Saturday , July 5 2025

ফিডের খরচে জর্জরিত পোলট্রি শিল্প: নীতিগত দ্বিধায় ভারত সরকার

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: বাংলাদেশের মতো চরম সংকটময় সময় অতিবাহিত করছে ভারতের পোলট্রি শিল্প। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে খামারিদের লাভে বড় ধরনের ধস নেমেছে। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি চাপ তৈরি করছে পোলট্রি ফিডের মূল্যবৃদ্ধি। ভুট্টা ও সয়াবিনের দামে লাগামহীন উর্ধ্বগতি খাতটিকে এমন এক পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে, যেখানে টিকে থাকাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এমন প্রেক্ষাপটে দেশটির শিল্প সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে জেনেটিকালি মডিফায়েড (জিএম) খাদ্যশস্য আমদানির দাবি জোড়ালো হচ্ছে।

দেশটির খ্যাতনামা কনসালটিং সংস্থা ক্রিসিল রেটিংস-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের পোলট্রি খাতে গড় লাভ কমে যেতে পারে প্রায় ৫০ শতাংশ বা অর্ধেকে। এর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ফিডের খরচ বেড়ে যাওয়া। প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩০টি খামারের ওপর পরিচালিত এক জরিপে জানায়, ভুট্টা ও সয়াবিনের অস্বাভাবিক দামে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা। অনেক খামার ইতোমধ্যেই উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন, কেউ কেউ বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসা।

এই পরিস্থিতিতে পোলট্রি ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার জয়েন্ট সেক্রেটারি রিকি থাপার জানান, ফিডের জোগান ও দামের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। জিএম সয়াবিন ও ভুট্টা আমদানির অনুমোদন দিলে উৎপাদকরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। তার মতে, খামারিদের টিকিয়ে রাখতে হলে বাজারে খাদ্যশস্যের বিকল্প উৎস খোঁজার সময় এসেছে।

তবে, এসব ফিড উপকরণ আমদানির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের উচ্চ শুল্কনীতি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমান শুল্ক ৪৫ থেকে ৫৬.৫ শতাংশ, যা কার্যত এই আমদানিকে অর্থনৈতিকভাবে অসম্ভব করে তোলে। ফলে, আন্তর্জাতিক বাজারে সস্তায় পাওয়া খাদ্যশস্য দেশীয় বাজারে আসতে পারছে না, বরং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে গিয়ে দাম বেড়েই চলেছে।

বেসরকারি শিল্প সংগঠন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিও (CII) ফিড সংকট সমাধানে জিএম খাদ্যশস্য আমদানির অনুমোদনের দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, “ফিডের অপ্রত্যাশিত মূল্যবৃদ্ধি পোলট্রি খাতকে টিকে থাকার লড়াইয়ে ফেলে দিয়েছে।”

সরকারের পাবলিক পলিসি থিংক ট্যাঙ্ক নীতি আয়োগ (NITI Aayog) বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, যেখানে দেশীয় উৎপাদন যথেষ্ট নয়, সেখানে আমদানির পথ খুলে দেয়া যেতে পারে। গত ১২ জুন সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে প্রস্তাব দিয়েছে, ফিডের কাঁচামালের ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাস করা হোক, তবে পোলট্রি ও দুগ্ধজাত পণ্যে উচ্চ শুল্কই বজায় থাকুক।

তবে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI) সতর্ক করেছে, একবার আমদানির পথ খুললে ভবিষ্যতে সেই সিদ্ধান্ত বদলানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। সংস্থাটি বলছে, জিএম খাদ্যশস্য উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী দেশগুলোর ভর্তুকি রয়েছে। ফলে এসব পণ্য ভারতীয় বাজারে ঢুকলে দেশীয় কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করছেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও জনসচেতনতার দিক থেকেও এই সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে। জিএম পণ্যের বাজারে অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।

ফিড খরচের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এবং আমদানি নির্ভরতা নিয়ে দোলাচলে ভারতের পোলট্রি শিল্প। সঠিক নীতিনির্ধারণ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নিলে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত ধীরে ধীরে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে—এমনটাই আশঙ্কা করছে খাতসংশ্লিষ্টরা।

This post has already been read 27 times!

Check Also

ওয়াপসা-বিবি আয়োজিত রংপুর বিভাগীয় কর্মশালা হাবিপ্রবিতে অনুষ্ঠিত

এগ্রিনিউজ২৪ কম: ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ (ওয়াপসা-বিবি) আয়োজিত বিভাগীয় কর্মশালা সোমবার (২৮ এপ্রিল) …