Thursday 28th of March 2024
Home / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য / ভুল পরামর্শে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ পোলট্রি খামারিদের

ভুল পরামর্শে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ পোলট্রি খামারিদের

Published at মে ৫, ২০১৯

এগ্রিনিউজ ২৪.কম ডেস্ক: কিছু ডিলার ও ওষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভুল পরামর্শের কারণে তাঁরা ওষুধের ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সুনামগঞ্জের পোলট্রি খামাারিরা। তাদের অভিযোগ এর ফলে তারা লাভের টাকা ঘরে তুলতে পারছেন না।

গত ৪ মে পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠিত ‘নিরাপদ পোল্ট্রি পালন বিষয়ক কর্মশালায়’ উক্ত অভিযোগ করা হয়। খামারিরা জানান, খামার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মাধ্যমে কিভাবে উৎপাদন খরচ কমানো যায় তা জানতেই তাঁরা বৈরি আবহাওয়া বা ফনীর ঝড় উপেক্ষা করে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন।

সুনামগঞ্জে আয়োজিত কর্মশালা।

কর্মশালায় সুনামগঞ্জের খামারি রোকেয়া বেগম জানান, একেবারে শুরু থেকেই তাঁদেরকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ভিটামিন, প্রোটিন খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। ওষুধ খাওয়ালেই তাঁদের মুরগি ভালো থাকে, না খাওয়ালেই অসুস্থ হয়ে যায়।

অপর এক নারী খামারি জাহেদার অভিযোগ, একদিন বয়সী বাচ্চা দেয়ার সময় ডিলাররা ভালো ও খারাপ বাচ্চা মিশিয়ে দেয়। ফলে বেশি দাম দিয়ে কিনেও আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না তাঁরা। পুরুষ খামারিদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ডিলারদের কাছে তাঁরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাচ্চার প্যাকেট ও ফিডের প্যাকেটের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য মূছে ফেলা হয়। ফলে অধিক মূল্যে ফিড ও বাচ্চা কিনতে বাধ্য হন তাঁরা। সুনামগঞ্জের কর্মশালায় নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদন ও জীবনিরাপত্তা বিষয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান। খামারিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডা. হাবিবুর রহমান ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ইনচার্জ) তপন কান্তি পাল।

অপরদিকে ৫ মে শ্রীমঙ্গলে একই বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. আবুল কাশেম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম সাইফুজ্জামান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিপিআইসিসি’র যোগাযোগ ও মিডিয়া উপদেষ্টা মো. সাজ্জাদ হোসেন এবং কর্মকর্তা আবু বকর।

কর্মশালার সমন্বয়কারি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রুহুল আমিন জানান, উপজেলায় মোট মুরগির সংখ্যা ৪,৪০,৬১৩ টি এবং হাঁসের সংখ্যা ৮৫,৪৪৫ টি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিপিআইসিসি’র যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মোট খামারের সংখ্যা ৯৭টি- এর মধ্যে ৯১টি ব্রয়লার ও ৬ টি লেয়ার খামার রয়েছে। নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা মাত্র ১৪টি যার মধ্যে ১১টি ব্রয়লার এবং ৩টি লেয়ার খামার।

শ্রীমঙ্গলের খামারি মতিউর রহমান বলেন খামারিরা অনেক কষ্টে দিন পার করছে, অনেককেই ভিটামাটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। কৃষকদের যেমন সারে ভর্তুকী দেয়া হয় তেমনি পোল্ট্রি খামারিদের জন্য ফিডে ভর্তুকীর দাবি জানান তিনি। খামারি তুহিন চৌধুরি জানান কৃষকরা ঋণ পেলেও ক্ষুদ্র খামারিরা কোন ঋণ পাচ্ছেন না। পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, মাত্র ২/৩ দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমে যাচ্ছে। এ অস্বাভাবিক উঠানামা বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে, একই সাথে অপপ্রচার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সাধারন সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, একটি বিদেশী কোম্পানীর কারণে স্থানীয় খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা যখন মার্কেটে মুরগি ও বাচ্চা ছাড়ছে তখন বাজারে দরপতন হচ্ছে। ক্ষুদ্র খামারিদের রক্ষার স্বার্থে এ ধরনের বিদেশী কোম্পানীর উপর নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি বাড়ানো দাবি জানান তাঁরা।

কর্মশালা দু’টির উন্মুক্ত আলোচনা থেকে জানা যায়- ভূ-প্রকৃতিগত দিক থেকে সিলেট দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আলাদা হলেও বিগত বছরগুলোর তুলনায় বর্তমানে এ অঞ্চলের খামারিদের উৎপাদন খরচ বেশ খানিকটা বেড়েছে। রোগজীবানুর সংক্রমণের কারণে খামারিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও বাড়ছে। সে প্রেক্ষাপটে জীবনিরাপত্তাই হতে পারে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবজ।

এন্টিবায়োটিকের দায়িত্বশীল ব্যবহার ও ছোট-বড় সব ধরনের খামার, হ্যাচারি ও ফিড মিলগুলো সরকারিভাবে নিবন্ধনের উপর জোর দেন বিপিআইসিসি’র সচিব জনাব দেবাশিস নাগ। তিনি বলেন- মাঠ পর্যায়ে অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিপিআইসিসি’র উপদেষ্টা শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন- পোল্ট্রিতে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ, অ্যাডিটিভসের ব্যবহার একেবারেই কাম্য নয়। তিনি বলেন- খামারিদের সচেতন হতে হবে এবং নিরাপদ পোল্ট্রি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও কর্তব্যরত ভেটেরিনারি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন জনাব শ্যামল কান্তি ঘোষ।

সুনামগঞ্জের কর্মশালায় ৬০ জন এবং শ্রীমঙ্গলের কর্মশালায় ৭০ জন খামারি অংশগ্রহণ করেন।

This post has already been read 2968 times!