Sunday , August 24 2025

নিরাপদ ব্রয়লার উৎপাদনে মানু হাবসের যাত্রা শুরু, কারিগরি সহায়তা দিবে বাকৃবি ও কেজিএফ

বাকৃবি সংবাদদাতা:  নিরাপদ এবং অ্যান্টিবায়োটিক-মুক্ত ব্রয়লার উৎপাদনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ)-এর টেকনিক্যাল সহায়তায় ক্ষুদ্র খামারিদের জটিলতা সমাধানে এবং পোল্ট্রির মান নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১৫০ জন খামারির উপস্থিতিতে মানু ফার্মস ভবখালী হাবের উদ্বোধন করা হয়েছে।

বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ভাবখালিতে ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে মানু ফার্মস এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মুহাম্মদ শাহীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেজিএফের নির্বাহী পরিচালক ড. নাথু রাম সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাউরেসের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাভিদুল হক ভূঞা, বাকৃবির পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী, প্রকল্প পরিচালক এবং পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি’র এগ্রিকালচার ফাইনান্সের প্রিন্সিপাল অফিসার মো. ইসমাইল হোসেন, ইনফো ওয়ার্ল্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল ইসলাম তুহিন, ইনফো ওয়ার্ল্ড গ্রুপের সিইও কর্নেল (অবঃ) হোসাইন মাহমুদ চৌধুরী, ডিএমএ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রতিষ্ঠাতা হাসান রাহমান।

উক্ত আয়োজনে মুহাম্মদ শাহীন বলেন,”২০১১ সালে মানু ফার্মস যাত্রা শুরু করে প্রান্তিক খামারিদের জন্য। আমরা কৃষিখাতে প্রযুক্তির সহজ সমাধান আনতে কাজ করছি। খামারে বাচ্চা মুরগির সুস্থতার জন্য পরিষ্কার ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ দরকার। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আলো ঠিক রাখতে হয়। এজন্য আমরা একটি ডিভাইস ও অ্যাপ তৈরি করেছি যেটি দিয়ে মোবাইল ফোনেই খামারের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আলো ও অ্যামোনিয়া গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এমনকি দূর থেকেও স্প্রিঙ্কলার চালু করা সম্ভব। “

তিনি আরো বলেন,”আমরা প্রান্তিক খামারিদের আরেকটি বড় সমস্যাও চিহ্নিত করেছি সেটা হলো আর্থিক সহায়তা। খামারিরা যেন সহজে বাচ্চা, ঔষধ ও ফিড ন্যায্য দামে কিনতে পারেন সেজন্য আমরা দুইটি ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছি। এই ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, যাতে আর বাকিতে কিনে বেশি দাম দিতে না হয়। নগদ ক্রয়ে খরচ কমে যায়, লাভও বাড়ে। এই দুইটি সমস্যা, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক সহায়তা, সমাধানে আমরা কাজ করছি। মানু ফার্মসের খামারিরা সঠিক ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে কখনোই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না বলে আমি আশা করি।”

তিনি আরো জানান,”ভবখালী হাবে পোল্ট্রি ও ক্যাটেলের জন্য সপ্তাহে তিন দিন বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বিনামূল্যে ডাক্তার সেবা পাবেন। এখান থেকে খামারের সব জিনিসও মিলবে পাইকারি দামে। আমাদের লক্ষ্য- খামারিদের বাঁচানো, তাদের লাভবান করা, যাতে দেশ এগিয়ে যেতে পারে।”

অধ্যাপক শওকত আলী বলেন, পোল্ট্রি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প। ডিম ও ব্রয়লারই আমাদের সবচেয়ে সস্তা প্রাণিজ প্রোটিনের উৎস। প্রোটিনের অভাবে শিশুদের বুদ্ধি বিকাশেও সমস্যা হয়। তবে আমাদের দেখতে হবে, আমরা কতটা নিরাপদ খাবার খাচ্ছি। যেমন, মুরগিকে কিছু বাধ্যতামূলক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়, কিন্তু ঠিকমতো সময় না মেনে দ্রুত বিক্রি করলে সেটা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। এ

তিনি আরও বলেন, “আমাদের এমন মার্কেটিং সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে যাতে ছোট খামারিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে না পড়ে। সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। আমাদের দেশে ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ পোল্ট্রি খাতে সরাসরি জড়িত। রেস্টুরেন্টগুলোতে কাবাব, গ্রিলসহ নানা খাবার বিক্রি হয়, যা মিলিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে প্রায় ১ কোটি মানুষ যুক্ত। তাই শিল্পকে আরও উন্নত করতে সঠিক ব্যবস্থাপনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অধ্যাপক জাভিদুল হক ভূঞাঁ বলেন,”আপনারা একটি ব্র্যান্ড তৈরি করবেন যেনো ব্রয়লার এবং ডিম আমাদের জন্য নিরাপদ হয়। কিছু খাবার খাওয়ালে রেসিডিউ মুরগিতে থেকে যায় যা আবার  অর্গানিক ফার্মিং এর দিকে গেলে প্রোডাক্ট ভ্যালু অনেক ভালো হবে।”

আপনারা এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করুন যাতে ব্রয়লার ও ডিম নিরাপদ হয়। কিছু খাবার ও ওষুধের কারণে মুরগির দেহে রেসিডিউ থেকে যায় যা মানুষের শরীরে জমে নানা ধরনের মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। অর্গানিক ফার্মিং করলে পণ্যের মান ও দাম, দুটোই ভালো হবে।”

প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক সুবাস চন্দ্র দাস বলেন,” আপনাদের একমাত্র উদ্দেশ্য যদি মুনাফা লাভ করাই হয় তাহলে আজকের এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য আদায় হবে না। আপনারা সফল হলেই সফল হবে এই প্রকল্প। আপনারা যদি আমাদের কথা মত ব্যবস্থাপনা করেন তাহলে আপনাদের অতিরিক্ত খরচ হবে না।”

উল্লেখ্য, মনু ফার্মসের একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যার মাধ্যমে খামারি দৈনন্দিন কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ,আর্থিক হিসাব-নিকাশ, গবাদি পশুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন

This post has already been read 6542 times!

Check Also

ফিডের খরচে জর্জরিত পোলট্রি শিল্প: নীতিগত দ্বিধায় ভারত সরকার

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: বাংলাদেশের মতো চরম সংকটময় সময় অতিবাহিত করছে ভারতের পোলট্রি শিল্প। বিশেষ …