Tuesday , June 17 2025

ঈস্ট: গরুর পালনের খরচ কমাতে বিজ্ঞানের এক অনন্য আশীর্বাদ

নাহিনূর রহমান: খামারিরা যুগের সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন, বাংলাদেশের সামনে দুধ  ও মাংসের বাজারে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে ২০২৩ সালের পরে। এই সময়ে খামারিরা যত বেশি পরিমান নিরাপদ দুধ ও মাংস বানাতে পারবে কম খরচে ও  প্রাণির সাস্থ্যের দিকে যত বেশি নজর দিতে পারবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে।

হালের প্রযুক্তিতে গো খাদ্যের প্রোবায়োটিক -এর ব্যবহার বেড়েছে অনেক। এটা একদিকে যেমন গবাদিপ্রাণির সুসাস্থ্য নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে কমাচ্ছে এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহারের বিশাল ঝুঁকি।

আমাদের দেশের মতো ট্রপিক্যাল আবহাওয়াতে সব থেকে ভালো প্রোবায়োটিক হলো ইস্ট,  যা এক প্রকার ছত্রাক। এর কিতাবী নাম হলো- স্যাকারোমাইসিস সেরিভেসি। এই ল্যাটিন ভদ্রলোক খুব গোবেচারা টাইপ ছত্রাক, যাকে বলা হয় মানুষের পড়ে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি পঠিত ও গবেষিত অণুজীব, যার ব্যবহার প্রাচীন কালের রুটি তৈরি থেকে মদ,পনির, এমন কি হালের সব চেয়ে দামী ভ্যকসিন ইনসুলি ও এই ভদ্রলোকের পেট পিঠ থেকেই বের হয়। এই নিরীহ গোবেচারা ইস্ট কে ইদানীং ব্যবহার করা হচ্ছে গরু পালন ও গরুর খাবার হজমের সহায়ক বন্ধু হিসেবে।

আচ্ছা ভালো কথা, তার আগে জানা দরকার প্রোবায়োটিক কী? আসলে প্রোবায়োটিক হলো আমাদের জন্য উপকারী অণুজীব বন্ধু, যেমন- দই আমাদের পেটের জন্য উপকারী বন্ধু। আসলে এটা কিন্ত বিলিয়ন বিলিয়ন ল্যাক্টোব্যাসিলাস নামক ব্যকটেরিয়ার সাগর। আমাদের এই কৃষিতে এই প্রোবায়োটিক তথা উপকারী বন্ধুদের ব্যবহার যত বাড়বে আমাদের খামার ও কৃষক তত লাভবান হবে।

গরুর খামারে ইস্টের ব্যবহার যদিও শুরু রুটি বানানোর বেকারী ইস্ট দিয়ে। কিন্ত রুটির এই ইস্ট আগেই ঘুম থেকে উঠে দ্রুত কাজ সেরে আবার বিশ্রামে যেতে চায় দ্রুত। অনেকটা অলস ও ফাকিবাজ। তার মাঝে উনাকে  ঘুম থেকে তুলতে চাই আরামদায়ক গরম পানি আর মিস্টি মিঠাই মানে চিনি। এসব ছাড়া উনাকে সরাসরি গরুর পেটে চালান করলে উনি আবার রেগে মেগে গরুর পেট ফুলিয়ে ঢোল করবেন।

কিন্তু বিজ্ঞানের আশীর্বাদ যখন আছে তখন চিন্তা কি? বিজ্ঞান গবেষণা করে গরুর পেটের ভেতরের বিশাল ট্যাংক এর জন্য  তৈরি করেছে রুমেন ইস্ট, যে সদা জাগ্রত (লাইভ) ও নিবেদিত (এক্টিভ)। কোন আরাম আয়েশ আর মিঠা ছাড়াই কাজ করে। কেতাবীভাবে উনিও স্যকারোমাইসিস সেরিভেসি কিন্ত জীবন্ত বা লাইভ।

বিজ্ঞান কিন্ত বসে নেই। এই সদা জাগ্রত বাহিনী পদাতিক হিসেবে কাজ করলে লাগে প্রতি ডিভিশন এ ১০০ গ্রাম, মানে প্রতি ১০০ কেজি খাবারের সাথে ১০০ গ্রাম লাগে, আর আগের যেই সমর বাহিনী ছিলো মানে বেকারি ইস্ট তারা লাগে ১০০ কেজিতে ৪০০ গ্রাম, আধুনিক যুগে এর সৈন্য সামন্ত নিয়ে কি আর যুদ্ধ জেতা যায় এখন স্যাটেলাইট আর মিসাইল এর যুগ।

বিজ্ঞান তাই এই নিরীহ স্যাকারোমাইসিস সেরিভেসিকে আধুনিক যুদ্ধ সাজে সজ্জিত করে পড়িয়ে দিন টাইটানিয়াম এর কোট। এখন আর ভয় কি যুদ্ধে এক ডিভিশনে মাত্র ১০ গ্রাম যথেষ্ট। মানে ১০০ কেজিতে ১০ গ্রাম লাইভ ইস্ট দিলেই সে তার সাংগপাংগ নিয়ে রুমেন এর পরিবেশ চমৎকার রাখার জন্য বদ্ধপরিকর।

এখন এই যে এত ক্ষণ এত কথা বললাম, তার মূল উদ্দেশ্য হলো- গরু পালনে খরচ কমানো আর খাবারের হজম বাড়ানো। মানে, আবার সেই যুদ্ধ। এই যুদ্ধে সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করলে যুদ্ধ ব্যয় বেড়ে প্রতিরক্ষা খাত-ই দুর্বল হয়ে যাবে। কারণ, বেকারি ইস্ট কে নিয়ে  ময়দানে গেলে যুদ্ধের খরচ প্রায় ১২০ টাকা, লাইভ ইস্ট কে নিলে ১০০ টাকা আর আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত টাইটান সহ যুদ্ধে গেলে খরচ মাত্র ৩০ টাকা। সেই সাথে আলাদা করে চিনি পানির রসদ ও লাগেনা আবার সরাসরি ময়দানে নেমেই বীর বেশে যুদ্ধ করে রুমেন এর পরিবেশ রাখে শতভাগ ঠিক।

এখন এই ২১ শতাব্দীতে এসে আপনিই বাছাই করেন আধুনিক কলা কৌশলে কুশলী হবেন,  নাকি যুগের ও অধিক যুগ আগের প্রযুক্তি নিয়ে অন্ধকার এ পড়ে থাকবেন।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঐতিহ্য এগ্রো ফুড।

This post has already been read 9388 times!

Check Also

প্রাণিসম্পদখাতে আরো বেশি প্রণোদনার কথা ভাবছে সরকার -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, প্রাণিসম্পদখাতে আরো বেশি করে কিভাবে প্রণোদনা …