Monday , June 16 2025

সুপারি ঝরে পড়া রোধে করণীয়

কৃষিবিদ এমএ মজিদ : দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পান, চুন ও মসলার সাথে চিবানোর জন্য সুপারির প্রচলন খুবই প্রাচীন। অর্থকরী ফসল হিসেবে অথবা সৌন্দর্যের জন্য অনেক বাড়ির আশেপাশে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে, বাড়ির প্রবেশ পথে সারি করে সুপারি গাছ লাগানো হয়। সুপারি বাংলাদেশে প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে একটি অন্যতম ফসল। এ দেশে সুপারি চাষ বেশ লাভজনক এবং বছরে ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ করা হয়; যার উৎপাদন প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন। দেশের চাহিদা মিটানোর জন্য প্রতি বছর বিদেশ থেকে সুপারি আমদানি করতে হয়। তাই দেশেই বেশি করে সুপারি চাষ করে স্বনির্ভর হওয়া যায় বা অতিরিক্ত উৎপাদন করতে পারলে বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। প্রতি বছর সুপারি চাষিরা রোগ ও পোকামাকড় দ্বারা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়, নীচে সুপারি ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার দেয়া হল।biggangaach01-small1

সুপারি পচা (Nut rot) রোগ:
ফাইটোফথোরা এরিকি (Phytophthora arecae) নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ সুপারির জন্য খুবই মারাত্মক কারণ এ রোগের প্রকোপ বেশি হলে ফলের উৎপাদন শূণ্যের কোটায় নামতে পারে।

লক্ষণ:
১. প্রাথমিক অবস্থায় কচি ফলে পানি ভেজা দাগ দেখা যায়।
২. আক্রান্ত স্থান সবুজ রং ধারণ করে এবং পরে গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে।
৩. আক্রান্ত স্থানের টিস্যু পচে কালো হয়ে যায়।
৪. পুস্পদণ্ড থেকে ফল ঝরে পড়ে।

প্রতিকার:
ক. আক্রান্ত পুস্পদণ্ডসমূহ সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে তবে।
খ. বাগানে মরা লতাপাতা ধংস করে দিতে হবে।
গ. বাগান সুনিষ্কাশিত রাখতে হবে।
ঘ. সুস্থ গাছ থেকে বীজ ফল সংগ্র করতে হবে।
ঙ. ডায়াথেন এম-৪৫/ রোভরাল/ রিডোমিল ঔষধ ০.২% হারে পানিতে মিশিয়ে দুই সপ্তাহ পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে অথবা বোর্দেমিক্সার (৪ঃ৪ঃ৫০ অনুপাতে) ২% হারে পানিতে মিশিয়ে ১৫-২০ দিন পরপর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

পোকামাকড়
ক্ষুদ্র মাকড় (মাইট)
লাল ও সাদা উভয় ধরণের ক্ষুদ্র মাকড় গাছের পাতার নিচের অংশের রস চুষে খায়। ফলে পাতা ফ্যাকাসে হয়ে যায় (অনেক সময় পাতা জ্বলে যায়)। শুকনো মৌসুমে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে।

প্রতিকার : প্রতি লিটার পানিতে ১.৫-২ মিলি. ক্যালথেন অথবা নিউরোল মিশিয়ে গাছে ২-৩ বার ১০-১৫ দিন পর পর স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।

গোবরে পোকা
এ পোকার কীড়া গাছের শিকড় খেয়ে ফেলে। গাছকে দুর্বল করে। গাছ ছোট হলে মরে যায় এবং বড় হলে ফল ঝরে পড়ে।

প্রতিকার : গাছের গোড়া পরিস্কার রাখতে হবে এবং গাছের গোড়ার মাটির সাথে হেপ্টাক্লোর, ডায়এলড্রিন বা ফুরাডান মিশিয়ে দিতে হবে।

লেখক : পি-এইচ.ডি গবেষক, রাবি এবং প্রভাষক, কৃষি শিক্ষা বিভাগ, নাটোর সিটি কলেজ, নাটোর।

This post has already been read 9527 times!

Check Also

পদ্মার চরে আশা জাগাচ্ছে বিনাচিনাবাদাম-৮

মো. গোলাম আরিফ (পাবনা) : নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে সফলভাবে চাষ করা হয়েছে বাংলাদেশ …