নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানস্থ হোটেল ব্লুবেরী-তে শনিবার (২৬ জুলাই) সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী বিশেষ আয়োজন “Aquaculture Knowledge Day 2025: Innovation for Sustainable Future”।
ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই জ্ঞানভিত্তিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশের খ্যাতনামা গবেষক, নীতি-নির্ধারক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, মৎস্য উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি খাতের পেশাজীবীরা। অনুষ্ঠানে টেকসই মৎস্যচাষ, প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবন, গবেষণা ও মাঠপর্যায়ে এর কার্যকর প্রয়োগ নিয়ে নানা দিক আলোচিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন, সচিব (রুটিন দায়িত্ব), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পুষ্টি নিরাপত্তায় মৎস্য খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও উদ্ভাবনের বিকল্প নেই। সরকারের নীতিগত সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের এমন উদ্দীপনামূলক উদ্যোগ এই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ জিয়া হায়দার চৌধুরী, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর এবং এস. এম. রেজাউল করিম, পরিচালক (প্রশাসন), মৎস্য অধিদপ্তর। তারা বলেন, দেশের উদ্ভাবনী সক্ষমতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। প্রযুক্তি ও গবেষণাকে যদি বাস্তব খামার ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করা যায়, তাহলে উৎপাদনশীলতা ও কৃষকের আয়—দুই-ই বাড়বে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খন্দকার ফরহাদ হোসেন, চেয়ারম্যান, ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড। তিনি বলেন, গবেষণা থেকে মাঠপর্যায়ে উদ্ভাবন বাস্তবায়নই ফিসটেকের মূল দর্শন। আমরা চাই, প্রযুক্তি যেন কেবল প্রদর্শনীতে সীমাবদ্ধ না থেকে খামারে বাস্তব পরিবর্তন আনে।
আয়োজনে আলোচনার অন্যতম দিক ছিল বিএমসি (বেস্ট ম্যানেজমেন্ট কেয়ার) প্রকল্প, যা ফিসটেক-এর উদ্ভাবিত একটি সামগ্রিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এ প্রকল্পের আওতায় খামারে পর্যবেক্ষণভিত্তিক ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যপরীক্ষা, উৎপাদন বৃদ্ধিতে জৈব পদ্ধতির ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ পদ্ধতি ইতোমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং এটি মৎস্য খাতের একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ফিসটেক-এর পরিচালক (গবেষণা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ তারেক সরকার বলেন, দেশের মৎস্য খাতকে টেকসই ও আধুনিক করতে হলে গবেষণা এবং মাঠপর্যায়ের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতেই হবে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা, বিজ্ঞানী এবং নীতিনির্ধারকদের একসঙ্গে কাজ করার এখনই সময়। তিনি আরও বলেন, ফিসটেক চায় এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে যেখানে গবেষণা কেবল বইয়ের পাতা বা ল্যাবরেটরিতে সীমাবদ্ধ না থেকে খামারে বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থায় যুক্ত হবে।
দিনব্যাপী আয়োজনের শুরুতেই ছিল ফিসটেক-এর কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উপস্থাপনা। এরপর অনুষ্ঠিত হয় দুটি ওরাল প্রেজেন্টেশন সেশন, যেখানে মোট ৮টি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন দেশি-বিদেশি গবেষকরা। “Door-to-Door Farming Service” বিষয়ক সেশনে প্রযুক্তিভিত্তিক ফার্মিং সাপোর্ট সিস্টেম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা গবেষণালব্ধ জ্ঞান খামারে বাস্তব প্রয়োগের উপযোগিতা, প্রযুক্তির অর্থনৈতিক টেকসইতা এবং উদ্যোক্তা তৈরির কৌশল তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে “ফিসটেক বার্তা” নামক একটি বিশেষ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পরে মৎস্য খাতে বিশেষ অবদান রাখায় সফল উদ্যোক্তাদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। দিন শেষে অনুষ্ঠিত হয় উদ্ভাবনী প্রযুক্তির বুথ ও পোস্টার প্রদর্শনী, যেখানে জৈব খাদ্য, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন বৃদ্ধি ও খামার সুরক্ষা বিষয়ক প্রযুক্তি প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মৎস্যখাতে প্রযুক্তি-গবেষণা-ব্যবসায়িক সংযোগ তৈরি করাই এই সময়ের প্রধান চাহিদা। এমন আয়োজনের মাধ্যমে সেই সংলাপ তৈরি হওয়া নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী এবং খাতটির উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।