্চলে মাছের আহরণ কমে যাচ্ছে এবং মাছের সাথে জড়িত জেলেরাও পেশা হারাচ্ছেন। এর সাথে কৃষিও সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে কেননা কৃষি খাতে বেশি পানির প্রয়োজন।

পদ্মার ইলিশ আমাদের বড় সম্পদ ছিল উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, ইলিশের কথা যখন বলি তখন সবাই পদ্মার ইলিশের কথাই বলি। ভারতের অনেক মানুষই বলে থাকেন, পদ্মার ইলিশগঙ্গার ইলিশের চেয়ে সুস্বাদু। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের কারণে বর্তমানে পদ্মার ইলিশ আর নেই।

মাওলানা ভাসানীর কথার প্রতিধ্বনি করে তিনি বলেন, “গঙ্গার পানিতে আমাদের ন্যায্য অধিকার, এটা আমাদের প্রাকৃতিক অধিকার। এ অধিকার পশু-পাখি, গাছপালা, কীট-পতঙ্গ, প্রাণী, মানুষ সব কিছুর জন্মগত অধিকার। এ অধিকার হরণ করার ক্ষমতা কারো নেই। যে হরণ করেছে সে প্রাণীর বিরুদ্ধে জুলুম করেছে। বাংলাদেশের মানুষ তা কোনো দিন মেনে নেবে না। আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের বাঁচার পথ খুলে দেবেন।” এসময় প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ফারাক্কা লং মার্চের ৪৯ বছর উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নাকিব, প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহর আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ,  লেখক ও গবেষক বেনজিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

This post has already been read 36 times!

Check Also

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মোবাইল কোর্ট অভিযান: কালো ধোঁয়া ও নিষিদ্ধ পলিথিনে জরিমানা ও সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট …