
নিজস্ব প্রতিবেদক: পোল্ট্রি খাতে দিন দিন বাড়ছে ক্ষতির বোঝা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক খামারির খরচের হিসেব দেখে আঁচ করা যাচ্ছে, দেশে খামারিরা কতটা বাঁচা-মরার লড়াইয়ে রয়েছেন। মো. জানিব আলী নামক এক খামারি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ”মাত্র ১৪ টাকা পিচ বাচ্চা কিনেও যদি লাভ না হয়, তাহলে মনে হয় কপাল” এভাবে লিখেই অভিব্যাক্তি প্রকাশ করছেন।
ওই খামারির স্ট্যাটাসে দেখা যায়, ১৬০টি মুরগির বাচ্চা কিনেছেন ২২৪০ হাজার টাকায়। এরপর শুরু হয় প্রতিদিনকার ফিড খরচ, চিকিৎসা ও ওষুধ, শ্রমিক মজুরি, বিদ্যুৎ বিলসহ নানা আনুষঙ্গিক ব্যয়। সব মিলিয়ে এক ব্যাচ মুরগির পিছনে তার খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৫৪০ টাকা। কিন্তু সেই ব্যাচের মোট ২৬৪ কেজি মুরগি ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ, এত কম দামে মুরগির বাচ্চা ক্রয়ের পরেও তিনি লোকসান করেছেন ৫৪০ টাকা!
শুধু এই খামারিই নয়, দেশের অগণিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারি এখন এই একই চিত্রের সম্মুখীন। যাদের মুরগির পরিমাণ যত বেশি তার লোকসানের পরিমাণও তত বেশি। শুধু তাই নয়, দেশের অনেক খামারি উল্লেখিত দামের চেয়েও অনেক কম দামে মুরগি বিক্রি করছেন বলে আমাদের কাছে প্রতিনিয়ত খবর আসে। দেশের কোন কোন অঞ্চলে খামারি পর্যায়ে ৯০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করছেন বলেও জানান অনেক খামারি।
এক সময় পোল্ট্রি শিল্পকে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখা হতো। অনেকেই স্বল্প পুঁজি নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন খামার। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাদ্য ও ওষুধের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বাজারে অস্থিরতা এবং সরকারের পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে লাভের মুখ দেখছেন না বেশিরভাগ খামারি। বরং প্রতিটি ব্যাচ শেষ হওয়ার পরই নতুন করে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। অনেকে ধার-দেনা করে খামার চালাচ্ছেন, কেউ বার খামার গুটিয়ে নিচ্ছেন বাধ্য হয়ে।
এ অবস্থায় খামারিরা চাইছেন সরকারি হস্তক্ষেপ। তাদের দাবি, সরকার যেন খাদ্য ও ওষুধের দামে নিয়ন্ত্রণ আনে, ফিড ও চিকিসার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয় এবং উৎপাদন খরচের তুলনায় বিক্রয়মূল্য যেন ন্যায্য থাকে, সে বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করে। নইলে দেশের পোল্ট্রি খাত থেকে ক্ষুদ্র খামারিরা একে একে ঝরে পড়বে এবং এর প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের প্রোটিন সরবরাহেও।
পোল্ট্রি খাত আজ শুধু একটি শিল্প নয়, এটি লাখো মানুষের জীবিকা। এই শিল্পে টিকে থাকা মানে শুধু একটি খামারের নয়, একটি পরিবারেরও অস্তিত্ব রক্ষা। তাই সময় এসেছে এই খাতকে রক্ষায় কার্যকর, দীর্ঘমেয়াদি ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের। তা না হলে খামারিদের কান্না আরও অনেক গভীর হয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরে নাড়া দেবে।