Friday 29th of March 2024
Home / মৎস্য / মাছ চাষে রসুনের ব্যবহার

মাছ চাষে রসুনের ব্যবহার

Published at মার্চ ১৫, ২০২১

একেএম সালাহ উদ্দিন সরকার তপন : রসুন হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক তৈরি সবথেকে বড় প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক। রসুন একটি সপুষ্পক একবীজপত্রী লিলিশ্রেণীর বহুবর্ষজীবী গুল্ম। বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালিয়াম স্যাটিভাম (Allium sativum)। কাঁচা রসুনে এলিসিন থাকে, যা অসংখ্য রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। অল্প একটু রসুন ব্যবহার করাই অনেক বেশি কার্যকর । রসুনের রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা, হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর রোগ প্রতিরোধক হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে রসুন সব থেকে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে।

আজ আলোচনা করবো রসুন ব্যবহার করে মাছ চাষে আমরা কি কি সুবিধা বা উপকারিতা পেতে পারি যা আমরা অধিকাংশ মাছ চাষীরা বিষয়টি জানি না, নিম্নে মাছ চাষে রসুন ব্যবহারের উপকারিতা সমুহ দেওয়া হলো-

১. মাছের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুঘটিত রোগ প্রতিরোধে রসুন অনন্য, রসুন হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক তৈরি সবথেকে বড় প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক, মাছের দেহে জীবাণু আক্রান্ত হলে প্রতি ১০০ কেজি খাবারে ৫০ গ্রাম রসুন বেটে খাবারের সাথে মিশিয়ে পর পর ৭ দিন খাওয়াতে হবে, বিশেষ ক্ষেত্রে ১১ দিন ও হতে পারে, একটি জিনিস মাথায় রাখা দরকার মাছ চাষে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম।

২. রসুনে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি যার দৌলতে সংক্রমণজনিত অসুখবিসুখ কম হয়, তাই প্রতি ১০০ কেজি মাছের জন্য ১০ গ্রাম রসুন ৩ দিন পর পর খাবারের সাথে প্রয়োগ করলে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।

৩. EUS রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ২কেজি লবন, ২কেজি রসুন, ১০০ গ্রাম কপার সালফেট (তুতে), ৫০ গ্রাম পটাশিয়াম পার মাংগানেট ও  Benxide Plus ( ফরমুলাঃ Alkyldimethylbenzylammonium chloride ও Glutaraldehyde) ২৫০ এমএল সাথে ৪০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আনুমানিক ৩০ শতকের পুকুরে ছিটিয়ে দিলে এই রোগ হতে আরোগ্য লাভ করবে ইন্সাআল্লাহ।

৪. মাছের দেহে যে বিপাকীয় ক্রিয়া ও পরিবেশ দূষণের ফলে যে ফ্রি র‍্যাডিক্যালস তৈরি হয় তা মাছের দেহের জন্য ক্ষতিকর, রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেই ক্ষতি খুব ভাল ভাবে ঠেকাতে পারে।

৫. মাছের খাদ্যের টক্সিসিটি কমাতে রসুন দারুন কাজে লাগে।

৬. রসুন মাছের শরীরের রক্ত পরিষ্কার রাখে।

৭. গ্রোথ প্রমোটার হিসেবে সয়ামিলের সাথে কাচা রসূনের মিশ্রণ অনেক কার্যকর ভুমিকা পালন করে থাকে, প্রতি ১০০ কেজি মাছের জন্য ১০ গ্রাম রসুন ৩ দিন পর পর প্রয়োগ করলে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।

৮. তবে কেমিক্যাল ফরমেশনের কারণে এটা তেলাপিয়ার উপর সবথেকে বড় ভুমিকা পালন করে। তেলাপিয়া অতি দ্রুত সময়ে বৃদ্ধি পায়।

৯. রসুন ব্যবহারে ইস্ট্রোজেন স্তর বেড়ে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো হয়।

১০. বেশি মাছ মাছ ধরতে খুব ভালোবাসেন? বেশি মাছ ধরার জন্য টোপের মাঝে দিয়ে দিন কাঁচা রসুন। লোভে লোভে প্রচুর মাছ উপস্থিত হবে।

১১. অভিজ্ঞজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে রসুন মাছের পেটের কৃমি নাশ করতে সহায়তা করে ।

১২. পোকামাকড়ের হাত থেকে মাছের প্রজেক্টের গাছ রক্ষায় রসুন
দারুণ উপকারী। মিহি থেঁতো করা কাঁচা রসুন, নিম পাতা থেঁতো, কিছু গোমূত্র ও পানি সাবান একসাথে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে রাখুন। এটা কিছুদিন পর পর গাছে স্প্রে করুন পোকামাকড় গাছের কাছে ঘেষতে পারবেনা, দূরে থাকবে।

১৩. রসুনে প্রচুর জিংক ও সেলিনিয়াম থাকায় চিংড়ি ও মাছের রং স্বাভাবিক থাকে।

১৪. রসুন ব্যাকটেরিয়া,প্রোটোজোয়া ও ছত্রাক জনিত রোগে অব্যর্থ ওষুধ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন।

সবশেষে বলব সৃষ্টিকর্তা রসুনের মধ্যে দিয়েছেন মূল্যবান ভেষজগুণ, যার ব্যবহারে মাছ সুস্থ্য সবল থাকবে, বৃদ্ধি তরান্বিত করবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে বেশ কিছু রোগের বিরুদ্ধে দারুন কাজ করবে, মাছ চাষে রসুনের যথাযথ ব্যবহারে কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই এবং মাছ চাষের খরচ কমায় ।

লেখক: সত্ত্বাধিকারী, সরকার এগ্রো ফিশারীজ, ম্যানেজিং পার্টনার, বাড়ানী বায়োটেক ফিস কালচার E-mail: akmsus@gmail.com

This post has already been read 6043 times!