Saturday 20th of April 2024
Home / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য / সিসিডিবি বায়োচার প্রজেক্টের ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা প্রশিক্ষণ

সিসিডিবি বায়োচার প্রজেক্টের ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা প্রশিক্ষণ

Published at আগস্ট ৩১, ২০২১

সিসিডিবি বায়োচার প্রজেক্টের উদ্যোগে মান্দা উপজেলায় সিসিডিবি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। বায়োচার ও বায়োচার এনরিচ অর্গানিক ফার্টিলাইজার বাণিজ্যিকীকরণের জন্য মোহনপুর, মহাদেবপুর, নিয়ামতপুর, তানোর এবং মান্দা উপজেলার ডিলারদেরকে (সার, বীজ ও কীটনাশক বিক্রেতা) প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থা আইসিসিও এবং কার্ক ইন এক্টাই এর আর্থিক সহায়তায় মঙ্গলবার (৩১ আগষ্ট১) সিসিডিবি প্রসাদপুর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণটি অনুষ্ঠিত হয়। সিসিডিবি বায়োচার প্রকল্পের সমন্বয়কারী সমীরণ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রশিক্ষণের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবু বাক্কার সিদ্দিক।

বিশেষ অতিথি ছিলেন মান্দা উপজেলার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম এবং সিসিডিবি মাইক্রো ফাইনান্স প্রোগামের এরিয়া কো- অর্ডিনেটর রনজিত কুমার সাহা ও সিসিডিবি সিপিআরপি প্রোগ্রামের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো: কাওসার আল মামুন এবং প্রশিক্ষক হালিমা খানম।

এ ছাড়া বায়োচার প্রকল্পের কেন্দ্রিয় অফিসের টেকনিক্যাল অফিসার মি: কৃষ্ণ কুমার সিংহ এবং মনিটরিং অফিসার এ্যাডলিনা রিচেল বৈদ্য। উপস্থিত ছিলেন মান্দা উপজেলার কর্ম এলাকার বায়োচার প্রকল্পের মার্কেটিং অফিসার মি: নির্মল টুডু, মার্কেট এ্যাসিসটেন্ট মি: স্টিফান হেমব্রম ও কিচেন ফ্যাসিলিটেটর কৃষ্ণা রানী।

উক্ত দিনে বায়োচার প্রজেক্টের কো- অর্ডিনেটর মহোদয় সমীরণ বিশ্বাস প্রশিক্ষণেরর উদ্দেশ্য, বায়োচার ও বায়োচার এনরিচ অর্গানিক ফার্টিলাইজার (কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার) মার্কেট এ্যাসেসমেন্ট ও মার্কেটিং পদ্ধতি, সম্ভাব্য ব্যবসায়ের নিয়মাবলী এবং ব্যবসায় পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

উল্লেখ্য, বায়োচার এক ধরনের কয়লা যার মধ্যে ৩৫%-৫৫% কার্বন থাকে। এই কয়লা সিসিডিবি উদ্ভাবিত এক ধরনের বিশেষ চুলায় (‘‘কৃষি বন্ধু চুলা”) ৩০০-৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় স্বল্প অক্সিজেনের উপস্থিতিতে এবং পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে বায়োমাস পুড়িয়ে (বায়োচার) তৈরী করা হয়। কৃষিবিদরা বলছেন, বায়োচার একবার জমিতে দিলে তা শত শত বছর পর্যন্ত মাটিতে উপস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম, ফলে বাড়ে মাটির উর্বরতা। তাই রান্নার পাশাপাশি জমির গুনাগুন ধরে রাখতে বায়োচার ব্যবহারের আহ্বান জানালেন কৃষি কর্মকর্তাগণ।

‘‘বায়োচার ইনরিচ অর্গানিক ফার্টিলাইজার” বা ‘‘কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার” এ সার মাটির খরা, অম্লত্ব ও লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রন করে মটির স্থায়ী স্বাস্থ্যরক্ষা করে এবং মাটিতে অবস্থিত বিষাক্ত আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, সীসা ইত্যাদি ফসলে ঢুকতে বা আসতে দেয় না। ফলে ফসলের উৎপাদন ও গুণগত মান বাড়িয়ে কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ সার মাটিতে বসবাসকারী অনুজীবের সংখ্যা শত শত গুন বাড়িয়ে দেয় এবং মাটির পানি ধারন ক্ষমতা ৫ গুন বৃদ্ধি করে। এটি রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমায় ৩০%-৪০%, যার ফলে উৎপাদন করচ কমে আসে। ‘‘কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার” ব্যবহারে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন সহজতর হয়।

বায়োচার ও কেঁচো সারের সংমিশ্রনে তৈরী হয় ‘‘বায়োচার ইনরিচ অর্গানিক ফার্টিলাইজার” বা ‘‘কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার” যার ফর্মূলেশন করে দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা উন্নয়ন ইনিস্টিটিউট (বারী)। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা উন্নয়ন ইনিস্টিটিউট থেকে ফর্মূলেশনকৃত ‘‘বায়োচার ইনরিচ অর্গানিক ফার্টিলাইজার” বা ‘‘কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার” বাণিজ্যিকীকরন ও দেশব্যাপি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কাউন্সিলে (বার্ক) আবেদন করা হয়েছে যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এবং অতি শীগ্রই অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনুমোদন পাওয়া মাত্র তা ব্র্যান্ডিং ও প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে বাজারে আসবে। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ‘‘বায়োচার ইনরিচ অর্গানিক ফার্টিলাইজার” বা ‘‘কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার” এর গবেষনা বিষয়ে চুক্তি করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিভিন্ন ফসলের উপর ‘‘বায়োচার ইনরিচ অর্গানিক ফার্টিলাইজার” ব্যবহার করে গবেষনা করছেন। বায়োচার প্রকল্পের মাঠ পর্যায়েও বিভিন্ন ফসলেরর উপর ‘‘কার্বন সমৃদ্ধ  জৈব সার” এর গবেষনা চলমান রয়েছে।

‘‘কৃষি বন্ধু চুলা”য় কাঠ বা গোবর ও বিভিন্ন ধরনের বায়োমাস বা কৃষি অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে বায়োচার পাওয়া যায় যা কার্বন সমৃদ্ধ। এই কার্বন সমৃদ্ধ বায়োচার জমিতে ব্যবহারে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং খরা প্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চাষাবাদ করা যায়। বায়োচার জমিতে ভারী ও বিষাক্ত ধাতুকে (হেভী মেটালকে) নিস্ক্রিয় করে রাখে ফলে উদ্ভিদের শিকড়ের সাহায্যে তা ফসল পর্যন্ত পৌঁছায় না ফলে পাওয়া যায় নিরাপদ ও বিষাক্ত ধাতু মুক্ত ফসল। এই চুলায় ৩৫-৪০% জ্বালানি কম লাগে তাই বনজ সম্পদ রক্ষা পায় ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে, খাদ্য নিরাপত্তায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মত প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট কমর্র্কতাগণ।

দক্ষ প্রশিক্ষক বায়োচার প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর এর নিকট হইতে প্রশিক্ষণ গ্রহনের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণটিতে অংশগ্রহনকারী ডিলার/খুচরা বিক্রেতাগণ বায়োচার এবং কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার, সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। এই প্রশিক্ষণের ডিলার/খুচরা বিক্রেতাগণের মাধ্যমে কৃষকগণ আর্থিকভাবে লাভবান হবেন এবং তাদের পারিবারিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পাবে।

This post has already been read 1813 times!