Tuesday 19th of March 2024
Home / বিজ্ঞান ও গবেষণা / খুবিতে নতুন বৈশিষ্ট্যের ধানের জাত উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে

খুবিতে নতুন বৈশিষ্ট্যের ধানের জাত উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে

Published at ডিসেম্বর ২, ২০২০

টিস্যুকালচারের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি ধানের জাত উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মনিরুল ইসলাম।

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন গবেষক খুলনাঞ্চলে আমন মৌসুমে চাষকৃত স্থানীয় জাতের তিনটি ধানের টিস্যুকালচারের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি ধানের জাত উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন। নতুন এই উদ্ভাবনতব্য ধানের সারিটি  KUAT – ১৭০১ নামে মুল্যায়িত হচ্ছে। বর্তমানে এ সারিটির ভৌতিক, রাসায়নিক ও মলিকুলার বিশ্লেষণের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী বছর বৃহত্তর খুলনা ও যশোর জেলায় বিভিন্ন জায়গায় মাঠ পর্যায়ে সারিটি মূল্যায়ন করা হবে এবং পরবর্তীতে চূড়ান্তভাবে জাত নির্বাচনের জন্যে আবেদন জানানো হবে।

প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মো. মনিরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে চাষাধীন স্থানীয় জাতগুলো যদি যথাযথ মূল্যায়ন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে তা অচিরেই চাষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ, স্থানীয় ধানের এ জাতগুলো হচ্ছে মূল্যবান জিনের ভান্ডার, যা antibiotic resistant এবং মূল্যবান ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। এ তথ্য এবং সত্য মাথায় রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন স্থানীয় অনুন্নত নানা জাতের ধান সংরক্ষণ, মুল্যায়ন ও উন্নতকরণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ২০১৭ সালে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্লান্ট ব্রিডিং এবং বায়োটেকনোলজি ল্যাবরেটরিতে খুলনা অঞ্চলের তিনটি জাতের ধান (রাণীসেলুট, কাচড়া এবং চিনিআতপ) টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে দেহ কোষে মিউটেশন (সোমাক্লোন) ঘটিয়ে উন্নতজাত তৈরির লক্ষ্যে এই গবেষণা শুরু হয়। এ গবেষণায় বেশকিছু টিস্যুকালচার গাছের ভেতর থেকে রাণী সেলুট জাতের একটি গাছকে সিলেকশন করা হয়, যা মাতৃগাছের চেয়ে অন্তত এক মাস আগে ফলন দেয় এবং এর বীজ মাতৃগাছের বীজের থেকে আকারে অনেক ছোট। নেট হাউজে প্রাথমিক গবেষণায় এ ধানের ফলন মাতৃগাছের তুলনায় বেশি পাওয়া যায়।

২০১৯ সালেও বিগত বছরের ন্যায় ফলন পাওয়া যায়। ঐ বছর গড় ফলন পাওয়া যায় ৩টন/হেক্টর। সোমাক্লোনের ১০০০ বীজের ওজন ২০ গ্রাম যেখানে মাতৃগাছের বীজের ওজন ৩১ গ্রাম। একইভাবে চলতি আমন মৌসুমের ২৯ জুলাই এই ধানের বীজ বপন করা হয়। এ বছরও মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক। রাণী সেলুট ধানের গায়ের রং হালকা সোনালী। কিন্তু এই ধানের বহিরাবরণের রং অনেকটা চিনিআতপ ধানের মতো আকর্ষণীয়। গবেষকরা বলছেন, এর চাল রাণী সেলুটের চেয়ে আকারে অনেকটা ছোট, কিন্তু খেতে সুস্বাদু। এর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হবে স্থানীয় জাতের চেয়ে ফলন বৃদ্ধি এবং প্রায় এক মাস আগে ফসল কর্তনযোগ্য। এই গবেষণা কার্যক্রমের সহযোগী হিসাবে আছেন একই ডিসিপ্লিনের শিক্ষক জয়ন্তী রায় এবং আব্দুল্লাহ আল মামুন। আগামীকাল ৩ ডিসেম্বর এই গবেষণা প্লটের ধানটির নমুনা ফসল কর্তন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান আনুষ্ঠানিকভাবে নমুনা ফসল কর্তন উদ্বোধন করবেন।

This post has already been read 2928 times!