Wednesday 24th of April 2024
Home / মৎস্য / খুলনায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস চাষিদের সরকারি প্রণোদনা প্রদান: রয়েছে না পাওয়ারও অভিযোগ

খুলনায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস চাষিদের সরকারি প্রণোদনা প্রদান: রয়েছে না পাওয়ারও অভিযোগ

Published at এপ্রিল ১৯, ২০২১

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): প্রথম ধাপে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলায় ৬ শত ৬৭ জন মাছ চাষিদের মধ্যে ৮৪ লাখ টাকার সরকারি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর প্রথম ধাপে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের মাছ চাষে উৎসাহ ধরে রাখার লক্ষে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় দিঘলিয়া উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে মোট ৬ শত ৬৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষি শনাক্ত করা হয়। এ সকল ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের মাঝে মোবাইল একাউন্ট এর মাধ্যমে ৮৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়।

সাসটেইনেবল কোষ্টাল এন্ড মেরিন ফিসারিজ প্রজেক্ট এর খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রীর কাছ থেকে জানা যায়, মাছ চাষিদের দুই ভাগে বিভক্ত করে যেমন মৎস চাষি এবং চিংড়ি চাষি এই দু’ বিভক্তির আবার বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রণোদনা দেওয়া হয়। মৎস্য চাষিদের ক্ষেত্রে ২ একর জমির নিচে চাষিদের মাছের খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার টাকা এবং ২ থেকে ৩ একর জমির চাষিদের খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১২ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

চিংড়ি চাষিদের ক্ষেত্রে ২ একরের নিচে জমির খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৩ হাজার টাকা। ২ একরের নিচে চিংড়ি চাষিদের (পিএল) অর্থাৎ গলদা চিংড়ির পোষ্ট লার্ভি সংক্ষেপে পিএল (চিংড়ি পোনা) ক্রয়ের জন্য ১৮ হাজার টাকা। ২ থেকে ৩ একর জমির চিংড়ি চাষিদের খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৮ হাজার টাকা এবং ২ থেকে ৩ একর জমির চিংড়ি চাষিদের পিএল গলদা চিংড়ির পোষ্ট লার্ভি সংক্ষেপে পিএল (মাছের পোণা) ক্রয়ের জন্য ১৮ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে মৎস অধিদপ্তর থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের মোবাইল একাউন্ট এর মাধ্যমে সরকারি প্রণোদনা পৌঁছে গেছে।

সরকারি প্রণোদনা পেয়ে অত্র উপজেলার ৬ ইউনিয়নের এ সব মাছ চাষিরা দারুণ উচ্ছসিত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন মনির মোল্যা। বাড়ি দিঘলিয়া ইউনিয়নের দিঘলিয়া গ্রামে। উচ্চ শিক্ষিত। চাকুরী না পেয়ে পড়াশুনা শেষ করে টিউশনি করতেন। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে পৈত্রিক ২ একর জমির উপর চিংড়ি মাছের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে মৎস চাষ তার পেশায় পরিণত হয়েছে। তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, গত বছর ১ম ধাপে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের কারণে বিদেশে মাছ রপ্তানি বন্ধ থাকার কারণে চরমভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ পর্যন্ত আমার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। তিনি বলেন, অত্র উপজেলায় আমার মতো অধিকাংশ চিংড়ি চাষি করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের কারণে আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছে। সরকারি প্রণোদনার ১৮ হাজার টাকা পেয়ে তিনি দারুন উজ্জীবিত হয়েছেন।

অন্যদিকে সরকারি এই প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষি চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মোঃ খালিদ শেখ প্রবাস ফেরত যুবক। বাড়ি দিঘলিয়া ইউনিয়নের ব্রক্ষগাতী গ্রামে। ২০১৬ সাল থেকে এলাকায় তিনি একজন পেশাদার মৎস চাষি হিসাবে পরিচিত। ব্রক্ষগাতী বিলে তিনি ৬ একর জমির উপর মৎস চাষ করেন। এ পর্যন্ত তার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। ১ম ধাপে করোনাকালীন সময়ে তিনি সঠিক দামে মাছ বিক্রি করতে না পেরে আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছেন বলে তিনি জানান।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, অনেকে সরকারি প্রণোদনার অর্থ পেলেও আমার মতো প্রকৃত মৎস চাষিদের অনেকেই এই প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আমার মতো একই বিলের মৎস চাষি ওলিয়ার। তিনি প্রায় ৬ একর জমিতে মাছ চাষ করেন। মোঃ ইনামুল শেখ তিনিও প্রায় ৫ থেকে একর জমিতে মৎস্য চাষ করেন। এরাও আমার মতো পেশাদার মৎস চাষি। ১ম ধাপে করোনাকালীন সময়ে আমার মতো এরাও আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছেন। আমাদের মতো আরো অনেক পেশাদার মৎস এবং চিংড়ি চাষি রয়েছেন। যাদের নাম ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি এবং সরকারি প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

This post has already been read 2335 times!