Friday 19th of April 2024
Home / প্রাণিসম্পদ / সাইলেজ গল্প এবং তৈরির আদ্যোপান্ত

সাইলেজ গল্প এবং তৈরির আদ্যোপান্ত

Published at ডিসেম্বর ২৬, ২০২০

নাহিনূর রহমান: সাইলেজ হল এক ধরনের প্রাকৃতিক আচার যা রুমেন যুক্ত প্রানিদের জন্য গাজন প্রক্রিয়াতে শর্করা ভেঙ্গে লাকটিক এসিড তৈরি করে। সাইলেজ করার আগে ৪টি প্রধান বিষয় ঠিক করুন। এই ৪টি বিষয়ের সাপেক্ষে -১০টি কার্যধাপ ঠিক করবে আপনার সাইলেজ এর সাফল্য।

১. পরিকল্পনা

ক. কেন করবেন?

খ. সবসময় উচ্চ মান সম্পন্ন সাইলেজ করার টার্গেট করুন

গ. খরচ যথা সম্ভব কম হতে হবে

২. প্রস্তুতকরণ

ক. উচ্চ মান সম্পন্ন ফরেজ দিয়ে শুরু করুন

খ. সঠিক বয়সে কাটুন

গ. যত দ্রুত সম্ভব পাতা কে প্রক্রিয়া জাত করুন

ঘ. সংগ্রহ ও সংরক্ষণ দুই ক্ষেত্রেই লস মিনিমাম রাখুন

৩. খাবার প্রদান

ক. খাবার প্রদান সময় এ সবচেয়ে বেশি খাবার গ্রহনের ব্যবস্থা করুন

খ. খাবার অপচয় কম করার চেষ্টা করুন

৪. মূল্যায়ন

ক.সমগ্র পরিকল্পনা দেখুন ও বের করুন এটাকে কি করে আর লাভজনক করা যায়।

সাইলেজ উৎপাদন এ মুলত দুই প্রকারের fermentation বা গাজন  করা হয়।

১. হোমোফারমেনটিভ; ও ২. হেটেরোফারমেনটিভ

হোমোফারমেনটিভ: এই প্রক্রিয়াতে শর্করা ভেঙ্গে ২ অনু লাকটিক এসিড তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়া তে শক্তি খরচ হয় কম ও ড্রাই ম্যাটার থাকে বেশি।এই প্রক্রিয়া তে পিএইচ কমে খুব দ্রুত।

হেটেরোফারমেনটিভ: এই প্রক্রিয়াতে শর্করা ভেঙ্গে এক অণু লাকটিক এসিড, এক অণু এসিটিক এসিড, এক অণু এলকোহল ও এক অণু কার্বনডাইঅক্সাইড তৈরি হয়।এই প্রক্রিয়াতে শক্তি খরচ হয় বেশি ও ড্রাই ম্যাটার এর পরিমান কম থাকে।এই প্রক্রিয়াতে বাতাসের সামান্য ব্যাবহার থাকে।

সাইলেজ তৈরিতে অণুজীব এর ভূমিকা

– সাইলেজ তৈরিতে প্রাকৃতিক কিছু ব্যাকটেরিয়া ভূমিকা রাখে, তবে কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া ব্যাবহারে এই প্রক্রিয়াকে আর বেশি পরিমানে নিয়ন্ত্রিত করা যায়।

– বিশেষ ব্যাকটেরিয়া ব্যাবহারের জন্য প্রতি টন সাইলেজ এর জন্য ৯০ বিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া প্রয়োজন হয়।এক্ষেত্রে বিশেষ প্রকার দ্রবণে ব্যাকটেরিয়া কে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।

সাইলেজ তৈরিতে কিছু ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হয়

– বায়ুরোধীকরণ;

– কাটার ৩-৪ ঘণ্টার মাঝে প্যাকিং করা;

– ডার্ট এর উপস্থিতি কমিয়ে রাখা;

– তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ;

– সঠিক ভাবে গাজন;

– অন-অনুমোদিত ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ

– ৪৫% -৭০% আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ;

– Mold ও  yeast  নিয়ন্ত্রণ;

সাইলেজ তৈরিতে বাতাস নিয়ন্ত্রণ একটা বড় ব্যাপার।বাতাসে কিছু ক্ষতি হতে পারে:

– কিছু কমপ্লেক্স মলিকুল তৈরি হয়, যা হজম হবেনা।

– হজম প্রক্রিয়া ও সাইলেজ এর মান কমে যায়

– পিএইচ বেড়ে কিছু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় যা তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে ও Mold ও  yeast  এর বিস্তার বাড়ায় যা সাইলেজকে নষ্ট করে।

– কর্ণ সাইলেজ এ বাতাসের এর প্রভাবে এসিটিক এসিড ও বিউতারিক এসিড তৈরি করে।

হে সাইলেজ এর মাঝে কিছু পার্থক্য আছে,

  • হে তৈরিতে ড্রাই ম্যাটার এর পরিমান ৩০% পর্যন্ত কমে যায়, সাইলেজ এ এটা ১০% পর্যন্ত হতে পারে।একটা ভালো সাইলেজ এ ড্রাই ম্যাটার থাকবে ৩০-৩৫%।
  • সাইলেজ এ নাইট্রাস এর পরিমান দ্রুত কমে, এবং পুষ্টিমান অনেক বেশি থাকে, ভিটামিন এ থাকে বেশি।
  • সাইলেজ তৈরির সমস্যা হল, এতে ভিটামিন ডি কম থাকে, বেশি সময় ধরে বাইরে রাখা যায়না, বড় আকারে বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব না।

সাইলেজ তৈরির জন্য কর্ণ কখন কাটবো

  • আনুভুমিক সাইলেয করতে চাইলে কর্ণ এ ৬৫-৭০% আদ্রতা থাকতে হবে
  • টাওয়ার সাইলেজ করতে হলে ৬৩-৬৮% আদ্রতা থাকতে হবে।
  • এরবিক সাইলেজ করতে হলে ৫৫-৬০% আদ্রতা থাকতে হবে।
  • ব্যাগ সাইলেজ করতে হলে ৬৮% আদ্রতা থাকতে হবে।

কর্ণ পরিপক্কতা            আর্দ্রতা

প্রাথমিক সময়           ৭৩%

১/২ মিল্ক                   ৬৬%

৩/৪ মিল্ক                   ৬৩%

নো মিল্ক                     ৬০%

সাইলেজ এর জন্য আর্দ্রতা কেন খুব গুরুত্বপূর্ণ?

  • কর্ণ খুব বেশি ভেজা হলে গাজন ভালো হবেনা, সাইলেজ তার পুষ্টি হারাবে।
  • অনেক আদ্রতা নিয়ে কর্ণ কাটা হলে তা দ্রুত গাঁজন হবে ও সাইলেজ হবেনা।
  • খুব বেশি শুকনা হলে সাইলেজ এ Mold ও yeast  এর পরিমান বেশি হবে এবং এটা খুব ভালো কিছু হবেনা।
  • কোনভাবে বাতাস এর প্রবাহ থাকলে এরবিক সময়কাল বেশি হবে এবং লাকটিক এসিড সময়মতো তৈরি না হওয়াতে সাইলেজ মান নষ্ট হবে।
  • আপনি চাইলে সমন্বিত সাইলেজ তৈরি করতে পারেন, যেখানে আলফা আলফা ও কর্ণ এর সমন্বয় এ ভালমানের সাইলেয করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ৪৫% কর্ণ প্ল্যান্ট, ৩০% আলফা আলফা ও ২৫% কর্ণ দানা কব সহ ব্যাবহার করা জেতে পারে।

সাইলেজ মাটির নিচে না করে কাল ব্যাগে ও করা জেতে পারে, এক্ষেত্রে স্থান কম লাগবে ও সাইলেজ এর অপচয় কম হয়।

কি করে বুঝবেন আপনার সাইলেজ তৈরি হয়েছে?

এ ক্ষেত্রে আপনাকে তিনটি বিষয় মাথয় রাখতে হবে- ১. গঠন, ২. রঙ,  ৩. ঘ্রান।

গঠন

  • সতেজ ও নরম : উচ্চ ME ও CP
  • সতেজ,নরম ও প্রচুর আশঃ উচ্চ ME ও CP
  • সেদ্ধ , আঁশ যুক্ত ও বীজের মুখ আছে এমন: সহজে পাচ্য হবেনা
  • অনেক লিগউম থাকলে: এতে ME ও CP কম হবে ও ফসল দেরিতে কাটা হয়েছে
  • Mold and rotten: লিগিউম বেশি ও CP বেশি
  • খুব ভেজা: অনেক বাতাস এর স্পর্শে এসেছে, ড্রাই ম্যাটার কমে গেছে ও CP বেশি হবে।
  • খুব শুকনা : অতিরিক্ত DM সহ সিল করা হয়েছে, ভালো ভাবে গাঁজন হইনাই, অতিরিক্ত তাপ, আমিষ ভেঙ্গে যাবে

রঙ

  • কড়া জল্পাই সবুজঃ পাতা নষ্ট হয়ে গেছে, টক সাদ হবে, ঘাসে অনেক ইউরিয়া ছিল
  • কড়া জলপাই বাদামি ও সবুজ : এমন হলে সাইলেজ ঠিক আছে
  • হালকা সবুজ : ঘাস দেরিতে কাটা হইসে, ড্রাই ম্যাটার কম, নিচে ভেজা ও হলুদ ঘাস থাকবে
  • হাল্কা এম্বার রংঃঅনেক তাপ ছিল, বাতাস লেগেছে, আমিষ ভেঙ্গে গেছে
  • বাদামী : অনেক তাপমাত্রা, কিছুটা কালচে ভাব ও হজমে সমস্যা হবে।
  • গাড় বাদামী : মুখ বন্ধ হতে দেরি হয়েছে, বাতাস বের হয়ই নাই, Mold রয়ে গেছে।

ঘ্রাণ

  • মৃদু/ টক বা অম্ সুঘ্রাণ: ঠিক আছে
  • দুধ বা দই এর ঘ্রাণ: সাইলেয ঠিক মত গাজন হয়নি; কম চিনি ও কম ড্রাই ম্যাটার যুক্ত সাইলেয
  • কম সুঘ্রাণ কিন্ত হালকা মিষ্টি ঘ্রাণ: ইষ্ট ও ইথানল লেভেল বেশী খাওয়াতে গেলে খুব দ্রুত স্বাদ পরিবর্তন হবে।
  • মিষ্টি ফলের গন্ধ বা টক ভিনেগারের ঘ্রাণ:কম গাজন হয়েছে ও এসিটিক এসিড বেশী,কম ড্রাই ম্যাটার।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঐতিহ্য এগ্রো ফুড। আরো বিস্তারিত জানতে: ০১৪০৫-৯৮৬৫৯২

This post has already been read 5728 times!