Thursday 28th of March 2024
Home / মৎস্য / সিন্ডিকেটের কবলে মা বাগদা: সংকটে চিংড়ি শিল্প

সিন্ডিকেটের কবলে মা বাগদা: সংকটে চিংড়ি শিল্প

Published at ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১

প্রতীকি ছবি।

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : সিন্ডিকেট করে পোনা উৎপাদনকারি হ্যাচারীতে মাদার (মা বাগদা) সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করায় গভীর সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি শিল্প। সমুদ্র থেকে মাদার আহরণকারি জাহাজ থেকে গত ১৫ দিন ধরে কক্সবাজারভিত্তিক গড়ে ওঠা হ্যাচারীগুলোতে মাদার সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে প্রয়োজনীয় মাদার না পেয়ে পোনা উৎপাদনে যেতে পারছে না কক্সবাজের অধিকাংশ হ্যচারী। শ্রীম্প হ্যাচারী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সেব) এর গুটি কয়েক নেতা কর্তৃক সিন্ডিকেট করার কারণে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে কক্সবাজারের অধিকাংশ হ্যাচারীতে বাগদা চিংড়ি পোনার উৎপাদন না হওয়ায় সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটসহ আশেপাশের এলাকায় পোনা সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পোনার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। এতে করে মৌসুমের শুরুতেই পোনা সংকটের কারণে চাষিরা তাদের ঘেরে পোনা ছাড়তে পারছেন না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘেরে পোনা ছাড়তে না পারলে মোটা অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে হবে চাষিদের। ব্যাংক লোন নিয়ে যারা চিংড়ি চাষ করেন তারা পড়েছেন মহাবিপাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেব’র একজন সদস্য জানান, গত ১৫ দিন ধরে হ্যাচরীতে মাদার সাপ্লাই বন্ধ রয়েছে। যে কারণে অধিকাংশ হ্যাচারী পোনা উৎপাদনে যেতে পারছে না। মাদার সাপ্লাইকারি জাহাজ ব্যবসায়ী, মাদার বহনকারি কার্গো এসোসিয়েশন ও ফিড ব্যবসায়ীর সাথে সেব’র উর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজসে সিন্ডিকেট করে পুরো ব্যবসাটা নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করছে। তারা কোটা করে প্রতিটি মাদারে ২০ হাজার টাকা কমিশন নেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে হ্যাচারীতে মাদার সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। যে কারণে কক্সবাজার ভিত্তিক ৫৬টি হ্যাচারীর মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র ২৩টি।

তিনি আরো বলেন, এভাবে ১৫ দিন মাদার বন্ধ থাকলে চাষিরা আগামী এক মাস পোনা পাবে না। ফলে বাজারে পোনা সরবরাহ না হলে ঘের মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গুটি কয়েক সেব কর্মকর্তার নিজের পকেট ভর্তির জন্য চিংড়ি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটি রুজি নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে।

সাতক্ষীরার চিংড়ি ঘের মালিক খায়রুল মোজাফ্ফর মন্টু বলেন, বাজারে পোনা সরবরাহ কম হলে দাম বেড়ে যায়। গত বছর এক হাজার টাকায় পোনা কিনতে হয়েছিল। এমনিতে মড়কের কারণে আমরা চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত, এরপর সেব নিজেদের স্বার্থে এভাবে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে ঘেরে পোনা ছাড়তে না পেরে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবো। সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বাবলা বলেন, বাজারে পোনার সংকট হলে দাম বেড়ে যায়। ফলে চাষিদের ঘেরে পোনা ছাড়তে হিমশিম খেতে হয়। এতে করে চিংড়ির উৎপাদনও কমে যাবে। একই সাথে কমে যাবে রপ্তানি। তিনি বাজারে মানসম্মত পোনা সরবরাহ নিশ্চিত করতে মাদার সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সাতক্ষীরাস্থ দিপা সী ফুডস লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীন বন্ধু মিত্র বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় অংশ আসে চিংড়ি রপ্তানি থেকে। পোনা সংকটের কারণে চিংড়ির উৎপাদন কম হলে রপ্তানিও কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতির উপর। একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হবে চিংড়ি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট লক্ষ লক্ষ মানুষ। মৎস্য অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালক রাজকুমার বিশ্বাস জানান, বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৪৯৬ হেক্টর অয়োতনের জমিতে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৯৪০ টি চিংড়ি ঘের রয়েছে। প্রতি মৌসুমে এসব ঘেরে মোট পোনার চাহিদা রয়েছে ৩৫১ কোটি। সেব যদি কোটার মাধ্যমে বাজারে পোনা সরবারহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে তাহলে এই অঞ্চলে পোনা সংকটের সৃষ্টি হবে। ফলে ঘের পোনা ছাড়তে না পেরে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মাছের উৎপাদনও কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে পুরো চিংড়ি শিল্পের উপর।

শ্রীম্প হ্যাচারী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সেব) এর মহাসচিব নজিবুল ইসলাম গত ১৫ দিন ধরে মাদার (মা বাগদা) সরবরাহ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, হ্যাচারীগুলোতে মাদার ফুলফিল হয়ে গেছে। এখন স্টকিং করার জায়গা নেই। যে কারণে জাহাজগুলো মাদার আহরণ না করে সাদা মাছ আহরণে গেছে। এছাড়া তারা মাদারের দামও একটু বাড়ানোর কথা বলেছে। আমরা বলেছি তোমরা আসো একটা ব্যবস্থা করা যাবে। তবে সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করেন তিনি।

This post has already been read 3131 times!