Friday , September 12 2025

কীটনাশকজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন দেশের ২৭ শতাংশ কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনে কীটনাশক একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে দাঁড়ালেও এর অযাচিত ও নিরাপত্তাহীন ব্যবহার এখন জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে কাবি উপস্থাপিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ২৭ শতাংশ কৃষক কীটনাশকজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। চোখ জ্বালা, ত্বকে ফোস্কা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি, প্রজননজনিত সমস্যা ও স্নায়বিক জটিলতাও এ বিষক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।

সংস্থাটির প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ড. দিলরুবা শারমিন উপস্থাপতি উক্ত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে প্রায় হাজার বাণিজ্যিক কীটনাশক নিবন্ধিত, যার মধ্যে ৩৬৩ প্রকার সক্রিয় উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২৩ সালে কীটনাশকের ব্যবহার প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টনে পৌঁছেছে, যা ১৯৭২ সালে ব্যবহৃত মাত্র ৪ হাজার মেট্রিক টনের তুলনায় দশগুণ বেশি। এগুলো মূলত ধান, শাকসবজি ও ফলচাষে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কৃষকদের নিরাপদ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। তথ্য অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ কৃষক নিরাপদ কীটনাশক ব্যবহারে প্রশিক্ষণ পাননি, আর বিক্রেতাদের মধ্যে মাত্র ১.৯ শতাংশের প্রযুক্তিগত শিক্ষা রয়েছে। এ কারণে অধিকাংশ কৃষক কীটনাশকের মাত্রা, মিশ্রণ বা ব্যবহারবিধি মানেন না; অনেক সময় লেবেলের নির্দেশনাও উপেক্ষা করেন। ফলস্বরূপ খাদ্যপণ্যে বিষাক্ত অবশিষ্টাংশ থেকে যায়, যা ভোক্তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখনো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কীটনাশক (Highly Hazardous Pesticides–HHPs) ব্যবহৃত হচ্ছে, যা দ্রুত স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। এসব কীটনাশকের সহজলভ্যতা, ভেজাল পণ্য, এমনকি অনলাইনে নিষিদ্ধ কীটনাশকের বিক্রি পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করছে।

কৃষি খাতে ইতিবাচক দিক হলো—সরকার ইতোমধ্যেই ৪০টি কীটনাশক নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট (IPM), জৈব কৃষি ও ১১০টি বায়োপেস্টিসাইড ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এখন কৃষক প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল টুলস ব্যবহার, জৈবিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক পদ্ধতি প্রয়োগে জোর দিচ্ছে।

রিপোর্টটি আরও জানায়, শুঁটকি মাছ সংরক্ষণে কীটনাশকের ব্যবহারও একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য বিকল্প প্রযুক্তি, যেমন কম খরচের মেকানিক্যাল ড্রায়ার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সার্বিকভাবে, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কীটনাশক অপরিহার্য হলেও এর অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কৃষক, ভোক্তা ও পরিবেশ—তিনটির জন্যই ভয়াবহ হুমকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় এসেছে কীটনাশকনির্ভরতা থেকে সরে এসে বিকল্প ও নিরাপদ সমাধানের দিকে মনোযোগ দেওয়ার।

This post has already been read 275 times!

Check Also

ফিডে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক মেশানো হচ্ছে – মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা : “গবাদিপশু ও মাছের খাদ্যে (ফিডে) ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক মেশানো হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য …